মুক্ত আকাশ পাঠাগার

খুব সম্প্রতি গিয়েছিলাম যশোরের অভয়নগর উপজেলায়। উদ্দেশ্যে ক্রিকেটের ধারাবর্ণনা। স্থানীয় উপজেলা প্রসাশন মাদক এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ব্যাটে বলে জবাব স্লোগানকে সামনে নিয়ে ২৪ দলের অংশগ্রহণে অভয়নগর প্রিমিয়ার লীগ আয়োজন করেছিল। কিন্তু টুর্ণামেন্ট নিয়ে এখানে কথা বলছিনা। এখানে বলবো- স্থানীয় উপজেলা ভুমি অফিসে দেখে আসা একটি গ্রন্থাগারের কথা। নিজে একজন গ্রন্থাগার পেশাজিবী হ্ওয়ায় এই সেক্টরের উপর বাড়তি আগ্রহ থাকেই। দেশের প্রতিটি উপজেলায় ভুমি অফিস আমরা যেভাবে দেখে অভ্যস্ত এটা সেখান থেকে একেবারেই আলাদা।

এখানে আধুনিকতা এবং প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে গেছে সেবার মান। দর্শনার্থি সকলেই একবাক্যে অভিভুত হচ্ছেন এখানকার সব আয়োজন দেখে। ভুমি অফিসের সামনে পরিত্যক্ত এক টুকরো উঠানকে এত সুন্দর পরিকল্পনায় সাজানো যায় কিভাবে। সৃজনশীল এবং উদ্দোমী মানষিকতা থাকলে বুঝি সবই সম্ভব। এই সৃজনশীল মানুষটি হলেন সহকারী কমিশনার (ভুমি) এবং ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনদিপ ঘরাই। তাঁর সুন্দর চিন্তা, কর্মে বদলে গেছে এবং বদলে যাচ্ছে অভয়নগরের সামগ্রীক পরিবেশ।

সামসুল ইসলাম
* লেখকঃ সামসুল ইসলাম, মুখ্য গ্রন্থাগারিক, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন এবং ক্রীড়া ভাষ্যকার, বেতার ও টেলিভিশন।
Post MIddle

উঠানে ‘স্বাধীনতা অঙ্গন’ নামে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছোট একটি প্রদর্শনী চত্তর গড়ে তুলেছেন। সেখানকার এককোনে রেখেছেন ‘মুক্ত পাতা’ নামে দেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক মুক্ত আকাশ পাঠাগার। আহ কি দারুন আইডিয়া! খোলা আকাশের নিচে সব বয়সি সকল শিশু, নারী-পুরুষের পড়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বেশকিছু বই লেমিনেশন করে রাখা আছে খোলা আকাশের নিচে। সারা দিন-রাত এমনকি দিনের পর দিন এই বইগুলো এভাবেই পড়ে থাকছে সেই মুক্ত আকাশ গ্রন্থাগারে। সাত বীরশ্রেষ্ঠের স্মরণে আছে সাতটি রিডিং টেবিল, প্রতিটি টেবিলের সাথে আছে চারটি করে বসার টুল- এগুলো সবই কংক্রিটের তৈরী।

সদালাপী জনাব মনদিপ ঘরাইয়ের কাছে জানতে চাইলে উনি বলেন, জার্মানীর বার্লিনের হামবোল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে এজাতীয় মুক্ত আকাশ পাঠাগার আছে। সেখান থেকেই এই ধারণাটা উনি নিয়েছেন। তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধ ও এর সঠিক ইতিহাস জানতে এবং জানাতে এই মুক্ত আকাশ গ্রন্থাগারটি সকলকে উদ্বুদ্ধ করবে। আমরা এই গ্রন্থাগারটির সাফল্য কামনা করছি ।

একই সাথে প্রত্যাশা করছি এই অভিনব আইডিয়াটাকে কাজে লাগিয়ে সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তা, সরকার এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলি এগিয়ে আসলে এই প্রজন্মের গ্রন্থাগার বিমুখ পাঠকরা আবারো বই পড়ায় অভ্যস্ত হয়ে উঠবে। আর এভাবেই আমরা সামাজিক অবক্ষয়ের হাত থেকে রুখতে পারবো আমাদের প্রজন্মকে।

পছন্দের আরো পোস্ট