বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোচনা সভা

নিজস্ব প্রতিবেদক।

‘শিক্ষা-সংস্কৃতির বাঁধনে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক চিরকালীন। দুই বাংলার সংস্কৃতি আরও দৃঢ় ও অঁটুট হবে। পরস্পর অগ্রগতির জন্য হাত ধরাধরি করে যেতে হবে। শিক্ষাখাতের প্রতিটি বিষয়ে বাংলাদেশ-ভারত যৌথভাবে কাজ করে নতুন প্রজন্মকে সমৃদ্ধ করতে পারে। বাংলাদেশের বিজয়ের যে বীরত্বগাঁথা সেটিও চিরঅম্লান হয়ে থাকবে কোটি বাঙালির হৃদয়ে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত মহান বিজয় দিবস ও স্বাধীনতার ৫০ বছর উপলক্ষে ‘বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্র-সৃষ্টি বিপ্লব: স্বাধীনতার ৫০ বছরে অগ্রগতি ও প্রতিবন্ধকতা’ শীর্ষক আলোচনা এবং ‘বাংলাদেশ: সংগ্রাম, সিদ্ধি, মুক্তি’ শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের বিশিষ্টজনরা এসব কথা বলেন। শনিবার (১৮ডিসেম্বর) রাজধানীর বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে আয়োজিত সভায় অংশ নিতে ভারত থেকে আসেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও গবেষকবৃন্দ।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি বলেছেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যে শিক্ষা দর্শন, শিক্ষা ভাবনা সেটির ওপর ভিত্তি করেই বঙ্গবন্ধু কন্যার দিক নির্দেশনায় সামনে এগিয়ে যেতে চাই। অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়বার জন্য, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়বার জন্য সোনার মানুষ দরকার। সেই সোনার মানুষ গড়ার হাতিয়ার হচ্ছে শিক্ষা। শিক্ষার্থীরা যাতে বিজ্ঞানমনস্ক, আধুনিক, দক্ষ ও যোগ্য মানবিক মানুষ হিসেবে তৈরি হয় পরমতসহিষ্ণু ও আত্মমর্যাদাবান মানুষ হয় সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যকে হত্যা করা হয়েছিল। এই দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নে সূত্রপাত করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তাঁর উত্তরাধিকার বঙ্গবন্ধু কন্যা এটিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

একারণে আজকে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃত। আমরা ভাগ্যবান এ দিক থেকে যে, পৃথিবীতে ফাইভ-জি এর সূচনা হয়েছে ২০১৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি। বাংলাদেশ মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে ফাইভ-জি এর যুগে যাবে এটা হয়তো উন্নত দেশের কেউ চিন্তাভাবনা করেনি। করোনার মধ্যে ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকের ডিজিটাল প্রযুক্তি কাকে বলে তা ভালোভাবে অনুভব করেছে। এ সময়ে আমাদের জীবন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে কিন্তু পিছিয়ে পড়েনি।’

সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘আমাদের বাংলাদেশের ৫০ বছরের যে অগ্রগতি তার প্রতিবন্ধকতাও আমরা চিহ্নিত করতে চাই। চিহ্নিত করে আমাদের আগামীর যে যাত্রা- যেখানে আগামী ৫০ বছরে, শতবর্ষে বাংলাদেশ এক ভিন্ন ও মানবিক বাংলাদেশ হবে। পাশাপাশি আমাদের শিক্ষার্থীরা যাতে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয় সে আহ্বান আমরা সবসময় রাখতে চাই।’

Post MIddle

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে উপাচার্য বলেন, ‘তোমরা দিনভর কর্মক্লান্ত হয়ে শেষ বেলায় পরম তৃপ্তির সন্ধানে মায়ের কাছে যাও। কারণ সবকিছুর চেয়ে ওই মায়ের কোলটিই সবচেয়ে বেশি পবিত্র ও আনন্দের জায়গা। এই যে তৃষ্ণা, সেই জায়গা থেকে যদি আমি ভাবি-সন্তানের এই তৃষ্ণা মায়ের প্রতি যেমন থাকে, বন্ধুর প্রতি থাকে ভালোবাসার টান এগুলো যদি পূরণ হয় তাহলে একটা পূর্ণতা পায়, তৃপ্তি পায়। তোমরা কী কখনো ভেবেছো-এই দেশমাতৃকায় আমি আমার শ্বাস-প্রশ্বাস নেই।

হাজার বছরের বঞ্চনার ধারাবাহিকতায় যেই দেশমাতৃকা সৃষ্টি হয়েছিল ৫০ বছর পূর্বে। সেই দেশের একটা তৃষ্ণা আছে, সেও ভালোবাসা চায়। সে কোন ভালোবাসা চায়? আমরা যখন আমাদের প্রিয় মাতৃভাষাকে কোথায়ও অসুন্দরভাবে উপস্থাপন করি, যখন শুদ্ধভাবে বাংলা ভাষা উচ্চারণ করতে পারি না। তখন দেশমাতৃকা কষ্ট পায়।’

উপাচার্য আরও বলেন, ‘আমরা যখন অনিয়ম-দুর্নীতিতে আচ্ছাদিত হই তখন প্রিয় স্বদেশ মুখ থুবড়ে পড়ে। তোমরা যেটাকে ভালোবাসা বা মোহ হিসেবে দেখো, দেশমাতৃকার মোহ তার নাগরিকের প্রতি। সেটি যখন অযতেœ থাকে, মনে রেখো দেশ তোমার প্রতি বিমুখ হলে, প্রকৃতি তোমার প্রতি বিমুখ হলে- তুমি আরও বেশি মুখ থুবড়ে পড়বে। যেখান থেকে আমরা কেউ উঠতে পারবো না। মুখ থুবড়ে পড়লে দেশ জঙ্গিদের হাতে যায়। পুজোর দিনে আঘাত হানার প্রয়াস তৈরি হয়।

এর প্রতিটি জায়গায় আমাদের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শুদ্ধতার প্রতীক হতে হবে। সুরক্ষার অতন্দ্র প্রহরী হতে হবে। দেশ ভালো থাকলে মা-মাটি ভালো থাকবে। তোমরা প্রযুক্তির বাঁধন খুঁজবে। তোমরা যারা আগামীর প্রজন্ম তারা যেন বলতে পারো আমার দেশ ধনবান নয়, তবে মানবিক, আদর্শিক ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় গড়া আত্মমর্যাদাবান দেশ।’

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক আবদুস সালাম হাওলাদার, সংসদ সদস্য আরমা দত্ত, ভারতের বাংলা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড এর আহ্বায়ক শ্রী সম্যব্রত দাস, পশ্চিমবঙ্গের মৌলানা আবুল কালাম আজাদ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সৈকত মিত্র,ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অশোক রঞ্জন ঠাকুর প্রমুখ বক্তব্য দেন। আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক পবিত্র সরকার।

এদিকে আজ রবিবার (১৯ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে বাংলা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড এর সঙ্গে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বৈঠক হয়। বৈঠকে শিক্ষা, গবেষণা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে যৌথভাবে কাজ করার বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়।

এতে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে পারস্পারিক যোগাযোগ বৃদ্ধি ও আন্ত:সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে শিক্ষাখাতে জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত সমৃদ্ধি অর্জনের বিষয়ে গভীরভাবে আলোকপাত করা হয়। এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের

পছন্দের আরো পোস্ট