বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির দ্বিতীয় সমাবর্তন

আজ (২৭ ডিসেম্বর) বুধবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির (বিইউ) দ্বিতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট এর প্রতিনিধি হিসেবে সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করেন মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী জনাব নুরুল ইসলাম নাহিদ।বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক।

সমাবর্তন বক্তা ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত এবং প্রফেসর অ্যামিরিটাস, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রফেসর ড. আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজউদ্দিন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিইউ’র ভিসি প্রফেসর ড. আনোয়ারুল হক শরীফ। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের ইঞ্জিনিয়ার এম এ গোলাম দস্তগীর।

অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার মান নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, প্রযুক্তি নির্ভর ডিজিটাল এ বিশ্ববিদ্যালয় হবে ভবিষ্যতে সকল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য মডেল। শুধু উচ্চশিক্ষা নয় এ বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণায়ও অসামান্য অবদান রাখছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ মানব সম্পদ তৈরি করছে।

Convocationশিক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, আমরা সরকারি বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকারী ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে কোন পার্থক্য করি না। তারা সকলেই আমাদের সন্তান এবং জাতির ভবিষ্যৎ। তাদের সকলের জন্যই আমরা মানসম্মত শিক্ষা এবং সুযোগ নিশ্চিত করতে চাই। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে যারা ভাল করছেন, দেশের জন্য কাজ করছেন, তারা অবশ্যই অনুকরণীয় হবেন এবং সরকার তাদের সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাবে। শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ। যা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি বাস্তবায়ন করছে। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে দেশকে গড়েতে হবে।

তিনি আরো বলেন, আমরা মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে চাই। কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে যারা এখনো তাদের ন্যূনতম শর্ত পূরণ করতে পারেনি। এভাবে তারা বেশি দিন চলতে পারবে না। যারা মুনাফার লক্ষ্য নিয়ে চলতে চান, নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাননি, একাধিক ক্যাম্পাস পরিচালনা করছেন তাদের অব্যাহত চাপে রেখেও সঠিক পথে আনা কঠিন হয়ে পড়েছে। এজন্য তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া আর কোন পথ খোলা নেই।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, এমপি উচ্চশিক্ষা ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন যুগান্তকারী পদক্ষেপ এর উল্লেখ করে বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ আর স্বপ্ন নয় বাস্তব, যার প্রমাণ আজকে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির সমাবর্তন। শিক্ষার্থীরা ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করবে, তোমাদের দিকে জাতি তাকিয়ে রয়েছে। তিনি আরও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি লক্ষ্যহীন জাতিকে দিশা দিয়েছেন। তিনি কারো কাছে মাথা নত করেন না। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন প্রত্যাখ্যান করে পদ্মাসেতুর মতো বড় প্রকল্প নিজেদের অর্থায়নে করার সাহস দেখিয়েছেন।

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান কাজী জামিল আজহার তাঁর বক্তব্যে স্বল্প ব্যয়ে বিজ্ঞান ভিত্তিক প্রযুক্তি নির্ভর উচ্চশিক্ষা বিস্তারে ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি দারিদ্র, ক্ষুধামুক্ত ও বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে গ্রাজুয়েটদের প্রতি ভূমিকা রাখার আহবান জানান।

Post MIddle

ডিগ্রিপ্রাপ্তদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, অনেক অধ্যবসায়, পরিশ্রম আর সাধনার ফসল আজকের এ ডিগ্রি। তোমাদের মাধ্যমে দেশ স্বপ্ন দেখবে। তোমরা দেশকে স্বপ্ন দেখাবে এবং সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের দায়িত্ব তোমাদেরই। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি শুধু পুঁথিগত শিক্ষা প্রদানে বিশ্বাসী না। এ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা শিক্ষার পাশাপাশি ক্রীড়া ক্ষেত্রে সাফল্য এনে দিয়েছেন। তারা নির্যাতিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমরা থ্রিডি ল্যাব স্থাপন করেছি। প্রযুক্তি নির্ভর, আধুনিক এ বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্য দেশের প্রথম আরবান ল্যাব প্রতিষ্ঠা করেছে। ইতোমধ্যে এ ল্যাব ‘নগর অ্যাপ’ ‘ই-হার্ট’ অ্যাপসহ বেশ কিছু অ্যাপস তৈরি করেছে। শহরের বায়ূতে কি পরিমাণ ধুলাবালি ও রোগ সংক্রমণ হচ্ছে, দূষণের মাত্রা কত, এর ফলে কি কি রোগ হয় তা নিয়ে গবেষণা করে বেশ সুনাম কুড়িয়েছে এ ল্যাব। এছাড়া সম্প্রতি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটিতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ইনোভেশন ল্যাব। এ ল্যাবের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা বেশ কিছু গবেষণাকর্ম নিয়ে কাজ করছে।

সমাবর্তন অনুষ্ঠানের বক্তা প্রফেসর অ্যামিরিটাস ও একুশে পদকপ্রাপ্ত ড. আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজউদ্দিন ইউনিভার্সিটি স্বাধীনভাবে যাতে কাজ করতে পারে তার উপর গুরুত্বারোপ করেন ও জাতি গঠনে গ্রাজুয়েটদের দায়িত্ব নেবার আহবান জানান।

এছাড়া সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অন্যান্য বক্তারা উচ্চ শিক্ষায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির অবদান তুলে ধরে এ ধারা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তারা বলেন, সফল মানুষদের ইতিহাসের কাছ থেকে শিক্ষা নিতে হয়, কেন না যারা ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে ব্যর্থ হন তারা একই ভুল বারবার করে। শিক্ষার্থীদের অবশ্যই সবার আগে সর্বশ্রেষ্ঠ মানবিক গুণাবলির অধিকারী হতে হবে। তাকে কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হতে হবে; মানুষের মতো মানুষ হতে হবে।

২০০৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বিইউ এর প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম সমাবর্তনে ১,২২৫ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এবারের ২য় সমাবর্তনে ১০ বিভাগে ৪৮০৪ হাজার জনকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দেওয়া হয়। এরমধ্যে ৩৫১০ জন স্নাতক ও ১২৯৪ জনকে স্নাতকোত্তর সনদ নেন। তাদের মধ্যে ১ জনকে আচার্যের স্বর্ণপদক, ১ জনকে বিইউ’র প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রথম উপাচার্য কাজী আজহার আলী স্বর্ণপদক এবং ১ জন বিদেশি শিক্ষার্থীসহ ৪ জনকে উপাচার্য স্বর্ণপদক দেওয়া হয়। এছাড়া বিভিন্ন বিভাগে ভালো ফলাফল অর্জন করায় ১৩ জনকে ডীনস্ পদক দেওয়া হয়।

২০০১ সালে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি স্থাপিত হয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে প্রতিষ্ঠানটি উন্নত শিক্ষার মান বজায় রেখে বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে। রাজধানীর প্রাণ কেন্দ্র মোহাম্মদপুরে বাংলাদেশের অন্যতম ও স্বনামধন্য বিইউ এর ক্যাম্পাস। মোহাম্মদপুরের আদাবরে বিইউ এর নিজস্ব ক্যাম্পাসের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুতে স্বল্প পরিসরে শুরু করলেও বর্তমানে এর ফ্যাকাল্টি সংখ্যা ৩ ও বিভাগের সংখ্যা ১০টি এবং বর্তমানে এর ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৬ হাজার।

//স

পছন্দের আরো পোস্ট