প্রাণ ফিরে পেয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

‘তুমি চেয়ে আছো তাই, আমি পথে হেটে যাই; হেটে হেটে বহুদূর… বহুদূর যেতে চাই!’- জীবন নামক অনিশ্চয়তার পথ ধরে প্রতিটি শিক্ষার্থীর ‘বহুদূরে’ যেতে চাওয়ার এই সংকল্প শুরু হয় ক্যাম্পাস থেকেই। বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের অংশ হতেই প্রতিটি শিক্ষার্থী যেন নতুন প্রাণ খোঁজে পায়। একের পর এক ক্লাস, পরীক্ষা, এসাইনমেন্ট, মিডটার্ম, প্রেজেন্টেশন ইত্যাদির ফাঁকে ফাঁকে ক্যাম্পাস আড্ডাও যেন একটি অপরিহার্য বিষয় সবার জন্য। এর ব্যতিক্রম নেই লাল পাহাড়ের পাদদেশ ঘেরা দেশের মধ্য-পূর্বাঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) ক্যাম্পাসেও।

Post MIddle

বরাবরের মতো চলে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই নিয়মানুবর্তিতায় ছেদ পড়ে এক শিক্ষকের বাসায় হামলার ঘটনা ও আরও কিছু দাবি নিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনে। গত ১৯ জানুয়ারি থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সবগুলো বিভাগে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকায় সর্বমোট ৪৩টি চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে। এতে করে সেশনজটের তীব্র আশঙ্কায় শিক্ষার্থীরা হাসফাঁস করছিলো। অবশেষে গতকাল (মঙ্গলবার) থেকে ক্লাস-পরীক্ষা চালু হওয়ায় প্রাণ ফিরে পেয়েছে ক্যাম্পাসের প্রতিটি প্রাঙ্গণ।

ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধের এই দিনগুলোতে শিক্ষার্থীদের বাস গুলো যেখানে দুই-একজন করে নামমাত্র যাত্রী নিয়ে আসতো সেখানে আজ দেখা গেছে বাসগুলিতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী, একাডেমিক ভবন, কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া, লালন চত্বর, বন্ধু চত্বর, শিক্ষক ডরমেটরি, বর্ণমালা চত্বর, কাঁঠালতলাসহ সব জায়গায় এতদিন যেখানে শুকনো পাতার মর্মরধ্বনি ও আগাছা-পরগাছার রাজত্ব ছিলো, সেখানে আজ থেকে আবার শুরু হলো শিক্ষার্থীদের প্রাণোচ্ছল আড্ডা, গান আর খুনসুঁটি। শিক্ষার্থীদের পদচারণা আর কোলাহলে আবার প্রাণ ফিরে পেয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।

কলা অনুষদের সামনেই বন্ধু চত্বর। পাশ দিয়ে যেতেই গলা ছেড়ে গান গাওয়া একদল শিক্ষার্থী নজরে পড়লো। আড্ডারত শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে কথা হলো বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আশিকুজ্জামান রাব্বি ও ফাহিমা নাজনীনের সাথে। অনুভূতি জানাতে গিয়ে তারা বললেন, ক্লাস-পরীক্ষা কোন কারণেই বন্ধ থাকুক তা আমরা চাই না। এতদিন ক্যাম্পাসের অস্থিতিশীলতার কারণে বাসায় যেন বন্দিদশায় ছিলাম। বন্ধু এবং ক্যাম্পাসকে মিস করছিলাম ভীষণ। অবশেষে ক্লাস-পরীক্ষা চালু হওয়ায় আবারো প্রাণের আড্ডায় আসতে পেরে যারপরনাই ভাল লাগছে। আশা করছি, আর কোন অপ্রিতিকর ঘটনা যেন আমাদের এই প্রাণোচ্ছলতায় যেন বিঘ্ন না ঘটায়।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো: আলী আশরাফ একজন দেশের একজন প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ। সদা হাসোজ্জ্বল এই মানুষটি শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকায় খুবই চিন্তামগ্ন ছিলেন। অবশেষে শিক্ষার্থীদের বিষয় মাথায় রেখেই আন্দোলনরত শিক্ষক সমিতির দাবি মেনে নিয়ে তাদেরকে ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরিয়ে নিতে স্বার্থক হন তিনি। তার কথায়, ‘শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করেই শিক্ষক সমিতির দাবি গুলো মেনে দাবি মেনে নেয়া হয়েছে। শিক্ষকদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনে শিক্ষার্থীদের পড়াশুনায় অনেক ক্ষতি হয়েছে । আমি চাই শিক্ষকরা এখন অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাসের যে শূন্যতা তা পূরণ করবেন।’

দীর্ঘ ১২ কার্যদিবসের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধে ক্যাম্পাসের অবস্থা ছিলো মৃতপ্রায়। এতে করে ক্যাম্পাস যে তার মূল পরিচয় হারাতে বসেছিল তা মেনে নিয়েই যেন উপাচার্য বলেন, ‘শিক্ষার্থীরাই ক্যাম্পাসের প্রাণ। তাদের পদচারণায় ক্যাম্পাস থাকবে প্রাণোচ্ছল, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহনে প্রতিদিন প্রাণের মেলায় পরিনত হবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষকরা ক্লাস নিবেন, শিক্ষার্থীরা ক্লাস করবে, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত থেকে ক্যাম্পাস সর্বোপরি দেশের মুখ উজ্জল করবে বিশ^ দরবারে।’#

আরএইচ

পছন্দের আরো পোস্ট