মহান মে দিবস: শোষকের বিরুদ্ধে শোষিতের সংগ্রাম

mayday_111203_111238মে দিবস শোষিত বঞ্চিত সর্বহারা মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে একটি অনন্য মাইলফলক। শ্রমিক সমাজ তাদের মৌলিক অধিকার আদায় ও সংরক্ষণের উদ্দেশে আমেরিকার শিকাগো শহরের হে-মার্কেট স্কোয়ারে তৎকালীন শাসকগোষ্ঠীর আঘাতে অকাতরে প্রাণ বিসর্জন দিয়ে আজ থেকে একশত ত্রিশ বৎসর পূর্বে অর্থাৎ ১৮৮৬ সালের ১লা মে দৈনিক ৮ ঘন্টা কাজের সময় প্রতিষ্ঠা করে এই মহান বিজয়ের পতাকা উড্ডীন করে। তাই মে দিবস শ্রমিক শ্রেণীর আন্তর্জাতিক সংহতি প্রকাশের দিন, শোষণ বঞ্চনা থেকে মুক্ত হবার শপথ নেয়ার দিন। মূলত: সারা বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষকে আলোড়িত ও জাগরিত করার পিছনে এ দিনটির তাৎপর্য্য অপরিসীম। মানুষই ইতিহাস সৃষ্টি করে বিধায় মানুষের কাছে ইতিহাস ঋণী। আর ইতিহাস সাধারণ শ্রমজীবি মানুষের সমস্ত উত্থান-পতন, যুদ্ধ বিদ্রোহ, বিপ্লবকে বক্ষে ধারণ করে বলে মানুষ ইতিহাসের কাছে দায়বদ্ধ। আর ১লা মে দায়বদ্ধতার একটি উজ্জ্বল স্বাক্ষী হিসাবে ইতিহাসে চিরঞ্জীব হয়ে আছে।

 

আবহমান কাল হতে শ্রমজীবী মানুষ তাদের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য সংগ্রাম করে বহু ব্যবস্থার পরিবর্তন করলেও শোষণের অবসান করতে পারেনি। আদিম সমাজ ভেঙ্গে দাস যুগের প্রবর্তনের সাথে সাথেই শ্রেণী সংঘাতের সৃষ্টি হয়। শুরু হয় শোষণের প্রক্রিয়া। মালিকদের অমানুষিক নির্যাতন ও শোষণের বিরুদ্ধে দাসরা বিদ্রোহ করে। তবে সেটা ছিল ব্যক্তিগত মুক্তির জন্য, সমাজের বিপ্লবাত্বক পরিবর্তনের জন্য নয়। দাসদের মধ্যে শ্রেণী সংগ্রাম চেতনার অভাবে বিপ্লবী শ্রেণী গড়ে উঠেনি। ফলে বিপ্লবী লড়াই না হয়ে গড়ে উঠে ব্যক্তিগত বিদ্রোহ। ব্যক্তিগত বিদ্রোহ শেষ পর্যন্ত দমিত হলে শোষকদের শক্তি কিছুটা হ্রাস করে এবং পরিণামে সমাজের অসংগতির কারণে দাস সমাজের পতন হয়ে সামন্তবাদী সমাজের উদ্ভব ঘটে। কিন্তু শোষনের অবসান হয়নি, বরং শোষণ শাসন নবরুপে আবির্ভূত হয়।

 

সামন্তবাদী সমাজ ব্যবস্থায় অভিজাত সামন্ত প্রভুরা ও যাজক সম্প্রদায় নতুনভাবে কৃষকদের শোষণ করে। ফলে কৃষকরা বেঁচে থাকার কোন উপায় না পেয়ে শহরে এসে কল কারখানায় কাজ নিতে বাধ্য হয়। এতে মালিক শ্রেণী শ্রমিকদের কম মজুরী দিয়ে বেশী খাটিয়ে প্রচুর লাভ করতে শুরু করে। এ অবস্থা শ্রমিকরা বেশীদিন সহ্য করেনি। ১৮৩৪ সালের আমেরিকার নিউইয়র্কে রুটি কারখানায় শ্রমিকদের ধর্মঘট হয়। মিশরে ক্রীতদাস প্রথার চেয়েও দুঃসহ অবস্থার মধ্যে রুটি কারখানায় শ্রমিকরা বছরের পর বছর জীবন কাটান। ২৪ ঘন্টার মধ্যে গড়ে ১৮-২০ ঘন্টাই শ্রমিকরা কাজ করত। আর বাকী সময়টুকু ঘুমাতেই কেটে যায়। নিজের দুঃখ নিয়ে কারো সাথে আলাপ করার সময় তাদের ছিল না। তবুও সারা রাতদিন কাজ করার পর শ্রমিকরা নিজেরাই সংঘটিত হবার চেষ্টা করে। শোষক শ্রেণীর বিরুদ্ধে নিজেদের জাগিয়ে তোলে নিজেরা জোট বেঁধে একত্রিত হয়েছে। কিন্তু শ্রমিকদের একত্রিত হওয়ার সময়ের বড় অভাব ছিল। শ্রমিকরা কাজ করতে করতে একটা ধারণা পোষণ করে যে তাদের সমস্ত দুঃখ কষ্ট ও শোষণের জন্য দায়ী হচ্ছে যন্ত্র। এ সব যন্ত্রপাতিকে যদি ভেঙ্গে দেয়া যায় তবেই তাদের মুক্তি। শুরু হল লুডাইট মুক্তি আন্দোলন। এর ফলে বিভিন্ন মেশিন ভেঙ্গে ফেলার ফলে বহু কারখানা বিধ্বস্ত হয়। এতে মালিকদের চেয়ে বেশী ক্ষতি হল শ্রমিকদেরই। কেননা যে সব কারখানা ধ্বংস হল সে সব কারখানায় শ্রমিকদের আয় স্বাভাবিক কারনেই বন্ধ হয়ে গেল। আয় বন্ধের স্বাভাবিক ফল হল অনাহার। অথচ শ্রমিকরা মনে করেছিলেন যন্ত্রকে ধ্বংস করতে পারলেই তাদের মুক্তি। শ্রমিকরা যখন বিভ্রান্ত তখন তারা শুনলেন এক নতুন কথা “যন্ত্রপাতি শ্রমিক শ্রেণীর শত্রু নয়”। ‘লুডাইট আন্দোলন’ থেকে শ্রমিক শ্রেণীর যে শিক্ষা হল তা হল মালিকানা ব্যবস্থা সম্পর্কে সম্যক ধারণা। তারা বললেন সমাজতন্ত্রই মানুষকে শোষণ থেকে মুক্তি দিতে পারে। শ্রমিক শ্রেণী জানতে পারলেন সমাজতান্ত্রিক সমাজ হল এমন একটা সমাজ, যেখানে মেহনতী মানুষের ন্যায়সঙ্গত মজুরী ও অধিকার সুনিশ্চিত হবে। শ্রেণী সংগ্রামের এই বিপ্লবী ডাকে সাড়া দিয়ে সমাজের অবহেলিত উপেক্ষিত নীচুতলার খেটে খাওয়া মানুষ জেগে উঠলেন। এক্ষেত্রে শ্রমিক নেতা নিডলুড সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ তাদেরকে উৎসাহিত করেন। শ্রমিক নেতা নিডলুডই প্রথম “নিডলুডিটস” কাজের সময় নির্ধারনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। তার ডাকে সাড়া দিয়ে বস্ত্র শ্রমিকরা ১৭৬৫ সালে ধর্মঘট শুরু করে এবং এ আন্দোলন ও ধর্মঘট ক্রমান্বয়ে ১৭৯৪ সাল পর্যন্ত চলে।

 

আঠারো শতকের গোড়ার দিকে, অর্থাৎ ১৮০৩ সাল থেকে ১৮১২ সাল পর্যন্ত স্কটল্যান্ডের ৪০ (চল্লিশ) হাজারেরও বেশী শ্রমিক ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন ও ধর্মঘট শুরু করে এবং তা এক মাস স্থায়ী হয়। ফলে শ্রমিকরা আংশিকভাবে জয়ী হন এবং তাদের কিছু কিছু দাবী মালিক পক্ষ মেনে নেন। কিন্তু মূল দাবী সময় নির্ধারণ এবং শ্রমের মূল্য সম্পর্কে কোন সমাধান হয় নাই। শ্রমিকরা ক্রমান্বয়ে তাদের দাবী দাওয়া আদায়ের লক্ষ্যে আরো সক্রিয় হয়। ১৮৭০ সালে আবার শ্রমিক আন্দোলন দানা বেঁধে উঠে। আন্তর্জাতিকভাবে প্যারিস শহর শ্রমিক আন্দোলনের কেন্দ্র বিন্দু হয়ে উঠে। অপরদিকে ১৮৭০ সালের ১৮ই জুলাই ফ্রান্স সরকারের বিরুদ্ধে শ্রমিকরা বিদ্রোহ ঘোষণা করে। ১৮৭০ সানে প্রথম আন্তর্জাতিক (First International) শ্রমিক গড়ে উঠে যার মূল নেতৃত্বে ছিলেন কাল মার্কস ও ফ্রেভাডিক এঙ্গেলস। ‘দুনিয়ার মজদুর এক হও’ এ শ্লোগান তুলে তাঁরা ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানীসহ ইউরোপের শিল্পোন্নত দেশগুলির শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ করেন। সে দিনের শ্রমিকদের মধ্যে শ্লোগান ছিল- (১) আট ঘন্টা বিশ্রাম, (২) আট ঘন্টা নিদ্রা ও (৩) আট ঘন্টা কাজ। First International কে অনুসরণ করেই ১৮৭০ সালে গড়ে উঠে প্যারিস কমিউন। প্যারিস কমিউনের নেতৃত্বে ১৮৭০ সনের ৩১শে অক্টোবর শ্রমিক শ্রেণী প্যারিসের ক্ষমতা দখল করে এবং তারা প্যারিস শহরকে বিশটি জেলায় ভাগ করে ১৮৭১ সালের ২২শে জানুয়ারী পর্যন্ত শাসন কার্য এবং উৎপাদন পদ্ধতি পরিচালনা করে। তখন পুজিঁপতিরা বিপাকে পরে ঐক্যবদ্ধভাবে সাম্রাজ্যবাদীদের সহায়তায় রক্তপাতের মাধ্যমে শ্রমিক শ্রেণীকে ক্ষমতাচ্যুৎ করে। সে সময় প্রচুর শ্রমজীবি মানুষ তাদের জীবন শোষকগোষ্ঠীর হাতে বিসর্জন দেন। প্যারিস কমিউনের ব্যর্থতার পর First Internationalএর সদর দপ্তর লন্ডন থেকে নিউইয়র্কে স্থানান্তরিত করা হয়।

 

১৮৭০ এর দশকে আমেরিকার শ্রমিক আন্দোলন নবরূপে আবির্ভূত হয় এবং এতে অনেকগুলো হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটে। ১৮৭৪ সালে নিউইয়র্কের টমকিন স্কোয়ারে এক শ্রমিক জনসভায় পুলিশ গুলিবর্ষন করে। ১৮৭৫ সালে পেনসিলভ্যানিয়ার কয়লা খনি শ্রমিকদের আন্দোলন দমন করতে গিয়ে ১০ জন শ্রমিকদের ফাঁসি দেয়া হয়। ১৮৭৭ সালে রেল ও ইস্পাত কর্পোরেশনের লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের ধর্মঘট ও সংগ্রাম সারা আমেরিকাকে কাঁপিয়ে তোলে। এ ঘটনা প্রবাহ শিল্প শহর শিকাগোকে আলোড়িত করে তোলে। পরবর্তীতে আমেরিকায় ফেডারেশন অব লেবার সুদীর্ঘ আন্দোলনের এক পর্যায়ে অর্থাৎ ১৮৮৪ সালে ৭ই অক্টোবর ঘোষণা করলেন “১৮৮৬ সালে ১লা মে থেকে ৮ ঘন্টা কাজের সময় গণ্য করা হবে।”

 

১৮৮৬ সালের ১লা মে ছিল রোজ শনিবার। ইতিপূর্বে আট ঘন্টা কাজের দাবীতে শ্রমিকেরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। ১লা মে যথারীতি আট ঘন্টা কাজের দাবীতে শান্তিপূর্ণ ধর্মঘট পালিত হয়। ২রা মে রোববার সিন সিন্নাটিতে শ্রমিক সভায় আর্লবার্ট পার্সনস বক্তৃতা দেন। ৩রা মে ম্যাককমিক রিপার কারখানার শ্রমিকদের এক সভা চলাকালীন সময়ে পুলিশ গুলি চালায়। ফলে ৬ জন শ্রমিক নিহত হয়, আহত হয় অনেকে। পরদিন অর্থাৎ ৪ঠা মে গুলিবর্ষণ ও শ্রমিক হত্যার প্রতিবাদে শিকাগোর ‘হে মার্কেট স্কোয়ারে’ বিরাট সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বক্তা ছিলেন শ্রমিক নেতা আলবার্ট পার্সনস। রাত ১০ টায় সভা শেষ হওয়ার সাথে সাথে সমাবেশের উপর চলল পুলিশের বেপরোয়া লাঠিচার্জ ও গুলি। সংঘটিত হল হে মার্কেটের ঐতিহাসিক বিয়োগান্তক ঘটনা যা আজো ইতিহাসে মে দিবস হিসেবে চিরঞ্জীব হয়ে আছে।

 

Post MIddle

ঘটনার গতি বুঝতে পেরে আলবার্ট পার্সনস আত্মগোপনে চলে গেলেন। অগাস্ট স্পাইজ, সামফিলড্রেন ঘটনাস্থল থেকেই গ্রেফতার হন। আর মাইকেল স্কোয়ার, জজ এঞ্জেল, এ্যাডলফ ফিলার, রুই লিঙ্গ ও অস্কার নীব এ পাঁচজনকে পরে গ্রেফতার করা হয়। ১৮৮৬ সালে ২১শে জুন বিচারের নামে প্রহসন শুরু হয়। আলবার্ট পার্সনস ছিলেন তখনও আত্মগোপনে। সঙ্গীদের বিচারে ফাঁসি হবে আর তিনি আত্মগোপনে থাকবেন এটা তাঁর সহ্য হল না। তিনি এক বন্ধুকে বললেন,
“আমার মত সমান নিরপরাধ হলেও আমার কমরেডরা অপরাধের শাস্তি ভোগ করবে। এ কথা জেনে আমার পক্ষে স্বাধীন থাকাটা অসহনীয়।”
বিচারের প্রথম দিনেই আত্মসমর্পণ করে আদালত কক্ষে ঢুকে আলবার্ট পার্সনস বললেন,
“হে মাননীয় বিচারক, আমি এসেছি আমার নিরপরাধ কমরেডদের সঙ্গে বিচারের সম্মুখীন হতে।”

 

আলবার্ট পার্সনস আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্যে শ্রমজীবি মানুষের দুঃখের কাহিনী, ধর্মঘটীদের বিরুদ্ধে মালিকদের ষড়যন্ত্রমূলকভাবে গৃহীত ব্যবস্থা, হে মার্কেটে বিনা প্ররোচনায় লাঠি ও গুলির আক্রমণের কথা, আট ঘন্টা কাজের দাবীতে শ্রমিক আন্দোলনের স্বপক্ষে জোরালো বক্তব্য ও তথ্য প্রমানাদি উপস্থাপন করেন। সর্বোপরি আবেগভরা কণ্ঠে বলেন,
“আমি একজন সমাজতন্ত্রী…. আমি যদি জীবনে অন্য পথ বেঁচে নিতাম, তাহলে হয়ত আজ ‘শিকাগো’ শহরে রাজপথের উপর সুন্দর ঘরে বিলাসে ও আয়াসে পরিবার পরিবৃত্ত হয়ে অপেক্ষারত দাসদের নিয়ে থাকতাম। কিন্তু আমি বেছে নিয়েছিলাম অন্য পথ এবং আজ আমি দাঁড়িয়েছি এখানে এ মঞ্চে। এটা আমার অপরাধ।”
অন্য একজন নেতা অগাষ্ট স্পইজ আদালতে বলেন,
“অভাবে ও কষ্টে খেটে খাওয়া লাখো লাখো নিষ্পেষিতরা সে আন্দোলনে তাদের মুক্তির আশা দেখে। তোমরা যদি ভেবে থাকো যে, আমাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে সেই শ্রমিক আন্দোলনকে উচ্ছেদ করতে পারবে, যদি এটাই তোমাদের মত হয়, তবে দাও আমাদের ফাঁসি। এখানে একটা স্ফুলিঙ্গের উপরে পা দেবে সেখান থেকেই তোমাদের পেছনে, সামনে, সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে লেলিহান অগ্নিশিখা। এটা ভূগর্ভের আগুন। তোমরা তা নেভাতে পারবে না।”

 

১৮৮৬ সালের ৯ই অক্টোবর সকল জনমতকে উপেক্ষা করে বীর শ্রমিক নেতাকে আদালত ফাঁসির আদেশ দেয়। সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠলেও আমেরিকার সুপ্রীম কোর্ট মামলাটি পুনরায় পরীক্ষা করতে অস্বীকার করে। বিশ্ব জনমতকে বিবেচনা না করে ১৮৮৭ সালের ১১ নভেম্বর বীর শ্রমিক নেতাদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। ফাঁসি হওয়ার মাত্র কয়েকদিন আগে আলবার্ট পার্সনস তার স্ত্রীর কাছে সে চিঠি লেখেন তা তার জীবন ও আদর্শের একটি জীবন্ত দলিল হয়ে ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছেন। আলবার্ট পার্সনস স্ত্রীর কাছে লিখেছিল:
“আমার অসহায় প্রিয় বৌ…. তোমাকে আমি জনগণের কাছেই অর্পণ করছি; জনগণের একজন নারী তুমি। তোমার কাছে আমার একটি অনুরোধ, আমি যখন রইব না, তখন কোন বেপরোয়া কাজ করো না, তবে সমাজতন্ত্রের মহান আদর্শকে আমি যেখানে রেখে যেতে বাধ্য হলাম, সেখান থেকে তাকে তুমি তুলে ধরো।”

 

পৃথিবীর শোষক-শাসকরা সেদিন শ্রমজীবী মানুষের কণ্ঠস্বর শোনেনি; বরং আন্দোলন সুচনাতেই নিস্তদ্ধ করার চেষ্টা করে। ১৮৮৯ সালে ফ্রান্সের প্যারিসে শ্রমিক নেতারা সম্মেলনের মাধ্যমে গঠন করে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক (ঝবপড়হফ ওহঃবৎহধঃরড়হধষ)। উক্ত সম্মেলনে প্রস্তাব করা হয় যে, ১৮৯০ সালের ১লা মে হতে প্রতিবছর মে দিবস শ্রমিক শ্রেণীর উৎসব ও প্রতিজ্ঞা দিবস হিসাবে পালন করা হবে। এটা শ্রমিক শ্রেণীর বিজয়ের দিন। সা¤্রাজ্যবাদীরা হত্যা, আর মৃত্যু দিয়ে শ্রমিক শ্রেণী এবং তাদের আন্দোলন স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছে। কিন্তু শ্রমিকরা ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের এ চক্রান্ত নস্যাৎ করে দিয়ে মে দিবসকে শ্রমিক শ্রেণীর আনন্দ উল্লাস ও একটি বিজয়ের দিন হিসাবে কায়েম করে। দীর্ঘ আন্দোলন ও সংগ্রামের ফসল হিসেবে ১৯১৯ সালে আই, এল, ও প্রতিষ্ঠা হলে ৮ ঘন্টা কাজের সময়টি ওখঙ-এর ১নং কনভেনশন হিসাবে প্রণীত ও গৃহীত হয়। বর্তমানে পৃথিবীব্যাপী এ কনভেনশনটি অনুসমর্থিত ও আইনে প্রণীত হয়েছে। এক কথায় বলা যায় মে দিবসের ইতিহাস শোষক শ্রেণীর বিরুদ্ধে শোষিত শ্রেণীর সংগ্রামের ইতিহাস।#

 

প্রফেসর ড. মোঃ আবু তাহের
ট্রেজারার, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়

(e-mail: taher500_cumgt@yahoo.com)

পছন্দের আরো পোস্ট