অর্জনের ঝুলিটার পেছনে অনুপ্রেরণা ছিলেন তিনি – ড.আউয়াল

বাকৃবি থেকে,মো: আশিকুজ্জামান।

“মাকে দেখতাম প্রতিদিন ছোট ছেলে-মেয়েদের কোরআন শিক্ষা দিতেন। ধর্মীয় শিক্ষার হাতে খড়ি মায়ের কাছেই।  ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি বাস্তব জীবনের উদ্দেশ্য খুজে পেয়েছি তার থেকেই। মা থাকতে সবসময় বলতেন মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়ার পাশাপাশি নামাজ পড়বি। তাহলে একদিন মানুষের মতো মানুষ হয়ে সমাজের মুখ উজ্জ্বল করবি। মা চেয়েছিলেন বলেই আজ আমি এখানে, নানান অর্জনের ঝুলিটার পেছনে অনুপ্রেরণা ছিলেন তিনি।” মাকে নিয়ে এমনটিই বলেছেন শিক্ষা, নানাবিধ গবেষণা, মানব সেবামূলক কাজে অনন্য বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) ড. মো আব্দুল আউয়াল।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ১৯৬৩ সালে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম নিয়েছেন অধ্যাপক ড. আউয়াল। পাঁচ ভাই-বোনের সংসারে তিনি সবার বড়। মায়ের আদর সব সন্তানের জন্য সমান হলেও ড. আউয়াল ছিল একটু বেশি আদুরে। সকলের অনুশাসন ও স্নেহে বেড়ে উঠেছেন তিনি। ছোট বেলা থেকেই পড়াশোনায় ছিল তাঁর বিশেষ আগ্রহ। শিক্ষার্থী থাকাকালীন পড়াশোনার পাশাপাশি পরিবারের দায়িত্ব নিয়েছেন। ছোট ভাই বোনদের উচ্চশিক্ষায় অনুপ্রেরণা হিসেবে ছিল তাঁর অবস্থান।

শিক্ষার আলো ছড়াতে নিজ অর্থায়নে ময়মনসিংহের সুতিয়াখালীতে তৈরি করেছেন মহিলা মাদ্রাসা। অনাবাসিক ১শ ৫ জন শিক্ষার্থী পড়তে আসেন এখানে। শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে আবসিক থাকার ব্যবস্থা। মায়ের নামের সাথে মিল রেখে আবাসিক ভবনের নামও দিয়েছেন রাজিয়া খাতুন ভবন। ওই অঞ্চলে শিক্ষার আলো পৌঁছাতে অনেক উদ্যোগ নিয়েছেন অধ্যাপক ড. আউয়াল।

Post MIddle

অধ্যাপক ড. আউয়াল বলেন, ছোট থেকেই পড়াশোনা আপন করে নিয়েছিলাম। বড় পরিবার ছিল বিধায় চাচাতো ভাই-বোন সকলেই এক সাথে একই টেবিলে পড়াশোনা করতাম। মেজো চাচা একজন বাকৃবির কৃষিবিদের বাসায় ফ্রিজ, টিভি দেখে বলেছিলেন আমাকে কৃষিবিদ হতে হবে। সেই থেকে কৃষিতে পড়ার আগ্রহ ও অনুপ্রেরণা দিয়েছেন তিনি। হাই স্কুল পর্যন্ত বাবা ও চাচার সহয়তায় পড়েছি। ১৯৭৮ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় মেধা তালিকায় ৪র্থ এবং ১৯৮০ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করি। পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে বাকৃবি থেকে ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন (স্নাতক) এবং ১৯৮৯ সালে এমএস ইন এনাটমি (স্নাতকোত্তর) ডিগ্রী অর্জন করি। সবশেষে ১৯৮৮ সালে বাকৃবির ভেটেরিনারি অনুষদের এনাটমি বিভাগে প্রভাষক পদে যোগ দেই।

পড়াশোনাতে তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। তিনি দেশ বিদেশের বিভিন্ন অনুদানে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেন এবং  প্রেসিডেন্সিয়াল অ্যাওয়ার্ডসহ বিভিন্ন অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছেন। ড. আউয়াল ১৯৯৬ সালে জাপানের ইয়ামাগুচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। পরবর্তীতে জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয় ও কাগোশিমা বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্টডক্টরেট ফেলো হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

বাকৃবি ২৪তম উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসানের দায়িত্বের মেয়াদ ২৯ মে শেষ হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের  দৈনন্দিন প্রশাসনিক ও আর্থিক কর্মকান্ড পরিচালনার স্বার্থে অধ্যাপক আউয়ালকে উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব প্রদান করা হয়। ২০২২ সালের ৩শে অক্টোবর থেকে ভেটেরিনারি অনুষদের ডিনের দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া বিভাগীয় প্রধান, হলের প্রধ্যক্ষসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন  প্রশাসনিক পদে তিনি সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন।

পছন্দের আরো পোস্ট