আল কোরআনের আলোকে অপচয়কারীদের যত সংকট

অর্থনৈতিক ভারসাম্য ঠিক রাখতে আয় ও ব্যয়ের যথাযথ প্রয়োগ জরুরি। হালালভাবে বেশি সম্পদ উপার্জন ও প্রয়োজন মাফিক তা ব্যয় করার ক্ষেত্রে ইসলামে বাধ্যবাধকতা নেই। তবে ইসলাম অপব্যয় সমর্থন করে না। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয়ভাবে অপচয়ের নেতিবাচক প্রভাব ভিন্ন ভিন্ন সংকট তৈরি করে, যার মাসুল দিতে হয় সবাইকে। নিম্নে অপব্যয়ের কুফল ও অপব্যয় রোধে করণীয় তুলে ধরা হলো।

অপচয়কারী শয়তানের ভাই : শয়তান আমাদের চিরশত্রু। শয়তানের প্ররোচনায় মুমিনের আমল-আখলাক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অপব্যয়কারীর মন্দ প্রবণতাকে আল্লাহ তাআলা সেই ঘৃণিত শয়তানের ভাই হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই। শয়তান স্বীয় পালনকর্তার প্রতি খুবই অকৃতজ্ঞ।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ২৭)

আল্লাহর ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত : আল্লাহর ভালোবাসা অর্জন করা একজন মুমিনের পরম কাঙ্ক্ষিত বিষয়। ইবাদত ও আমলের নানা প্রচেষ্টার মাধ্যমে এ ভালোবাসা অর্জন করতে হয়। কিন্তু আল্লাহ তাআলা কোনো অপচয়কারীকে ভালোবাসেন না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে বনি আদম, তোমরা প্রত্যেক নামাজের সময় সাজসজ্জা পরিধান করে নাও, খাও ও পান করো এবং অপচয় কোরো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের ভালোবাসেন না।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৩১)

অপব্যয় হারাম উপার্জনে উদ্বুদ্ধ করে : অপচয় মানুষকে অর্থসংকটে ফেলে দেয়। একসময় দেখা যায়, সংসারের প্রয়োজনীয় ব্যয় বহন করা তার পক্ষে সম্ভব হয় না। ফলে নিরুপায় হয়ে সে হারাম উপার্জনের দিকে পা বাড়ায়।

যার কারণে তাকে জান্নাত থেকে বঞ্চিত হতে হয়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক ওই শরীর, যা হারাম দ্বারা গঠিত তার জন্য জাহান্নামই উপযুক্ত স্থান।’ (বুখারি, হাদিস : ৪৫১৯)

Post MIddle

পরকালে কঠিন জবাবদিহি : পরকালে মহান আল্লাহর সামনে প্রত্যেককে নিজ সম্পদের হিসাব দিতে হবে, সম্পদ কোথা থেকে সে উপার্জন করেছে এবং কোথায় ব্যয় করেছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘কিয়ামত দিবসে পাঁচটি বিষয়ে জিজ্ঞাসিত না হওয়া পর্যন্ত আদমসন্তানের দুই পা তার রবের কাছ থেকে একটুকুও নড়বে না। তার জীবনকাল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে, কিভাবে তা অতিবাহিত করেছে? তার যৌবনকাল সম্পর্কে, কী কাজে তা বিনাশ করেছে? তার ধন-সম্পদ সম্পর্কে, কোথা থেকে তা উপার্জন করেছে এবং কোথায় তা ব্যয় করেছে? আর সে যতটুকু জ্ঞানার্জন করেছিল সে অনুযায়ী আমল করেছে কি না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৪১৬)

অপচয় থেকে বাঁচতে করণীয় : অপচয় থেকে বাঁচতে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে ব্যয়ের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো –

মধ্যপন্থা অবলম্বন : মধ্যপন্থা হলো অপচয় ও কৃপণতার মাঝামাঝি অবস্থা। কিন্তু সমাজে মধ্যপন্থা অবলম্বনকারী মানুষের সংখ্যা খুবই কম। কেউ খুব বেশি অপচয় করে, আবার কেউ করে কৃপণতা। অথচ ইসলাম এর মাঝামাঝি থাকতে নির্দেশ দিয়েছে। আল্লাহ তাআলা ঈমানদার বান্দাদের বৈশিষ্ট্য প্রসঙ্গে বলেন, ‘তারা যখন ব্যয় করে, তখন অপব্যয় করে না এবং কৃপণতাও করে না; বরং তারা এতদুভয়ের মধ্যবর্তী অবস্থায় থাকে।’ (সুরা : ফুরকান, আয়াত : ৬৭)

লোক দেখানো ব্যয় না করা : অপচয় ও অপব্যয়ের একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে লৌকিকতা। সাধারণত মানুষ লোক দেখানোর জন্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যয় করে, যা অপচয়ের শামিল। লৌকিকতা প্রদর্শনের জন্য সম্পদ ব্যয়কে ইসলাম অনুমোদন করে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে বিশ্বাসীরা! খোঁটা দিয়ে ও কষ্ট দিয়ে তোমরা তোমাদের দান বিনষ্ট কোরো না। সেই ব্যক্তির মতো, যে তার ধন-সম্পদ ব্যয় করে লোক দেখানোর জন্য এবং সে আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস করে না…।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৬৪)।

এ ছাড়া পরকালীন হিসাব-নিকাশের ভয় করা। রাসুল (সা.), সাহাবায়ে কেরাম ও পূর্বসূরি সফল মনীষীদের জীবনচরিত পাঠ করা। অপচয়কারীদের সাহচর্য পরিহার করা এবং মৃত্যু সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করলে অপব্যয় ও অপচয় থেকে বিরত থাকা সম্ভব হবে, ইনশাআল্লাহ।

পছন্দের আরো পোস্ট