৫৬তম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন

চবি প্রতিনিধি।

আজ (১৮ নভেম্বর ২০২১) বৃহস্পতিবার ‘৫৬তম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস’ দিনব্যাপি বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে মহাসমারোহে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উদযাপিত হয়েছে। এ উপলক্ষে সকাল ১০:৩০ টায় চবি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার বেলুন-ফেস্টুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করেন এবং শান্তির প্রতীক পায়রা অবমুক্ত করেন। এরপর সুসজ্জিত ব্যান্ড দলের ব্যান্ডের সুরের মূর্ছনায় শুরু হয় আনন্দ শোভাযাত্রা।

আনন্দ শোভাযাত্রা চবি বঙ্গবন্ধু চত্বরে এসে শেষ হয়। এরপর চবি বঙ্গবন্ধু চত্বরে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার এবং অতিথিবৃন্দদের সাথে নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুস্পার্ঘ অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

বেলা ১১টায় চবি জারুলতলায় অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ও চবি এলামনাই ড. হাছান মাহমুদ এম.পি. এবং উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার ও অতিথিদের সাথে নিয়ে ৫৬ তম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের কেক কাটেন।

বেলা ১১:৩০ টায় অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা ও স্মৃতিচারণ সভা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন মাননীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, এম.পি.। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার এর সভাপতিত্বে এবং উদযাপন কমিটির সদস্য-সচিব ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চবি উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর বেনু কুমার দে।

এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত হয়ে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশনের সভাপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব আবদুল করিম এবং সাধারণ সম্পাদক চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রীর প্রেসিডেন্ট জনাব মাহবুবুল আলম।

অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চবি সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. এম বদিউল আলম, সাবেক উপাচার্য প্রফেসর আনোয়ারুল আজিম আরিফ, সাবেক উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. মোঃ আলাউদ্দিন, সাবেক উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ শামসুদ্দিন, সাবেক চাকসু ভিপি জনাব মাজহারুল হক শাহ ও চাকসু ভিপি নাজিম উদ্দিন।

অনুষ্ঠানে ‘বিশ্ববিদ্যালয় : বিশ্ববিদ্যাভাবনা’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চবি কলা ও মানাববিদ্যা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মহীবুল আজিজ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চবি রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর এস এম মনিরুল হাসান।

প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের অনুষ্ঠানে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানোয় মাননীয় উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, “এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে আমার অম্ল-মধুর স্মৃতি জড়িয়ে আছে”।

Post MIddle

তিনি বলেন, “প্রকৃতির অপরূপ সাজে সজ্জিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ৫৫ বছরের দীর্ঘ পথ চলায় দেশ-জাতি গঠনে এবং মানবসম্পদ উন্নয়নে দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির ব্যাপারে অনবদ্য ভূমিকা রেখেছে”। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা শিক্ষা-গবেষণা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন এবং দেশ ও সমাজ গঠনে অপরিসীম ভূমিকা রেখে চলেছে; যা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অত্যন্ত আনন্দের ও গৌরবের।

তিনি আরও বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-গবেষকবৃন্দ নোবেল বিজয়সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করে এ বিশ্ববিদ্যালয়কে গৌরবান্বিত করেছেন। মাননীয় মন্ত্রী আরও বলেন, “শুধু পঠন-পাঠন বা সার্টিফিকেট বিতরণ নয়; জ্ঞান ভিত্তিক, বহুমাত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা”।

মাননীয় মন্ত্রী একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি মেধার চর্চা, মুক্তবুদ্ধির চর্চা, বাংলার আবহমান সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আলোকিত মানবসম্পদে পরিণত হওয়ার আহবান জানান। প্রসঙ্গক্রমে মাননীয় মন্ত্রী বলেন, “আমার জীবনকে এ পর্যায়ে নিয়ে আসার পিছনে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের যথেষ্ট অবদান রয়েছে”। তিনি বলেন, “অবয়ব বা অবকাঠামো উন্নয়ন সার্বিক উন্নয়ন নয়; প্রকৃত উন্নয়ন হলো অধিকতর জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা এবং গবেষণা কার্যক্রমের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানের পরিধিকে প্রসারিত করা”। তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিং এ উন্নীত করতে হলে নিয়মিত আন্তর্জাতিক সেমিনার-সিম্পোজিয়ামের মাধ্যমে শিক্ষক-গবেষকবৃন্দের গবেষণা কার্যক্রমসহ সকল অর্জন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরতে হবে”।

উপাচার্য তাঁর বক্তব্যে শত ব্যস্ততার মাঝেও মাননীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী চবি এলামনাই ড. হাছান মাহমুদ এম.পি. কে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ায় আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। একইসাথে অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলকে স্বাগত ও বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের শুভেচ্ছা জানান।

তিনি তাঁর ভাষণের শুরুতে মহাকালের মহানায়ক, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চারনেতা, মহান মুক্তিযুদ্ধে শাহাদাৎ বরণকারী ত্রিশলক্ষ শহীদ, মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যদের এবং ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে শাহাদাৎ বরণকারী বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যবর্গ ও ’৫২ এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত দু’লক্ষ জায়া-জননী-কন্যার প্রতি বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করেন এবং শহীদ জননী জাহানারা ইমামকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবসউপাচার্য বলেন, “চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে জ্ঞান-বিজ্ঞানে পারদর্শী দক্ষ মানবসম্পদ উৎপাদন করে চলেছে। এ ধারা অব্যাহত রেখে বিশ্ববিদ্যালয়কে দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠে পরিণত করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকলকে সাথে নিয়ে বর্তমান প্রশাসন নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে।” ৫৬ তম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস অত্যন্ত সুন্দরভাবে সফল করায় উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে গঠিত কমিটি এবং বিভিন্ন উপকমিটির আহবায়ক ও সদস্যবৃন্দসহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সংশ্লিষ্ট সকলকে, সাংবাদিকবৃন্দ ও আইন-শৃংখলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যবৃন্দসহ ছাত্র-ছাত্রীদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।

জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে মূল অনুষ্ঠান সূচিত হয়। অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু পরিবারের শহীদ সদস্যবর্গ, জাতীয় চারনেতাসহ মহান মুক্তিযুদ্ধে শাহাদাৎ বরণকারী ত্রিশলক্ষ শহীদ, মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যদের এবং চবির প্রয়াত শিক্ষক, কর্মকর্তা কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রধান অতিথি এবং অতিথিবৃন্দকে ফুল দিয়ে বরণ করা হয় এবং উত্তরীয় পরিয়ে দেয়া হয়। এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর নির্মিত তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এ ছাড়া ৫৬ তম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে চবি ক্যাম্পাসকে অপরূপ সাজে আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে চবি সংগীত বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ ছাড়াও সংগীত পরিবেশন করেন অতিথি শিল্পী টুনটুন বাউল এবং সবশেষে পরিবেশিত হয় মনোজ্ঞ ব্যান্ড শো।

অনুষ্ঠানে চবি সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্যবৃন্দ, অনুষদের ডিনবৃন্দ, শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ, কলেজ পরিদর্শক, হলের প্রভোস্টবৃন্দ ও ওয়ার্ডেন, বিভাগীয় সভাপতি এবং ইনস্টিটিউট ও গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালকবৃন্দ, ছাত্র-ছাত্রী পরামর্শ ও নির্দেশনা’র পরিচালক, আইকিউএসি’র পরিচালক ও অতিরিক্ত পরিচালকবৃন্দ, আইসিটি সেলের পরিচালক ও সহকারী পরিচালকবৃন্দ, সহকারী প্রক্টরবৃন্দ, শিক্ষকবৃন্দ, অফিস প্রধানবৃন্দ, অফিসার সমিতি-কর্মচারী সমিতি-কর্মচারী ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ চবি শাখার নেতৃবৃন্দ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই সদস্যবৃন্দ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীবৃন্দ, বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যবৃন্দ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ এবং সুধীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

পছন্দের আরো পোস্ট