হুমকির মুখে সংযুক্ত ইবতেদায়ি মাদ্রাসা

এস.এম.মিনহাজ কাদির

হুমকির মুখে সংযুক্ত ইবতেদায়ি মাদ্রাসা। চলে যাচ্ছে সমস্যা সমাধানের শেষ সময়। এখনই ব্যবস্থা না নিলে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে সংযুক্ত ইবতেদায়ি মাদ্রাসাগুলো।

দেশের সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়নে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সংযুক্ত ইবতেদায়ি মাদ্রাসা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু এ দুটির মাঝে উপবৃত্তি ও অন্যান্য অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধার তারতম্য রয়ে গেছে। ফলে ইতিমধ্যেই শিক্ষার্থী সংকট তৈরি হয়েছে সংযুক্ত ইবতেদায়ি মাদ্রাসাগুলোতে।

যেখানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিক স্তরের প্রতি শিক্ষার্থীকে মাসিক ৭৫ টাকা, প্রাথমিক স্তরে এক সন্তান বিশিষ্ট পরিবারের মাসিক উপবৃত্তি ১৫০ টাকা, দুই সন্তান বিশিষ্ট পরিবারের মাসিক উপবৃত্তি ৩০০ টাকা, তিন সন্তান বিশিষ্ট পরিবারের মাসিক উপবৃত্তি ৪০০ টাকা এবং চার সন্তান বিশিষ্ট পরিবারের মাসিক উপবৃত্তি ৫০০ টাকা প্রদান করা হচ্ছে ( সূত্র: দৈনিক শিক্ষা, ৭ মে, ২০২০) সেখানে সংযুক্ত ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা কোন উপবৃত্তি পাচ্ছে না। ফলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবক উভয়ই মাদ্রাসাতে ভর্তির ব্যাপারে নিরুৎসাহিত হচ্ছে। এমনকি ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তি পাবার আশায় অন্যত্র পাড়ি জমাচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে সংযুক্ত ইবতেদায়ি মাদ্রাসাগুলো অচিরেই শিক্ষার্থী শূন্য হয়ে পড়বে।

দৈনিক শিক্ষার গত ৭ আগস্ট, ২০১৯ তারিখে প্রকাশিত ‘উপবৃত্তি পাবে সংযুক্ত ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষার্থীরাও’ প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে,’ইবতেদায়ি শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে উপবৃত্তি প্রকল্প’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। প্রকল্পটি ইতোমধ্যে এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে তিন বছর মেয়াদী প্রকল্পটি চলতি অর্থবছর থেকে শুরু হয়ে ২০২২ অর্থবছরের শেষ পর্যন্ত চলবে।’

Post MIddle

প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রকল্পটি ২০১৯ সালে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এখনো তা আলোর মুখ দেখেনি। উপরন্তু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতি শিক্ষার্থীকে জামা, জুতা ও ব্যাগ কেনার জন্য এক হাজার টাকা করে ‘অ্যালাউন্স’ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তা ২০২১ সালের বই বিতরণের সময়ে প্রদান করা হবে বলে বিভিন্ন মহল থেকে শুনা যাচ্ছে।

প্রকৃতপক্ষে যদি এই টাকাটি বই বিতরণ অর্থাৎ ভর্তির সময়ে দেয়া হয় তাহলে সিংহভাগ শিক্ষার্থী সরকারি প্রাথমিকে চলে যাবে এতে কোন সন্দেহ নেই। ফলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে যেমনি অতিরিক্ত শিক্ষার্থীর চাপ সামলাতে হবে তেমনি সংযুক্ত ইবতেদায়ি মাদ্রাসাগুলো হয়ে পড়বে শিক্ষার্থী শূন্য। আর যেহেতু সংযুক্ত ইবতেদায়ি শিক্ষার্থীরাই পরবর্তীতে দাখিল, আলিম,ফাযিল এবং কামিল মাদ্রাসায় ভর্তি হয় সেহেতু সকল স্তরের মাদ্রাসায় এর বিরূপ পড়বে।

এই উভয় সংকট থেকে শিক্ষাব্যবস্থাকে বাঁচাতে অনতিবিলম্বে ইবতেদায়ি শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি চালু করা প্রয়োজন। এছাড়া প্রাথমিকের ন্যায় সংযুক্ত ইবতেদায়ি শিক্ষার্থীদেরও জামা,জুতা ও ব্যাগ কেনার জন্য অর্থ বরাদ্দ করা প্রয়োজন।

অবস্থা বিচারে বলাই যায়, যদি ২০২১ সালের ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করার আগেই সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া না হয় তাহলে সংযুক্ত ইবতেদায়ি মাদ্রাসাগুলো দীর্ঘ মেয়াদি সংকটে পড়তে যাচ্ছে। যা সমাধানে হাতে আছে দুই মাসেরও কম সময়।

সুতরাং ইবতেদায়ি শিক্ষার এ সংকট দূর করতে দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

পছন্দের আরো পোস্ট