ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন

শিক্ষা ও গবেষণার গুণগত মান নিশ্চিত করার অঙ্গীকার গ্রহণের মধ্য দিয়ে আজ ১ জুলাই ২০২০ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন করা হয়। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে “শতবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় \ প্রসঙ্গ: আন্দোলন ও সংগ্রাম”। উল্লেখ্য, ১৯২১ সালের এই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সীমিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। কর্মসূচির মধ্যে ছিল জাতীয় সংগীত পরিবেশন, জাতীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় পতাকা উত্তোলন, বেলুন উড্ডয়ন ও ভার্চুয়াল আলোচনা সভা।

 

সকাল ১০টায় নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন প্রাঙ্গণে জাতীয় সংগীত পরিবেশন, জাতীয় পতাকা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পতাকা উত্তোলন এবং বেলুন উড্ডয়নের মাধ্যমে দিবসটির কর্মসূচি শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষ, প্রক্টর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং সীমিত সংখ্যক শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন। ডেপুটি রেজিস্ট্রার জনাব প্রবীর কুমার সরকার অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।

 

সকাল ১১টায় অধ্যাপক আব্দুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে ভার্চুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার শুরুতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শাহাদাৎবরণকারী, বিগত বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্যুবরণকারী শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং করোনা মহামারীতে চিকিৎসক, নার্স ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ নিহতদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে ১ মিনিট দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন করা হয়।

 

Post MIddle

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় “শতবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় \ প্রসঙ্গ: আন্দোলন ও সংগ্রাম” শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম। সভায় প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দীন, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দিন আহমদ, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে আজাদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আমিরুল ইসলামসহ তৃতীয় শ্রেণী কর্মচারী সমিতি, কারিগরি কর্মচারী সমিতি এবং ৪র্থ শ্রেণী কর্মচারী ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ যুক্ত হন।

 

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান তাঁর উদ্বোধনী ও ভার্চুয়াল আলোচনা সভার সমাপনী বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও শতবর্ষে পদার্পন উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শুভানুধ্যায়ীদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, এবার বিশ্ববিদ্যালয় দিবস এমন এক সময় উদ্যাপিত হচ্ছে যখন “মুজিববর্ষ” চলমান। বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উৎসব এবং মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব উদ্যাপনের জন্য আমরা প্রস্তুত হচ্ছি। কিন্তু ‘কোভিড ১৯’ উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এই মাহেন্দ্রক্ষণকে আমরা জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদ্যাপন করতে পারছি না। এই দু:সহ অবস্থা কেটে যাবে এবং অদূরভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমরা আনন্দঘন ও বর্ণাঢ্যভাবে সকল উৎসব উদ্যাপন করব বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

 

উপাচার্য আরও বলেন, গবেষণার সম্প্রসারণ ও শিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিত করাই হবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি উৎসবের অঙ্গীকার। এই অঙ্গীকার বাস্তবায়নে স্ব-স্ব অবস্থান থেকে কাজ করার জন্য তিনি শিক্ষক, প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রতি আহবান জানান। আমাদের গৌরব ও ঐতিহ্যের প্রতীক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে এবং এর উত্তরোত্তর গুণগত উৎকর্ষ সাধনের জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের সম্মিলিত ও আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন।

 

জাতীয় অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এদেশের সকল আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘জাতীয় ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, মহান স্বাধীনতা আন্দোলনসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এসব আন্দোলনে বিভিন্ন সময় অসংখ্য শিক্ষক-শিক্ষার্থী গ্রেফতার ও নির্যাতনের শিকার হন এবং আত্মত্যাগ করেন। দেশ ও জাতির প্রত্যাশা পূরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনন্য অবদান তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, শুধু জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় নয়, বরং দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এই বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। #

পছন্দের আরো পোস্ট