শিক্ষা চুরি

তখন ক্লাস ফাইভে পড়তাম।পরীক্ষায় কোন প্রশ্ন গুলি আসবে তা ঠিক করার জন্য পরীক্ষার আগে প্রথমে পাঠ্যবই গুলি সামনে নিয়ে বসতাম।বই হাতে নিয়ে প্রথমেই ধরে নিতাম, এ প্রশ্ন গুলি ছোট,এগুলি আসবে না করে বইয়ের ষাট ভাগ বাদ দিয়ে দিতাম। তারপর বসে যেতাম গত বছরের প্রশ্ন নিয়ে।রহস্যময় কারনে আগের বছরের প্রশ্ন ও কেনো জানি পরীক্ষায় আসতো না।ফলে সেগুলি ও বাদ ।

এভাবে বাদ দিতে দিতে শেষ অব্দি এসে বারো- তেরোটা প্রশ্নে। এমন যখন অবস্থা তখন শিক্ষকদের মধ্য থেকে এক – আধজন ত্রাণকর্তার আবির্ভাব হয়। তিনি আমাদের বলতেন – অযথা এত পড়বি কেন গাধারা?।নে ৯ টা প্রশ্ন দাগিয়ে দিচ্ছি, এগুলো পড়।পরীক্ষায় ৬ টা কমন ত পাবিই।স্যারের মুখে রহস্য ময় হাসি। আমরা রোমাঞ্চিত হয়ে উঠি।এত আত্ন বিশ্বাসের সংগে বলছেন কী করে স্যার?তবে কি বোর্ডের সাথে স্যারের কোনো প্রচ্ছন্ন?
আর এই প্রশ্ন গুলিই আমরা মুখস্ত করে এক্সাম হলে যেতাম।মুখস্ত করা আর নকল করার মধ্যে কোনো প্রার্থ্যক্য নেই। যেহেতু নকল বা মুখস্ত কোনোটাই ছাত্রের কাজ নয়।রবীন্দ্রনাথ একবার দু:খ করে বলেছিলেন ‘যে ছাত্র পকেটে করে নকল নিয়ে পরীক্ষার হলে ঢোকে, তাকে তোমরা খেদিয়ে দাও আর যে মগজের ভেতর বিদ্যা চুরি করে নিয়ে ঢোকে তাকে তোমরা শ্রেষ্ঠ ছাত্রের সম্মান দাও’ স্যারের উক্তিটি যথার্থ।এখন ও যথার্থ। এ কেমন শিক্ষাব্যাবস্থা?

তখনকার সময়ে স্কুলের স্যারদের কোনো প্রশ্ন করলে স্যাররা চটে যেতেন।এসব প্রশ্ন যেন আর করা না হয় তার পাকাপোক্ত ব্যাবস্থা করতেন। আমাদের স্কুল জীবনে একজন স্যার ছিলেন, তাকে প্রশ্ন করলেই তিনি জিজ্ঞেস করতেন বাড়ি কোথায়? যদি উত্তর হত ‘নোয়াখালী’ সংগে সংগে স্যার বলে উঠতেন  ‘অ,  এই জন্যেই’।এমন নাটকীয় ভঙ্গিতে তিনি কথা গুলি বলতেন যে,সারা ক্লাস ছেলেটাকে নিয়ে হো হো করে হাসতে থাকে।নোয়াখালী না বলে রাজশাহী বললে ও তিনি একই কাজ করতেন। এখন প্রশ্ন, এমন দমনমুলক পদ্ধতি অবলম্বনের কারন টা কি? কারন একটাই।প্রশ্নের উত্তর টা স্যারের জানা নেই. এভাবেই ছাত্রদের মনের কোনে গুজে থাকা প্রশ্ন গুলি অজানাই থেকে যাচ্ছে।এমন দমন মুলক পদ্ধতি অবলম্বন না করে যদি আমাদের শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষকগন পাঠদানে,ছাত্রদের প্রশ্নের উত্তরে পজিটিভ হতেন তাহলে স্কুল দেয়াল দিয়ে পালানো ছাত্রের সংখ্যার চেয়ে, দেয়াল দিয়ে টপকে  স্কুলে প্রবেশ করার ছাত্র সংখ্যা তুলনামুলক ভাবেই বেশীই হত।

যাই হোক স্কুল কলেজ জীবনের এই শিক্ষাব্যাবস্থাকে বুড়ো আংগুল দেখিয়ে ছাত্র ছাত্রীরা সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠে ভর্তি হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়। সেমিস্টার শুরুতে পড়াশুনায় সিরিয়াসনেস ব্যাপারটা লক্ষনীয়।প্রথম সেমিস্টার শুরু হয় লাইব্রেরীতে গ্রুপ স্টাডি দিয়ে।গ্রুপ স্টাডির পাশাপাশি লাইব্রেরীতে বসে থাকা সুন্দরী মেয়েদের দিকে তাকানো বালকের সংখ্যা ও নেহায়েত কম নয়। যাইহুক,একদিকে কঠিন প্রশ্নপত্র,অন্যদিকে বাংলা মিডিয়াম থেকে ইংলিশ মিডিয়ামে হঠাত চলে আসা শিক্ষার্থীদের মনে এক অজানা ভীতির জন্ম দেয়। তখন এদের মধ্যে ৪ টি দলের উদ্ভব হয়

১.একদল পড়াশুনায় অধিক আগ্রহী হয়ে উঠে।

Post MIddle

২.অন্যদল এই সেমিস্টার নয় পরের সেমিস্টারে এ রেসাল্টের ইতিহাস গড়ার স্বপ্ন নিয়ে প্রতি সেমিস্টার কাটিয়ে দেয়।কিন্তু সেই ইতিহাস টা ইতিহাস হয়েই থাকে,বাস্তবে পরিনত হয় না।

৩. আরেকদল রাজনীতি,আড্ডা,মেয়ে পটানোর মত বিষয়গুলি নিয়ে খুব পারদর্শী হয়ে উঠে।

৩.আরেক দল টোকেন ভিত্তিক হয়ে পড়ে,অনেকেই ডিজিটাল বাংলাদেশ নামের স্বার্থকতা রক্ষার্থে ৫০% কপি করা টোকেন নিয়ে এক্সাম হলে প্রবেশ করে।

পড়াশুনায় আগ্রহী ঔ ছেলেটা একদিন ঠিকি তার অবস্থান তৈরী করে নেয়। রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া ছেলেটি দলীয় কমিটিতে স্থান পেতে লেজুরভিত্তিক রাজনীতিতে ব্যাস্ত। কোন এক মন্ত্রনালয়ের উচ্চ পদে আসনে বসা টোকেন নির্ভর ছেলেটি হয়ত।ফাইলের ভাজে ভাজে কালো টাকার ছড়াছড়িতে ব্যাস্ত।যে,যখন,যে কাজ করে সে তার প্রতিফলন পাবেই।অভ্যাস মানুষের দাস। এটা কখনোই পুরোপুরি পরিবর্তন করা সম্ভব নয়

তবে স্ব ইচ্ছা,কাজের প্রতি আগ্রহ,সততা সেই অভ্যাসটুকু সামান্য হলে ও পরিবর্তন আনতে সম্ভব।

হাসান সাকিব।পুরকৌশল বিভাগ। ৫৯ তম ব্যাচ।স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়।

পছন্দের আরো পোস্ট