শেকৃবিতে চাষ হচ্ছে সাদা ভুট্টা

আমাদের দেশে খাদ্যাভ্যাসে চাল আর গমের প্রাধান্যই বেশি। এ চাল আর গমের ওপর চাপ কমাতে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সফলভাবে চাষ হচ্ছে সাদা ভুট্টা। বিগত তিন বছর যাবত শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জাফর উল্লাহ ভারত, চিন, দক্ষিন আফ্রিকা হতে সাদা ভুট্টার জাত এনে বাংলাদেশের আবহাওয়ায় সাদা ভুট্টা উৎপাদনের জন্য গবেষণা চালিয়েছেন।

কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে এবার সাফল্যজনকভাবে উৎপাদন করেছেন এই সাদা ভুট্টা। সাদা ভুট্টা খেতে সুস্বাদু, প্রোটিন সমৃদ্ধ। আটা হলুদ ভুট্টার চেয়ে মিহি হওয়ায় পৃথিবীর বহু দেশে সাদা ভুট্টা অন্যতম একটি প্রধান খাদ্য হিসেবে সমাদৃত। শুধু তাই নয়, এ সাদা ভুট্টা হতে এ পর্যন্ত ৩০ টিরও বেশি খাদ্য দ্রব্য উদ্ভাবন করা হয়েছে ।

খুব শীঘ্রই নতুন এই জাতটি অবমুক্ত করা হবে বলে আশাবাদী গবেষকরা। ঢাকা, বরিশাল, দিনাজপুর, নিলফামারি, বান্দরবান, রংপুর অঞ্চলে পরীক্ষামূলক আবাদের পর নতুন জাতটির ভালো ফলন পেয়েছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা।

Post MIddle

এ ব্যাপারে অধ্যাপক ড. মো. জাফর উল্লাহ বলেন, সারা বিশ্বে মানব খাদ্য হিসেবে যে ভুট্টার চাষাবাদ করা হয় তার দানার রং সাদা। এ ভুট্টার স্বাদ চাল ও গমের মাঝামাঝি। সাদা ভুট্টার আটা মিহি এবং চাল ও গম হতে যে সকল খাবার তৈরি করা হয়, সাদা ভুট্টার আটা হতেও সে সকল খাবার তৈরি করা য়ায়। গমের মেসিনে সাদা ভুট্ট্ার আটা ভাঙ্গানো যায়। বর্তমানে দেশে যে ভুট্টার চাষাবাদ করা হয় তা হলুদ রংরে। এ উৎপাদিত ভুট্টার প্রায় সবটুকুই পশু-পাখির খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

এই জাতটির প্রধান বৈশিষ্ট হলো প্রচলিত অন্য জাতগুলোর মতো এই ভুট্টা চাষে তিন বা চারটি সেচের প্রয়োজন হবেনা। একটি মাত্র সেচ দিয়ে একই রকম ফলন পাওয়া যাবে। এর ফলে কৃষকের উৎপাদন খরচ বহুলাংশে কমে যাবে। জলবায়ু পরিবর্তণের কারনে পানির লেয়ার নীচে নেমে যাওয়ার অসুবিধা ভোগ করতে হবেনা কৃষকদের। এছাড়া নতুন এই জাতটির অপর বৈশিষ্টটি হলো এটি উৎকৃস্টমানের প্রোটিন সমৃদ্ধ।

অধ্যাপক জাফর উল্লাহ আরও বলেন, দেশে বর্তমানে ধান আর গম হতে যে খাদ্য শস্য উৎপন্ন হয় তা প্রতি বছর যে হারে বাড়ে সে হার ২০৫০ সালের পর স্থিত জনসংখ্যার তুলনায় অনেক কম হবে বলে ধারনা করা হয়। কারণ ধান ও গম সি- থ্রি প্রজাতির হওয়ার এদের উৎপাদনশীলতা ভুট্টার তুলনায় কম। ভুট্টা একটি সি- ফোর প্রজাতি যার উৎপাদনশীলতা ধান ও গমের তুলনায় অনেক বেশী। তাছাড়া, প্রতি হেক্টরে ধানের ফলন ৫ আর গমের ফলন ৩ টন। আর ভুট্টার ফলন ৭ টনের উপরে। সে কারণে ২০৫০ সনের ধান আর গম হতে উৎপাদিত খাদ্য শস্য যথেষ্ঠ হবে না। এ জন্য ২০৫০ সালের পর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিৎ করতে হলে ভুট্টাকে আমাদের খাদ্য তালিকায় নিয়ে আসতে হবে।

পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে বর্তমানে তিন লাখ হেক্টর জমিতে ২২ লাখ টন হলুদ ভুট্টা উৎপাদিত হয়। হলুদ ভুট্টায় অধিক ক্যারোটিন থাকে। তাই উৎপাদিত ভুট্টার বেশির ভাগই মুরগি ও মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয় খামারগুলোতে। ভুট্টার এ ক্যারোটিন শরীরে অধিক পুষ্টি চাহিদা মেটালেও তা খাদ্যদ্রব্যের স্বাদ কমিয়ে দেয়। তাই, স্বাদপ্রিয় এ দেশের মানুষ ঝুঁকেছে ভাত ও গমের দিকে। স্বাদ বেশি হওয়ায়, সারা বিশ্বে মানুষের খাদ্য হিসেবে হলুদ ভুট্টার চেয়ে সাদা ভুট্টার চাহিদা বেশি। তাই পর্যাপ্ত জমিতে সাদা ভুট্টার আবাদ করা গেলে চাপ কমবে চাল ও গমের। এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট গবেষকরা।

পছন্দের আরো পোস্ট