ক্যারিয়ার গড়ার পাশাপাশি তরুণদের নিয়ে কাজ করতে চাই

ছোটবেলা থেকেই আল্লাহর অশেষ কৃপায় আমি পড়াশুনায় মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবেই সবার কাছে পরিচিত। তবে আমি শুধু পড়াশুনার মধ্যেই নিজেকে নিয়োজিত রাখিনি। পড়াশুনার পাশাপাশি সহশিক্ষামূলক এবং সৃজনশীল কাজে অংশগ্রহণ করতাম। আমি রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র ছিলাম। স্কুল পর্যায়ে কবিতা আবৃতি, রচনা প্রতিযোগিতা, উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতাম। অনেক ক্ষেত্রে সফলও হতাম। খেলাধুলা করতে খুব পছন্দ করতাম। স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার দৌড়ে সবসময় প্রথম হতাম।  তাছাড়া ক্রিকেট, কেরাম খেলায় ভাল পারদর্শী ছিলাম। পড়াশুনার ফাকে যতটুকু সময় পেতাম খেলাধুলা করে পার করতাম।  যখন নবম শ্রেণীতে পড়ি তখন বিতর্ক করার ঝোক মাথায় আসে। টি আই বি কর্তৃক আয়োজিত একটি বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে শুরু হয়  বিতর্কে  জগতে পদচারণা। আমাদের স্কুলে তখন কোন বিতর্কের সংগঠন ছিল না। তাই যখন আমি দশম শ্রেনীতে পড়ি তখন আমরা কয়েকজন নবীন বিতার্কিক একটি ডিবেটিং ক্লাব করার সিধান্ত নেই। সকলের প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠে “Stars Student Debating Club (SSDC)”।
স্কুল পর্যায়ে আমার সবচেয়ে বড় সাফল্য আসে “Marks Allrounder” নামক একটা রিয়েলিটি শো তে। শো টি এন টি ভি তে প্রচারিত হত।  ২০১০ সালে প্রথম এই শো টি শুরু হয় যার বিভাগীয় পর্যায়ের বাছায় পর্বে প্রথম স্থান এবং রিজিওনাল রাউন্ডে ( স্টেজ) ২য় স্থান অধিকার করি।

কলেজ পর্যায়ে “বিতর্ক প্রতিযোগিতায়” চ্যাম্পিয়ন এবং “জাতীয় বিজ্ঞান উৎসব বিতর্ক প্রতিযোগিতায়” রানার আপ হওয়ার সাফল্য অর্জন করি যা আমাকে একজন ভাল বিতার্কিক হওয়ার পথে অনেক খানি এগিয়ে দেয়।  বিতর্ক করার পাশাপাশি  হঠাত কুইজের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠি।  তারই ফলশ্রুতিতে বিটিভি তে প্রচারিত  ফেরদৌস বাপ্পীর উপস্থাপনায়  “কুইজ কুইজ ” নামক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করি। স্বপ্ন ছিল চ্যাম্পিয়ন হব কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনালেই আমাদের ইতি টানতে হয়।

ইচ্ছে ছিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার। আল্লাহর অশেষ কৃপায় চুয়েটে পুরকৌশল বিভাগে ভর্তি হওয়ার  সুযোগ পায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেও বিতর্ক করার ধারাবাহিকতা বজায় রাখি । আন্ত: বিভাগ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় রানার আপ হওয়ার গৌরব অর্জন করি। পরবর্তীতে কখনো বিতার্কিক, কখনো মেন্টর, কখনো আবার বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করি।

Post MIddle

যখন আমি ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী তখন লক্ষ্য করলাম আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যারিয়ার সম্পর্কিত কোন প্লাটফর্ম নেয় যেখানে প্রফেশনাল জগতে প্রয়োজনীয় জ্ঞানগুলোর চর্চা এবং নেতৃত্ব দেওয়ার গুণাবলী  অর্জন করা যায়। তাছাড়া আরো লক্ষ্য করলাম চুয়েটের কিছু শিক্ষার্থী নানা কারনে হতাশ। তখন চুয়েটের শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করি এবং আমার কয়েকজন বন্ধুর সহযোগিতায় “চুয়েট ক্যারিয়ার ক্লাব” গড়ে তুলি। এ ক্লাবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সুন্দরভাবে প্রেজেন্টেশন দেওয়া, কুইজিং স্কিল বাড়ানো, উচ্চ শিক্ষা নিয়ে আলোচনা করা, নেতৃত্ব দেওয়ার গুণাবলী অর্জন করা সহ আত্মবিশ্বাস অর্জন করার একটা প্লাটফর্ম পায়। শুধু তাই নয় প্রতি ২/৩ মাস অন্তর অন্তর আমরা প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিত্বদের নিয়ে ক্যারিয়ার আড্ডার আয়োজন করি যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধ ক্যারিয়ার গঠনের দিক নির্দেশনা খুঁজে পায়। বর্তমানে আমি “চুয়েট ক্যারিয়ার ক্লাবের” সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি প্রেজেন্টেশন প্রশিক্ষক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছি।

ভবিষ্যতে আমি আমার ক্যারিয়ার গড়ার পাশাপাশি তরুণদের নিয়ে কাজ করতে চাই। কারণ আমি বিশ্বাস করি তরুণরা ই পারে স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে।

মো: দেলোয়ার জাহান সোহাগ / পুরকৌশল বিভাগ (৪র্থ বর্ষ) / চুয়েট।

পছন্দের আরো পোস্ট