৮ দফা দাবিতে প্রগতিশীল গণসংগঠনসমূহের স্মারকলিপি পেশ

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তকে ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে লেখকদের লেখা বাদ দেওয়া, সাম্প্রদায়িকীকরণ, ভুল- বিকৃতি, নিম্নমানের কাগজ এবং পাঠ্যপুস্তকে দলীয় প্রচারের প্রতিবাদে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার প্রগতিশীল গণসংগঠন সমূহের উদ্যোগে ৮ দফা দাবিতে পূর্বঘোষিত শিক্ষামন্ত্রণালয় ঘেরাও ও স্মারকলিপি পেশ কর্মসূচী পালিত হয়েছে।

Post MIddle

বেলা ১২টায় শাহবাগ থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় অভিমুখে ঘেরাও কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিক্ষুব্ধ পদযাত্রার পূর্বে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে উদীচী’র সভাপতি ড. শফী উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন-এর সাধারণ সম্পাদক জিলানী শুভ’র সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, ভাস্কর রাশা, ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি শরিফুজ্জামান শরীফ, প্রগতি লেখক সংঘ’র সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত টিপু, যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাফিজ আদনান রিয়াদ, গার্মেন্ট শ্রমিক টিউসি’র আন্তর্জাতিক সম্পাদক মঞ্জুর মঈন, শ্রাবণ প্রকাশনীর প্রকাশক রবিন আহসানসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, সিপিবি’র কেন্দ্রীয় সদস্য আবদুল্লাহ আল ক্বাফি রতন, ক্ষেতমজুর সমিতির সাধারণ স¤পাদক আনোয়ার হোসেন রেজা, কৃষক সমিতির নেতা জাহিদ হোসেন খান, মানবেন্দ দেব, গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক ও সাবেক ছাত্রনেতা আকরামুল হক। বক্তব্যের পর ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি লাকী আক্তার সমাবেশে স্মারকলিপি পাঠ করেন।

বক্তৃতায় লাকী আক্তার বলেন, কোনো প্রকার আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্তের তোয়াক্কা না করে স¤পূর্ণ অগণতান্ত্রিকভাবে পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন আনা হয়েছে। শুধুমাত্র ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে লেখকের দেখা বাদ দেয়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে প্রতারণা।

বক্তৃতায় অন্যান্য নেতৃবৃন্দ বলেন, সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক উপায়ে হেফাজতে ইসলামের প্রেসক্রিপশনে স্বেচ্ছাপ্রণোদিতভাবে বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকে সাম্প্রদায়িকীকরণ ও প্রগতিশীল লেখকদের লেখা বাদ দেওয়া হয়েছে। মূল লেখা হতে বিকৃত গল্প-কবিতা, ভুলে ভরা নি¤œমানের কাগজে বই বিতরণ করে বুনিয়াদী স্তর থেকে শিক্ষা ধ্বংসের আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে। আগে যেখানে শিক্ষার্থীদের নৈতিক বিকাশের লক্ষ্যে পাঠ্যপুস্তকের মলাটের পেছনে নীতিবাক্য লেখা থাকত, সেখানে বইয়ের মলাটে জনগণের খরচে ব্যক্তি ও দলীয় প্রচার করা হচ্ছে।

সামগ্রিকভাবে প্রমাণ হচ্ছে যে মুক্তিযুদ্ধের গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সমতার চেতনার বিপরীতে শিক্ষার্থীদের মস্তিষ্কে ওলামালীগ ও হেফাজতে ইসলামের প্রতিক্রিয়াশীলতা এবং সরকার দলীয় প্রচারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের অপতৎপরতা চলছে। নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, সকলক্ষেত্রে বড় দুই রাজনেতিক দলের মধ্যে নির্বাচন তথা ক্ষমতা দখল নিয়ে বিরোধ দেখা গেলেও হেফাজতে ইসলাম, ওলামালীগের প্রেসক্রিপশনে পাঠ্যপুস্তকের সাম্প্রদায়িকীকরণের ক্ষেত্রে তারা অভিন্ন নীতিতে অটল। বার বার বিক্ষোভ প্রদর্শন এবং জবাবদিহিতার দাবি জানানো হলেও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড ও শিক্ষামন্ত্রণালয় নির্বিকার। বরঞ্চ জনগণের কষ্টের করের টাকার সাথে উপহাস করে বিকারবিহীন শিক্ষামন্ত্রী আঠা দিয়ে ভুল সংশোধনের কথা বলেছেন।

সমাবেশপরবর্তী বিক্ষুব্ধ পদযাত্রা শাহবাগ-টিএসসি হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে হাইকোর্টের সামনে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে। মিছিল পুলিশি বাধা অতিক্রম করে মন্ত্রণালয়ের সামনে ব্যারিকেড ভাঙ্গার পর আবারো পুলিশী বাধার সম্মুখীন হয়। প্রগতিশীল সংগঠনসমূহের পক্ষে ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি লাকী আক্তারের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের সাধারণ স¤পাদক মোখলেছুর রহমান সাগর, উদীচী’র সাধারণ সম্পাদক জামশেদ আনোয়ার তপন, যুব ইউনিয়নের ঢাকা মহানগরের সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন ও গণজাগরণ মঞ্চ সংগঠক জীবনানন্দ জয়ন্ত স্মারকলিপি জমা দিতে যান। শিক্ষামন্ত্রীর পক্ষে তাঁর পিএস ও এপিএস স্মারকলিপি গ্রহণ করেন।#

আরএইচ

পছন্দের আরো পোস্ট