শিক্ষার্থীরাই আমার সন্তান : ড.মোজাম্মেল হক

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অনুষদভূক্ত গুরুত্বপূর্ন একটি বিভাগ ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টি টেকনোলজি ।সংক্ষেপে বিভাগটি এফইটি নামেও পরিচিত।২০০৪ সালে বিভাগটির যাত্রা শুরু হয়।এ বছর পদযাত্রার এক যুগ পূর্ণ করল বাংলাদেশের চা প্রযুক্তি নিয়ে ডিগ্রি প্রধানকারী একমাত্র বিভাগটি।বিভাগটির বর্তমান প্রধান প্রফেসর ড.মোজাম্মেল হকের সাথে যুগপূর্তি এবং বিভাগ সংশ্লিষ্ট নানা বিষয় নিয়ে কথা হয় আমাদের প্রতি নিধি তানজিল নাফির।বেশ খোলামেলা সেই আলাপে উঠে এসেছে অনেক খুঁটিনাটি ব্যাপার।ড.মোজ়াম্মেল হক বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা শেষ করে জাপানের নামকরা প্রতিষ্টান থেকে পিএইচডি শেষে যোগ দেন ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টি টেকনোলজি বিভাগে।দেশের সুশীল সমাজে বেশ পরিচিত গুণী এই ব্যক্তি বুদ্ধিজীবী মহলেও সমাদৃত।তিনি শাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সাবেক নির্বাচিত সেক্রেটারী এবং বর্তমান সহ-সভাপতি। আলাপচারিতার চুম্বক কিছু অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল :

Post MIddle

স্যার, প্রতিষ্টার ১২ বছরে এসে এফইটি কতটুকু সফল বলে আপনার মনে হচ্ছে ?
-বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও অন্যান্য বিভাগের সাথে তুলনা করলে এফইটি অনেক এগিয়েছে। প্রতিষ্টার এত অল্প সময়ে এরকম পথচলা অনেক কম বিভাগের ক্ষেত্রেই সম্ভব হয়।যদি সীমাবদ্ধতাগুলো দূর করা যায় তবে অদূর ভবিষ্যতে বিভাগটি খাদ্য এবং চা শিল্প উন্নয়নে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করবে।আশা করি একসময় এফইটি একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ বিভাগে পরিণত হবে।নিজস্ব একাডেমিক ভবনের পাশাপাশি সমৃদ্ধ ল্যাব সুবিধাও থাকবে।

সীমাবদ্ধতা বলতে আপনি কি বুঝাচ্ছেন ?
-ক্লাশরুম সংকট,ল্যাব ফ্যাসিলিটির অপর্যাপ্ততা,শিক্ষা উপকরণ পরিমাণ মত না থাকাকেই সীমাবদ্ধতা বলেছি।আপনি দেখে থাকবেন হয়তবা এসব সমস্যা সত্ত্বেও আমাদের ছেলে মেয়েরা স্ব স্ব ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখেই চলছে।এ পর্যন্ত ৭ টি ব্যাচ বের হয়েছে।আমার জানামতে কেউ বেকার নেই।শিক্ষার্থীদের নিরলস প্রচেষ্টা ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আন্তরিক পরিশ্রম সমস্যাগুলোর বিকল্প সমাধান হিসাবে কাজ করছে।

শিক্ষার্থীদের অনেকেই অভিযোগ করেন রেজাল্ট নিয়ে দীর্ঘসূত্রিতার ব্যাপারে
-রেজাল্ট প্রকাশ নিয়ে আমাদের বিভাগের কোন কিছু করার নেই।বিভিন্ন কারন রয়েছে তারমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় রেজাল্ট প্রকাশের নিয়ম এ ক্ষেত্রে কিছুটা দায়ী ।এছাড়া নন-মেজর কোর্সের ফলাফল প্রকাশের বিলম্বতা দীর্ঘসূত্রিতার প্রধান কারন হিসেবে বিবেচিত হয়।বিভাগ কেন্দ্রীক সকল কোর্সের ফলাফল দ্রুত তৈরি করার ব্যাপারে আমাদের শতভাগ প্রচেষ্টার কোন ঘাটতি নেই।

সেমিনার লাইব্রেরী থেকে বই নিতে পারেন না শিক্ষার্থীরা। এটা কেন হচ্ছে?
-এ সম্পর্কে আমি খুঁজ নিব। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর অধিকার রয়েছে বই নেয়ার।

বিভাগের একাডেমিক বহির্ভূত কর্মকান্ডের ব্যাপারে কিছু বলুন
-খেলাধুলায় এফইটি পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি পরিচিত নাম।বাস্কেটবল,হ্যান্ডবল,ফুটবল,ব্যাডমিন্টনে প্রতিবছর আন্তঃবিভাগ প্রতিযোগীতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়া সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে।এছাড়া আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় কনটেস্টে গত দুবছর ধরে ব্যাডমিন্টন ও ক্যারামে ভালো অবস্থান তৈরি করেছে যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম দেশের গন্ডি পেড়িয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌছে দিয়েছে।

গণিত/পদার্থ/রসায়ন প্রভৃতি অলিম্পিয়াডের মত ফুড অলিম্পিয়াড করার কোন পরিকল্পনা কি আছে?
-অবশ্যই আছে এবং আমরা এটা করব।ফুড অলিম্পি্যাডের সাথে টি অ্লিম্পিয়াড করার পূর্ণ পরিকল্পন্না আছে।ধীরে ধীরে এগুলো বাস্তবায়ন হবে।

বিভাগের নিজস্ব একটি চা বাগান রয়েছে।চা বাগানের উন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগীতা কেমন পাচ্ছেন?
-উনারা আমাদের এ ব্যাপারে যথেষ্ট সহযোগীতা করছেন।এ পর্যন্ত চা বাগানের উন্নয়ন কাজ বাবদ মোট দুইধাপে প্রায় ৮ লক্ষ টাকা অনুদান দিয়েছেন।তাছাড়া মুজতবা আলী আবাসিক ছাত্র হলের পাশে চা বাগানের জন্য জায়গা বরাদ্দ করেছেন।সেখানে পুরোদমে ছাত্ররা ব্যবহারিক কাজের মাধ্যমে হাতে কলমে চা সম্পর্কে বিস্তর শিক্ষা লাভ করতে পারছে।একজন পরিচর্যা কর্মী সার্বক্ষণিক কাজ করছে সেখানে।

যেহেতু এফইটি সারাদেশের মধ্যে ব্যতিক্রমধর্মী বিভাগ তাই এর নবীন বরণে আগামীবছর থেকে ব্যতিক্রমতার কোন ছাপ থাকবে কিনা?
-ইচ্ছা আছে।সবার সাথে আলাপ আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।কোন চা বাগানে বড় পরিসরে করার পরিকল্পনা রয়েছে।আগামী নবীন বরণ জাকঁজমক করতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা থাকবে।

এক যুগ পূর্তির অনুষ্টান সম্পর্কে জানতে চাই
-২০১৭ সালের ২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারী দুইদিন ব্যাপী অনুষ্টানসূচী ইতিমধ্যে প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে ঘোষনা করা হয়েছে।দায়িত্ব আলাদা করে বন্টন করে দেয়া হয়েছে বিভিন্ন কমিটি ও সাব কমিটি গঠনের মাধ্যমে।আশা করি সুন্দর একটি অনুষ্টান আয়োজনের মধ্যে দিয়ে সবাইকে চমকে দিতে পারবে এফইটি পরিবার।

শিক্ষার্থীদের নিয়ে আপনার কি কিছু বলার আছে?
-আমি সবসসময় তারুণ্যকে লালন করি।বিশ্বাস করি তরুণরাই একটি সুন্দর সমাজ গঠনের পূর্ব শর্ত।এজন্য আমি তরুণদের অগ্রাধিকার দেই সকল কাজে।বিদেশে ভালো সুযোগ পেয়েও দেশ মাতৃকার টানে ছুটে আসি শাবির সবুজে ঘেরা ক্যাম্পাসে।উদ্দেশ্যে একটাই এবং তা হল দেশের জন্য কিছু করব।তরুণদের নিয়েই সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।আমাদের ডিপার্টমেন্টের সোসাইটিকে ডাইনামিক সোসাইটিতে রুপান্ত্র করার রুপরেখা নিয়ে কাজ করছি।আশা করি এই সোসাইটি থেকেই তৈরি হবে মেধাবী নেতৃত্ব।আমার বিভাগের কয়েকজন তরুণ মিলে ইতিমধ্যেই একটি বিতর্ক ক্লাব তৈরির উদ্যেগ নিয়েছে।আমার স্বপ্ন পূরণে এইসব তরুণরাই পাথেয় হবে।

আপনার শৈশব কৈশোর এবং সফলতার কিছু অংশ পাঠকদের জন্য বলুন
-কিশোরগঞ্জে জন্ম গ্রহন করে নিজ উদ্যেগেই পড়ালেখা করেছি বাবা-মা সহযোগীতা করেছেন কিন্তু নিজের আগ্রহ ও একাগ্রতায় আজকের বর্তমান অবস্থান তৈরি হয়েছে। জেলাশহর কিশোরগঞ্জ আগে ততটা উন্নত ছিলনা তবুও চেষ্টা করে গেছি।উচ্চ শিক্ষার জন্য বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই।সেখানে পড়ার সময়েই যুক্ত হই বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে। নিজের দায়বদ্ধতা থেকেই কাজ করতাম।কাউকে দেখানোর জন্য বা নিজ স্বার্থে যেকোন প্রকার কাজ থেকে বিরত থাকতাম।আগেই বলেছি বিদেশে অনেক ভালো সুযোগ পেয়েও দেশে চলে এসেছি। আমি এদেশের সন্তান।এ দেশের জন্য কাজ করতে চাই। আমার দুই সন্তানকেও সেভাবে গড়ে তুলছি।

যেকোন কাজে আপনাকে শিক্ষার্থীরা কাছে পায়।আপনার সম্পর্কে অনেকে বলে থাকে ‘দ্যা মোস্ট ফ্রেন্ডলি টিচার’।কেউ কেউ আবার মাটির মানুষ বলে…………………………………………
-দেখুন কে কি বলল তাতে আমি কর্ণপাত করিনা। সবসময় শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার চেষ্টা করি।তাদের সহযোগীতা করতে পারলে ভালো লাগে।বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা শিক্ষকরাই তাদের অভিভাবক।আমরা তাদের বিপদে না দাঁড়ালে ওরাযাবে কোথায়। ওরা আমাদের সম্মান করে। ক্লাশের বাইরে আমি ওদের কারো বড় ভাই আবার কারো বাবার মত।ওরা যেমন আমাদের সম্মান করে আমরাও তাদের স্নেহ করি। এই রকম সম্পর্ক সৃষ্টি হলেই কেবল বলা যাবে আদর্শ শিক্ষক আমরা।সব শিক্ষকের ফ্রেন্ডলি হওয়া উচিত। তবে শিক্ষার্থীদের ‘ফ্রেন্ড’ এবং ‘ফ্রেন্ডলি’ এই দুই শব্দের পার্থক্য বুঝা উচিত।

 কথোপকোথন শেষে যখন বের হচ্ছিলাম তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা সম্পর্কে ধারণাই পুরোপুরি পালটে গেল।হয়তবা ড.মোজাম্মেল হক স্যারদের কারনে এখনো সম্মানে মাথা নিচু হয়ে যায় শিক্ষকদের দেখলে। মনে পড়ে গেল শিক্ষার্থীদের জন্য পাক সেনাদের হাতে শহীদ হওয়া স্যার সামসুজ্জোহার কথা। এ যেন আমি জীবন্ত জোহা স্যারের সাথে কথা বলছিলাম ! ও হ্যাঁ আরেকটা কথা জানিয়ে রাখি আপনাদের । সব শিক্ষার্থীর জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতেও ভূল করেন না শিক্ষার্থীদের প্রিয় এই অভিভাবক।ফেসবুকের মাধ্যমে টাইমলাইনে পৌছে যায় স্যারের শুভকামনা।#

পছন্দের আরো পোস্ট