নতুন নিয়মে শিক্ষক নিবন্ধন ও নিয়োগ শুরু হচ্ছে

NTCBনতুন নিয়মে শিক্ষক নিবন্ধন ও নিয়োগ শুরু হচ্ছে। বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদরাসায় শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে এখন থেকে নতুন এ পদ্ধতি ও নীতিমালার আলোকে। ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে প্রণীত মেধাতালিকা থেকে নির্বাচিত শিক্ষকদেরই নিয়োগ করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের শিক্ষকচাহিদা আগেই পাঠাতে হবে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) কাছে। সেখান থেকে নির্বাচিত বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের তালিকা পাঠানো হবে প্রতিষ্ঠানে। সে তালিকা থেকেই শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং কমিটি এখন শুধু ওই শিক্ষকের নিয়োগপত্র ইস্যু করবেন মাত্র।

 

ধারণা করা হচ্ছে, এতে যোগ্য ও মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিত হবে এবং বহুল আলোচিত নিয়োগবাণিজ্য রোধ করা সম্ভব হবে। নতুন পদ্ধতিতে শিক্ষক নিয়োগ সম্পর্কে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, উপযুক্ত, দক্ষ ও যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার লক্ষ্যেই এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। অনলাইনে শিক্ষক নিয়োগ দিলে স্বচ্ছতা থাকে। এ ক্ষেত্রে ত্রুটি থাকার সুযোগ নেই। যোগ্য প্রার্থী বাছাই করে মেধার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে। আগামী ৬ মে স্কুল এবং ১২ মে কলেজ পর্যায়ের শিক্ষক নিবন্ধনের যে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে তা নতুন নিয়মে অনুষ্ঠিত হবে।

 

এ ছাড়া নতুন নিয়মে শিক্ষক নিয়োগের জন্য বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে এনটিআরসিএর ওয়েবসাইটে (www.ntrca.gov.bd) রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে বলেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আগামী ৭ মের মধ্যে সব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এ রেজিস্ট্রেশন সস্পন্ন করতে হবে অন্যথায় তারা নতুন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হবে না। অনিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হলে তারা এমপিওভুক্ত (মান্থলি পে-অর্ডার বা বেতনের সরকারি অংশ) হওয়ার জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবে না। তারা এ জন্য আবেদনও করতে পারবেন না। নিবন্ধন পরীক্ষার নতুন নিয়ম সম্পর্কে এনটিআরসিএ সূত্রে বলা হয়েছে, নতুন পরীক্ষাপদ্ধতি হবে অনেকটাই পাবলিক সার্ভিস কমিশন পরীক্ষার আদলে। প্রথমে বিষয়ভিত্তিক প্রার্থীদের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে উত্তীর্ণদের আবারো লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। সেখানে উত্তীর্ণদের চূড়ান্তভাবে বিভাগীয় জেলা ও উপজেলা কোটার জন্য মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় পৃথকভাবে প্রার্থীকে কমপক্ষে ৪০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে। তবে কোনো প্রার্থী লিখিত ও মৌখিক নিবন্ধন পরীক্ষায় পৃথকভাবে কমপক্ষে ৪০ শতাংশ নম্বর না পেলে মেধাতালিকায় অন্তর্ভুক্তির যোগ্য হবেন না।

 

Post MIddle

শিক্ষকনিয়োগে নতুন পদ্ধতি সম্পর্কে এনটিআরসিএ সূত্রে বলা হয়েছে, নতুন নিয়মে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বছরভিত্তিক শূন্য পদের সংখ্যা নিরূপণ, শূন্য পদের সংখ্যা অনুযায়ী লিখিত নিবন্ধন পরীক্ষার পর নির্ধারিত নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে উপজেলা, জেলা ও জাতীয়ভিত্তিক মেধাতালিকা করবে। এরপর মেধাক্রম ও চাহিদা অনুযায়ী প্রার্থীদের নিয়োগে সুপারিশ করবে। পরিচালনা কমিটি শুধু যোগদানপত্র দেবে। নতুন নিয়োগপদ্ধতি সম্পর্কে এনটিআরসিএ সূত্রে আরো বলা হয়েছে, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পরবর্তী পঞ্জিকা বছরে তার প্রতিষ্ঠানের জন্য শিক্ষকদের নিয়োগযোগ্য পদের একটি চাহিদাপত্র উপজেলা বা থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে পাঠাবেন। উপজেলা শিক্ষা অফিসার প্রাপ্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চাহিদা একীভূত করে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে একটি সমন্বিত চাহিদাপত্র জেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে প্রেরণ করবেন। জেলা শিক্ষা অফিসার ৩০ নভেম্বরের মধ্যে একটি সঙ্কলিত বা সমন্বিত চাহিদাপত্র এনটিআরসিএতে পাঠাবে।

 

অপর দিকে, এনটিআরসিএ প্রতি বছর প্রার্থী বাছাইসংক্রান্ত পরীক্ষা গ্রহণ করে চাহিদা অনুযায়ী পদ/বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের জাতীয়, বিভাগ, জেলা, উপজেলা বা থানাওয়ারি মেধাক্রম প্রণয়ন করে ফলাফল ঘোষণা করবে। এই মেধাতালিকা থেকেই শিক্ষকদের নিয়োগ দিতে হবে। এর বাইরে শিক্ষক নিয়োগ করার ক্ষমতাও থাকবে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বা স্কুল ম্যানেজিং বা গভর্নিং কমিটির। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে প্রায় ২৪ হাজার বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুল, সাড়ে তিন হাজার কলেজ ও সাড়ে ৯ হাজার মাদরাসা রয়েছে। আগের নিয়মে এসব প্রতিষ্ঠানে পরিচালনা কমিটি বা ম্যানেজিং অথবা গভর্নিং কমিটি নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের যে কাউকে নিয়োগ দিতে পারতেন। এতে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ ছিল।

 

২০০৫ সালে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হওয়ার ক্ষেত্রে নিবন্ধন পরীক্ষা চালু হয়। এ পর্যন্ত ১২ বার বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা গ্রহণ করেছে এনটিআরসিএ। এসব নিবন্ধন পরীক্ষায় প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ প্রার্থী পাস করেছেন। যারা নিয়োগের অপেক্ষায় রয়েছেন। নতুন নিয়ম চালুর পরিপ্রেক্ষিতে এ সাড়ে ৫ লাখ নিবন্ধিত শিক্ষক পদের প্রত্যাশীদের মধ্যে হতাশা নেমে এসেছে। যদিও তাদের মেধাতালিকা করা হবে আশ্বাস দেয়া হয়েছে আগে নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের। তবুও এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেক নিবন্ধিত শিক্ষক পদপ্রত্যাশী।

পছন্দের আরো পোস্ট