শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নেওয়ার স্বপ্ন নিশানের
শৈশবের স্বপ্নগুলোকে মনে লালন করতে করতে সফলতাকে হাতের মুঠোয় পাওয়ার প্রবল আকাঙ্খা জেগে ওঠে। আর তা হলো, জ্ঞানের পেছনে ছুটে সফলতার দারপ্রান্তে পৌছানোর ইচ্ছা। জ্ঞানকে হাতিয়ার হিসেবে রেখে, জ্ঞানের সাগরে নিজেকে নিমজ্জিত রেখে সফলতার সর্বোচ্চ শিখরে পৌছানোর ইচ্ছা।
স্বপ্ন গুলো এখন শুধু বাস্তবায়নের অপেক্ষায়। হয়তো আর কিছুদূর গেলেই দেখা মিলবে সেই চাঁদের পাহাড়ের। সেই কাঙ্খিত গন্তব্য।
আর দশটা সাধারণ ছেলের মতই ছোট বেলায় ইচ্ছা পোষণ করতেন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক হওয়ার। এখন সে ইচ্ছা নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে। লক্ষ্য স্থির হয়েছে একটি নির্দিষ্ট গন্তব্যের। সতর্কতার সাথে এখন সেই গন্তব্যের দিকে এগোতে হবে। আদর্শ মানুষ হতে হবে।
এমনই স্বপ্ন দেখেন আলি আহমেদ নিশান। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুরের ইমামনগর গ্রামে তার দূরন্ত শৈশব কেটেছে। একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হিসেবে স্বপ্ন দেখেন ভাল কিছু করার। বাবা মার আদর ও শাসনে বেড়ে ওঠা নিশান পড়াশুনার প্রতি ছোট থেকেই খুব মনোযোগী। পড়াশুনার পাশাপাশি খেলাধুলা করতে ও বই পড়তে খুব ভালবাসেন।
পড়েছেন নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিমচন্দ্র প্রমুখ এর বই। এছাড়াও সমসাময়িক লেখক হুমায়ুন আহমেদ ও ড. জাফর ইকবালের প্রতিও রয়েছে তার প্রবল অনুরাগ।
নিশান পঞ্চম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে ও অষ্টম শ্রেণিতে সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পেয়ে নিজের মেধার পরিচয় তুলে ধরেন। রহনপুর এ বি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ ৫ ও রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল এন্ড কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
এছাড়াও অষ্টম শ্রেণিতে থাকাকালীন সময়ে ডাচ-বাংলা ব্যাংক প্রথম আলো গণিত উৎসব ২০০৯ এ নিশান চ্যাম্পিয়ন হন। এরপর স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার প্রবল আগ্রহ জেগে ওঠে তার। বাবা মায়ের ও শুভাকাঙ্খীদের অনুপ্রেরণায় এবং নিজের চেষ্টায় মেধাবী এই শিক্ষার্থী তার স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান। এরপর আবার মিলেছে পছন্দের সাবজেক্ট। বর্তমানে পড়ছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রথম বর্ষে।
পছন্দের বিষয় পড়ার পাশাপাশি তিনি চেষ্টা করেন আরও নানাভাবে জ্ঞান চর্চা করার। লক্ষ্য স্থির করেছেন শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নেওয়ার।
আলি আহমেদ নিশান জানান, পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পেরেছি। আবার সেই সাথে পছন্দের বিষয়ও পেয়েছি। নতুন পরিসরে পা দিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিদিন ক্লাস শেষে আজ এখানে কাল ওখানে বসে বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আড্ডা, সব মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন অনেক সুন্দর কাটছে।
তিনি মনে করেন একাডেমিক পড়াশুনার পাশাপাশি জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করতে বই পড়া, সকলের সাথে আড্ডা দেওয়া, ঘুরতে যাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। শিক্ষকতা পেশা খুব ভাল লাগে তবে তার আগে একজন আদর্শ একজন মানুষ হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন নিশান।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া আলি আহমেদ নিশান গান শুনতে ভালবাসেন। সেই সাথে নিজে কবিতা ও গল্প লিখতেও ভালবাসেন। ভাল লাগার জায়গা থেকেই তিনি লেখালেখি করেন। চলচ্চিত্র ও সাংবাদিকতা বিষয়ে কৌতুহল আছে বলে বর্তমানে তিনি যুক্ত আছেন চলচ্চিত্র বিষয়ক সংগঠন ‘ম্যাজিক লন্ঠন’ ও সাংবাদিকতা বিষয়ক সংগঠন ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার্স ইউনিটি’ এর সাথে।
স্বপ্নগুলোকে বাস্তবে রূপ দেওয়া, ইচ্ছা পুরণ করা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র। জীবনের লক্ষ্য স্থির করতে সহযোগীতা করেছেন যাঁরা, স্বপ্নকে ডানা দিয়ে উড়তে শিখিয়েছেন যাঁরা তাদের কৃতার্থে প্রাণপণ চেষ্টা করে গন্তব্যে পৌছাতে চান আলি আহমেদ নিশান। মা বাবার কষ্টগুলোকে তার সেরা সাফল্যের দ্বারা একটু লাঘব করতে আপন গতিতে এগিয়ে চলেছেন তিনি।##
ইসমাত জাহান জিনিয়া । রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়