প্রিয় শৈশব

বিকেল নেমে এলেই মনে পড়ে যায় গ্রামের সেই মেয়েটির কথা, যে আমার সাথে ছায়ার মত মিশে থাকতো সারাবেলা। যে কিশোরী মেয়েটি তাঁর মেঘকালো লম্বা চুলে দু’বেণী দুলিয়ে পুকুরের স্বচ্ছ জলে পা ডুবিয়ে আনমনে কল্পনায় মাছেদের সাথে সাঁতার কাটার স্বপ্নে বিভোর থাকতো।

যে মেয়েটি বিকেল বেলা তাঁদের বাড়ীর দক্ষিণ পাড়ে একা বসে নীড়ে ফিরে যাওয়া পাখীদের গুণে গুণে রাখতো এবং মনে মনে পাখীর মত উড়বার ইচ্ছে পোষণ করতো। যে মেয়েটি বিকেলের ঘরে ফিরে যাওয়া সূর্যের সাথে খেলায় মেলায় খুনসুটিতে মনোমুগ্ধকর সময় কাটাতো এবং ডুবে যাওয়া সূর্যের দিকে তাকিয়ে স্বপ্ন দেখতো সে একদিন সূর্যরংগা জামদানী শাড়ী পরে, চোখে কাজল মেখে প্রিয় হাতটি ধরে বেড়াতে যাবে অনেকদূরের প্রিয় মাঠে নৌকায় চড়ে……..।

ইট কাঠের এই শহরে দালানকোঠা পেরিয়ে মায়াবী সূর্যের দেখা পাওয়া দুষ্কর, তবুও বিকেল নেমে এলেই গ্রামের সেই মেয়েটির কথা আমার খুব মনে পড়ে যায়। যে মেয়েটি আকাশের বুকে উড়ে যাওয়া মেঘেদের ভাঁজে ভাঁজে কত রঙিন ছবি এঁকে রেখেছিল রংধুনুর সাত রংগে……।

Post MIddle

এই শহরে সন্ধ্যা নেমে এলেই রুটিন মাপিক নিয়নবাতি গুলো যখন একে একে জ্বলে উঠে তখুনি আমার বুকের ভেতর জ্বলে উঠে শৈশবের কেরোসিনের কুপি আর মনের ক্যানভাসে ভেসে উঠে গ্রামের সেই মেয়েটির কথা।

যে মেয়েটি সন্ধ্যাবেলায় তাঁর আঙিনায় সবুজ ঘাসেদের সাথে মায়ার খেলা খেলতো, লজ্জাবতীদের ছুঁয়ে দিয়ে হাঁসি আনন্দে ভেংগে পড়তো তাঁদের নুয়ে পড়া দেখে। সারা বিকেলের দৌড়ঝাঁপ শেষে গ্রামের ক্লান্ত সে মেয়েটি হারিকেনের আলোয় পড়ার টেবিলে বসতে না বসতেই রাজ্যের সব ঘুম নেমে আসতো তাঁর দু’চোখ জুড়ে।

গৃহ শিক্ষকের মার এবং মায়ের বকুনির ভয়ে বিজ্ঞান বই সামনে রেখে গলা ফাটিয়ে কিছু সময় মুখোস্থ বাংলা কবিতা পড়েই মেয়েটি তাঁর মায়ের বুকের ওমে ভাই-বোনদের মাঝখানে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে যেত।

পছন্দের আরো পোস্ট