হাঙ্গেরিয়ান সরকারি স্কলারশিপ

সানজীদা মুক্তা

স্কলারশিপের নাম ‘স্টাইপেন্ডিয়াম হাঙ্গেরিকাম স্কলারশিপ’। এটি মূলত হাঙ্গেরিয়ান সরকারি স্কলারশিপ। এর বাছাই-প্রক্রিয়া বাংলাদেশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে হয়ে থাকে।

প্রতিবছর জানুয়ারি অথবা ফেব্রুয়ারির দিকে বাংলাদেশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এর সার্কুলার প্রকাশ করা হয়। তখন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ও হাঙ্গেরিয়ান সরকারি ওয়েবসাইটে স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে হয়।

এরপর সব ডকুমেন্টের ফটোকপি বাংলাদেশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে হয় এবং প্রাথমিক সিলেকশনের পর হাঙ্গেরিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এন্ট্রান্স এক্সাম ও ইন্টারভিউয়ে অংশগ্রহণ করতে হয়। পরে ফাইনাল সিলেকশনের মাধ্যমে স্কলারশিপ প্রাপ্তদের তালিকা প্রকাশ করা হয়। আগামী বছর বাংলাদেশ থেকে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি মিলিয়ে ১৩০ জনকে এই স্কলারশিপ দেওয়া হবে।

স্কলারশিপের আবেদন-প্রক্রিয়া

আইইএলটিসে ন্যূনতম স্কোর ৬.৫ থাকতে হবে। আমি যেহেতু পিএইচডিতে আবেদন করেছিলাম, তাই আমার গবেষণার কিছু পূর্ব অভিজ্ঞতা এখানে কাজে দিয়েছে। আর পিএইচডিতে আবেদন করলে স্কলারশিপ অ্যাপ্লিকেশনের সময় হাঙ্গেরিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় এবং যার ত্বত্তাবধানে পিএইচডি করবেন, সেই সুপারভাইজার থেকে একটি অ্যাকসেপ্টেন্স এবং প্রি-অ্যাডমিশন লেটার নিতে হবে। এ ছাড়া আমার আগের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছ থেকে রিকমেন্ডেশন লেটার নিতে হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে আরেকটি জরুরি ডকুমেন্টস ছিল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট।

স্কলারশিপ পাওয়ার ক্ষেত্রে কোন বিষয়টি জরুরি?

স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য সম্পূর্ণ কোয়ালিটিফুল একাডেমিক প্রোফাইল অত্যন্ত জরুরি। মাস্টার্স ও পিএইচডির ক্ষেত্রে গবেষণায় পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। স্কলারশিপ আবেদনের সময়ে একটি গোছানো ও ভালোমানের পড়াশোনার পরিকল্পনা লিখতে হবে। যে বিষয়ে পড়তে আগ্রহী, সেই বিষয়ে ভালো দখল থাকতে হবে। আমার স্কলারশিপ পাওয়ার ক্ষেত্রে ভালো একাডেমিক রেজাল্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল। এ ছাড়া ইংরেজিতে নিজের আয়ত্ত বাড়াতে হবে। কেননা ইন্টারভিউয়ে তারা ইংরেজি বলার দক্ষতাও যাচাই করে থাকে।

Post MIddle

রেজাল্ট খারাপ হলে কি স্কলারশিপ পাওয়া সম্ভব?

অনেকেই বলে থাকে রেজাল্ট খারাপ হলে স্কলারশিপ পাওয়া সম্ভব না। কথাটা অনেকাংশে ভুল, আবার সত্য। প্রথমত, স্কলারশিপের ক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা রাখে প্রাতিষ্ঠানিক ফলাফল। এ ক্ষেত্রে ভালো ফলাফল অর্জনকারীরা এগিয়ে থাকবেন। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক ফলাফল খারাপ হলে যে স্কলারশিপ পাবেন না, এটাও ভিত্তিহীন। ফলাফল খারাপ কিন্তু প্রার্থীর গবেষণার অভিজ্ঞতা, সহশিক্ষাক্রমিক কার্যক্রম, আইইএলটিএস স্কোর, পড়াশোনার পরিকল্পনা বেশ ভালো এবং মানসম্পন্ন হয়, তাহলে অবশ্যই কম সিজিপিএ নিয়েও স্কলারশিপ পাওয়া সম্ভব।

পঠিত বিষয়ে ক্যারিয়ার কী?

আমি বর্তমানে হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে অবস্থিত এতভস্ত লর‍্যান্ড (Eotvos Lorand) বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব হিউম্যানিটির ‘মডার্ন ফিলোসফি’ ডিপার্টমেন্টে পিএইচডিতে গবেষণারত আছি। এটি হাঙ্গেরির বিশ্ববিদ্যলয়গুলোর মধ্যে অন্যতম স্বনামধন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়। আমার পঠিত বিষয় সম্পূর্ণ তাত্ত্বিক এবং গবেষণাধর্মী। তাই এ বিষয়ের ওপর পিএইচডি করার পর গবেষণা ও শিক্ষকতা পেশায় ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব। আর ফিলোসফি বা দর্শন শিক্ষার একটি প্রাচীন শাখা, তাই বিশ্বের প্রতিটি দেশেই এ বিষয়ের ওপর ক্যারিয়ার গঠনের সুযোগ রয়েছে।

যাঁরা বিদেশে পড়তে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ

যাঁরা দেশের বাইরে পড়তে চান, তাঁদের প্রথম নিজের পঠিত বিষয়টি বিশ্বের কোথায় এবং কোন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সবচেয়ে ভালোভাবে পড়ার সুযোগ রয়েছে, তা খুঁজে বের করতে হবে। এরপর ভর্তির প্রক্রিয়া এবং স্কলারশিপ সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখতে হবে। নিজের প্রাতিষ্ঠানিক ফলাফলের পাশাপাশি গবেষণাক্ষেত্রে দক্ষতা বাড়াতে হবে। আর পড়াশোনার পরিকল্পনা লেখার সময় অন্যের আইডিয়া নকল না করে লেখায় নিজস্বতা ও স্বকীয়তা প্রকাশ করতে হবে। শুরু থেকেই আইইএলটিস প্রস্তুতি নিতে হবে কারণ দেশের বাইরে পড়ার ক্ষেত্রে একটি ভালো আইইএলটিএস স্কোর অনেক জরুরি।

লেখক: পিএইচডি ফেলো স্কুল অব হিউম্যানিটিস, ডিপার্টমেন্ট মডার্ন ফিলোসফি, এতভস্ত লর‍্যান্ড (Eotvos Lorand) ইউনিভার্সিটি, হাঙ্গেরি

পছন্দের আরো পোস্ট