ডুয়েটে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা

ডুয়েট প্রতিনিধি।

ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট), গাজীপুর-এ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে আজ (৩০ মার্চ, বুধবার) আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে শহীদ আহ্সান উল্লাহ মাস্টার অডিটোরিয়ামে বিকালে অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক, এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, এমপি। এছাড়া মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুর রশীদ ও পরিচালক (ছাত্র কল্যাণ) অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক, এমপি ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর থেকে ‘৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ‘৫৪-এর যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, ‘৬৫-এর ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ, ‘৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন, ‘৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ‘৭০-এর নির্বাচন ও ‘৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের ধারাবাহিক ইতিহাস ও তাৎপর্য তুলে ধরে বলেন, জীবনের অধিকাংশ সময় বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে শোষণ ও নিপীড়নের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য জেল-জুলুম সহ্য করেছেন। তিনি দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত এই দেশকে ঘুরে দাঁড় করিয়েছেন। যা সারাবিশে^র জন্য অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির নানা ঘটনা তুলে ধরে বলেন, ‘৭৫ এর আগস্টের পর বাংলাদেশে ফরমায়েশি বা স্বরচিত ইতিহাস রচিত হয়েছিলো। কিন্তু স্বরচিত এ মিথ্যা ইতিহাস আজ আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও দর্শন বাঙালির জাতির উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন এখনো পূর্ণাঙ্গরূপে বাস্তবায়িত হয়নি। আমরা তাঁর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষুধা ও দারিদ্্রমুক্ত উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তুলবো- এই হোক স্বাধীনতা দিবসে আজকের অঙ্গীকার।

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, এমপি বলেন, যে মানুষটির জন্ম না হলে আমরা স্বাধীনতার স্বাদ পেতাম না, যিনি ‘৪৮ থেকে ‘৭১ পর্যন্ত প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন, সেই মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর স্বল্প সময়ের মধ্যে বঙ্গবন্ধু প্রতিটি ক্ষেত্রেই উন্নয়নের ভিত্তি স্থাপন করে গেছেন এবং সারা বিশ্বের কাছে তিনি বাংলাদেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন। তাই বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ একই সুত্রে গাঁথা।

Post MIddle

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. হাবিবুর রহমান তৎকালীন পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে শোষণ ও বৈষম্যের তুলনামূলক তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে বলেন, পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠির শোষণ-নিপীড়নের কারণেই মুক্তিযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়েছিলো। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু না থাকলে আজ আমরা স্বাধীন দেশ পেতাম না। তাঁর মতো যোগ্য নেতৃত্বের কারণে বাঙালি জাতি মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো। তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন স্বাধীনতা মানে দায়িত্বশীলতা। বঙ্গবন্ধু আত্মসমালোচনা করতে ভালবাসতেন। বঙ্গবন্ধুর এই দায়িত্বশীলতা ও আত্মসমালোচনার দর্শনটি আমাদের জীবনেও চর্চা করে যেতে হবে, যাতে আমরা সর্বোচ্চ ত্যাগের মাধ্যমে মানবকল্যাণে নিজেদের নিয়োজিত করতে পারি। তিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস ও বঙ্গবন্ধুর জীবন দর্শনকে জানার জন্য তার লেখা অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা ও আমার দেখা নয়া চীন- এ বইগুলো বেশি বেশি পড়ার জন্য সবাইকে উদ্বুদ্ধ করেন।

এছাড়া তিনি ১৫ আগস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ও তাঁদের পরিবারের শাহাদাত বরণকারী সদস্যদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাসহ জাতীয় চার নেতা এবং মুক্তিযুদ্ধে সকল শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানান। তিনি আলোচনা সভায় অংশগ্রহণের জন্য সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুর রশীদ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও তাৎপর্য তুলে ধরে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন ডুয়েটের পরিচালক (ছাত্র কল্যাণ) অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ডুয়েট শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী বিনয় ব্যানার্জী, অফিসার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন মোল্লা, কর্মচারী সমিতির সভাপতি মো. মোক্তার হোসেন প্রমুখ। পুরকৌশল বিভাগে সহকারী অধ্যাপক রোকসানা আক্তার ও পাবলিকেশন কাম ইনফরমেশন অফিসার মো. জিয়াউল হকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে গণ্যমান্য অতিথিবৃন্দসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডীন, বিভাগীয় প্রধান, পরিচালক, রেজিস্ট্রার(অ. দা.), শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ সরাসরি এবং অনলাইনে যুক্ত হয়ে অংশগ্রহণ করেন ।

পছন্দের আরো পোস্ট