পাবিপ্রবিতে স্মারক ম্যুরাল ‘জনক জ্যোতির্ময়’ উদ্বোধন

পাবিপ্রবি প্রতিনিধি।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি উদ্বোধনী চত্বরে নাম ফলকের ফিতা টানছেন ধীরে ধীরে আর পাশেই ২১ ফুট উচ্চতা ও ১৫ ফুট প্রস্থের এক বিশাল মুখাবয়ব স্পষ্ট হচ্ছে, পর্দা সরে যাচ্ছে অপেক্ষার পালা শেষ হচ্ছে, সবাই পিনপতন নিরব।

অবশেষে অপেক্ষার পালা শেষ, সবাই দেখতে পেল বাঙালির সবচেয়ে প্রিয় মানুষের মুখ। বাঙালির মানসপটে সারাজীবন সবচেয়ে বেশি ভাস্বর হয়ে থাকা হাস্যোজ্জ্বল মুখ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি। বাঙালির আশ্রয়স্থল, বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রিয় মুখ। একটি ছবির মাধ্যমে পুরো বঙ্গবন্ধুকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ‘জনক জ্যোতির্ময়’ নামক ম্যুরালের মাধ্যমে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এই ম্যুরাল স্থাপন করেছেন। ‘জনক জ্যোতির্ময়’ এর মাধ্যমে ফুটে উঠেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিত্ব, জীবনব্যাপী আন্দোলন, সংগ্রাম, বিশালত্ব, মানবিকতা, মহানুভবতা, দৃঢ়তা, দেশপ্রেম তথা পুরো জীবনচিত্র। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মাসে জাতির পিতার ম্যুরাল উদ্বোধন ভিন্ন মাত্রা এনে দেয়। উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয় নবীন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে।

ম্যুরাল উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ‘জনক জ্যোতির্ময়’ এর শুভ উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া ৩ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য মোঃ মাহবুব উল আলম হানিফ। উদ্বোধন শেষে ম্যুরালে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পাবনা ১ আসনের সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, পাবনা ৫ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স, পাবনা ৪ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ নুরুজ্জামান বিশ্বাস, পাবনা ২ আসনের সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবির, কুষ্টিয়া ১ আসনের সংসদ সদস্য আ.কা.ম. সরওয়ার জাহান, কুষ্টিয়া ৪ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ, পাবনা-সিরাজগঞ্জ সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য নাদিরা ইয়াসমিন জলি এবং পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মোঃ আনোয়ার খসরু পারভেজ।

‘জনক জ্যোতির্ময়’ ম্যুরালে প্লাটফরমটির দৈর্ঘ্য ৬০ ফুট ও প্রস্থ ৩৮ ফুট। ম্যুরালের বেদিতে উঠতে ৬টি সিঁড়ি বা ধাপ অতিক্রম করতে হবে। ৬ টি সিঁড়ি বা ধাপকে বঙ্গবন্ধুর ৬ দফার প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যা বাঙালির মুক্তির সনদ। মুল বেদীতে আরো একটি ধাপ অতিক্রম করতে হবে। মূল ম্যুরালটির প্রতিকৃতির উচ্চতা ২১ ফুট এবং প্রস্থ ১৫ ফুট। ম্যুরালের ডান পাশের স্তম্ভটির উচ্চতা ১৮ ফুট এবং প্রস্থ ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি। এখানে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মনীষীদের গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য উদ্ধৃতি আকারে রয়েছে।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি মোঃ মাহবুব উল আলম হানিফ জাতির পিতার জীবন সংগ্রাম উল্লেখ করে বলেন, দেশভাগের পর বঙ্গবন্ধু বুঝতে পারলেন শাসকদের নিপীড়ন, নির্যাতন দমনপীড়ন থেকে রক্ষা পেতে হলে বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। তাই তিনি ৪৮ সালে ছাত্রলীগ গঠন করলেন। ভাষার আন্দোলনে কারাগারে গেলেন। কারাগার থেকে ভাষা আন্দোলন সংগঠিত করলেন। ঘুমন্ত জাতিকে সচেতন করার জন্য আওয়ামীলীগ গঠন করলেন। মন্ত্রীত্ব ছেড়ে দলকে সংগঠিত করলেন। ৬৬ সালে ৬ দফার মাধ্যমে স্বাধীনতার মূল মুক্তির সনদ ঘোষণা করলেন। ঘুমন্ত বাঙালিকে জাগিয়ে তুললের ৬৯ এর গণআন্দোলনে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামী হয়ে। ৬৯ এর ২৩ ফেব্রুয়ারি হলেন ‘বঙ্গবন্ধু’। ৭০ এর নির্বাচন, ৭১ এর ৭ মার্চের ভাষণ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরের স্বাধীনতার ঘোষণা, নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর নামে বাংলাদেশ অর্জিত হল। বাংলাদেশ সৃষ্টিতে বঙ্গবন্ধুর একক কৃতিত্ব।

Post MIddle

হানিফ আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে সোনার বাংলাকে হত্যা করা হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করা হয়েছিল। ৭৫ এর পটপরিবর্তনের পর যে শক্তি ক্ষমতায় এসেছিল তারাই আবার নতুন শক্তি সঞ্চয় করে হেফাজতের ঘাড়ে সওয়ার হয়ে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে ধ্বংস লীলা চালিয়েছে। বিএনপি জামাত হেফাজতের মুখে ইসলাম আর দেশপ্রেম মানায় না। তারা প্রকৃত মুসলমান নয়।

তিনি আরো বলেন, শেখ হাসিনা ৫০ লাখ মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে প্রচলিত শিক্ষার সমমর্যাদা দিয়েছেন। আর তারা রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করছে ধর্মের দোহাই দিয়ে। ধর্ম নিরপেক্ষতা জাতির পিতার নির্দেশনা ছিল। জনগণকে সাথে নিয়ে আমরা সমস্ত অপশক্তিকে সমাজ থেকে নিঃশেষ করে দেবো। যারা ভুল পথে হাঁটছেন তাদের দমন করা হবে। শেখ হাসিনার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা হবে।

পাবনা ১ আসনের এমপি এ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু বলেন, শেখ হাসিনা ১২ টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছে তার মধ্যে আলো ছড়াচ্ছে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। আজকে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল উদ্বোধনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর আলোয় আলোকিত হবে পুরো দেশ, জাতি, আমাদের শিক্ষার্থীরা। তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর রক্তে গড়া ছাত্রলীগ যেন বিভ্রান্ত না হতে পারে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অস্থিতিশীল করতে দেয়া যাবে না।

পাবনা ৫ সদর আসনের এম পি গোলাম ফারুক প্রিন্স বলেন, বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ ও পতাকা এক ও অবিচ্ছেদ্য। বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির জন্য তার সারাটি জীবন সংগ্রাম করেছেন এবং বাঙালি জাতিকে মুক্তি এনে দিয়েছেন। নতুন প্রজন্মের কাছে তাঁর আদর্শ ও চেতনা ছড়িয়ে দিতে হবে।

আরও বক্তব্য দেন, পাবনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল রহিম লাল, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (চলতি দায়িত্ব) বিজন কুমার ব্রহ্ম, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদ চৌধুরী আসিফ ও সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল ইসলাম বাবু।

অনুষ্ঠানের সভাপতি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এম রোস্তম আলী বলেন, ‘জনক জ্যোতির্ময়’ ম্যুরালটির অবস্থান, নির্মাণ শৈলী দেখে মনে হচ্ছে জাতির পিতা সব সময় আমাদের সঙ্গে আছেন, আমাদের ছায়া দিচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুকে আরো বেশি করে জানার আগ্রহ তৈরী হবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। তাঁর আলোয় আলোকিত হব, উদ্ভাসিত হব।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ইতিহাস ও বাংলাদেশ স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হাবিবুল্লাহ।

পছন্দের আরো পোস্ট