শেষ হলো ‘সম্প্রীতি উৎসব

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সহিংস-উগ্রবাদ প্রতিরোধে দুই দিনব্যাপী ‘সম্প্রীতি উৎসব ২০১৯’- এর সমাপনী অনুষ্ঠিত হলো গতকাল। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের (বিআইসিসি) ক্যাপিটাল হলে উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠিত হয়। উৎসবটি আয়োজন করে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন।

সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শামসুল হক টুকু, এমপি, সভাপতি, স্বরাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মনজুরুল আহসান বুলবুল, প্রধান সম্পাদক, একুশে টেলিভিশন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম। এ উৎসবের সহ-আয়োজক প্রতিষ্ঠান ক্রসওয়াক কমিউনিকেশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ মারুফ সমাপনী অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিংবা অন্য কোনোভাবে তরুণরা যেনো উগ্রবাদে প্ররোচিত না হয়ে যৌক্তিক অবস্থান গ্রহণ করতে পারে- এ উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে এমজিএফ’র ‘সম্প্রীতি’ প্রকল্প। এবারের এ উৎসবের শ্লোগান ছিলো ‘সম্প্রীতিতে গড়ি সুন্দর বাংলাদেশ’।

উৎসবের আয়োজনে ছিলো প্রদর্শনী, অনুপ্রেরণামূলক অনুষ্ঠান, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও কনসার্ট। এর পাশাপাশি উৎসবে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মাধ্যমের শিক্ষার্থী, সরকারি কর্মকর্তা, নীতি-নির্ধারক ও সাংবাদিকদের নিয়ে পৃথক গোলটেবিল আলোচনাও অনুষ্ঠিত হয়। এ আলোচনাগুলোর সারসংক্ষেপ নিয়ে উৎসবের সমাপনী দিন বিকেল ৫টায় বিশেষ মিডিয়া ব্রিফিং অধিবেশনও অনুষ্ঠিত হয়। প্যানেল আলোচনার সুপারিশগুলো তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম। সেখানে উঠে আসে তরুণদের উগ্রতা ও সহিংসতা থেকে দূরে রাখতে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের ভূমিকা ও করণীয় সম্পর্কে। ধর্মের অপব্যাখ্যা, রাজনীতিতে ভিন্নমত পোষণের সুযোগের সংকোচন, বাজার অর্থনীতির কারণে অসুস্থ প্রতিযোগিতা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসক্তির কারণে বিচ্ছিন্নতা তরুণদের সহিংস কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হওয়ার মূল কারণ বলে উল্লেখ করেন কাজী মারুফুল ইসলাম। খুব শীঘ্রই সবার জন্য এ সুপারিশগুলো প্রকাশ করা হবে বলেও জানান তিনি।

সমাপনী দিনে সকালে সহিংস উগ্রবাদ নিয়ে বিতর্ক আয়োজন করে ডিবেট ফর হিউম্যানিটি, এরপর অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য প্রদান করেন প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আনিসুল হক। এরপরে শান্তি ও সংহতি নিয়ে বিভিন্ন পরিবেশনার আয়োজনে ছিলো এনজিসিএএফ, ভিএএসডি, আলোকিতো শিশু, কিশোর আলো, পিএএসএ, রেডিও ভূমি ৯২.৮ এফ এম, ইয়ুথ ক্লাব অব বাংলাদেশ (ওয়াইসিবি) এবং কাক কমিউনিকেশনস। সবশেষে অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশ করে জনপ্রিয় ব্যান্ডদল জলের গান।

Post MIddle

অনুষ্ঠানের সমাপনী দিনে ‘তারুণ্য ও উগ্রবাদ: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক দু’টি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন সরকারি কর্মকর্তা ও নীতি নির্ধারকগণ এবং দ্বিতীয় প্যানেল আলোচনা গণমাধ্যমকর্মীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়। সবার জন্য উন্মুক্ত এ উৎসবে প্রায় ৪৫টি স্টল ছিলো।

স্বাগত বক্তব্য মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, ‘আমাদের সমাজের জঙ্গিবাদ, সংঘাত থেকে তরুণদের বিরত রাখা ছিলো আমাদের এ আয়োজনের উদ্দেশ্য। আমরা তাদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে নানা কর্মসূচি করেছি এবং দুটো গবেষণাও পরিচালনা করেছি। আমাদের তরুণরাই পারবে কালো শক্তিকে পরাজিত করে শান্তি নিয়ে আসতে। এবং তাদের ওপরেই নির্ভর করছে দেশের ভবিষ্যৎ।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যদি সুন্দর ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ চাই সেটা শান্তি ছাড়া হবে না।’

একুশে টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘সম্প্রীতির আয়োজন হয়তো নতুন কিন্তু কিন্তু সম্প্রীতির দর্শন নিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিলো। সম্প্রীতি বজায় রাখার ক্ষেত্রে সবার ভূমিকা রয়েছে। আমরা শুধু রাস্ট্রের ওপর দায় দিতে পারি না। আমাদের নাগরিকদের রাষ্ট্রকে পথ দেখাতে হবে। আমাদের রাজনীতিকে স্বচ্ছ এবং যুক্তিসঙ্গত হতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘তারুণ্যের শক্তির সমাবেশ অনেক বড় শক্তি। কিন্তু তাদেরকে সঠিক পথ দেখাতে হবে।’

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শামসুল হক টুকু, এমপি বলেন, ‘তরুণরাই দেশের শক্তি। তারাই সম্প্রীতির শক্তিকে শক্তিশালী করতে পারে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধেও তাই হয়েছিলো। আমাদের উত্থানের ইতিহাস যদি পর্যবেক্ষণ করি তাহলেও সেখানে দেখব তারুণ্যের শক্তিকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতি ওপর যখন পাকিস্তানিরা আঘাত হেনেছিলো সেখানেও তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল তরুণরা। তারুণ্যের শক্তিই পারে সব অন্যায় প্রতিহত করতে।’ তাই, তরুণদের জন্য এমন একটি আয়োজনের কারণে তিনি আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান।

ধন্যবাদ জ্ঞাপনকালে ক্রসওয়াক কমিউনিকেশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ মারুফ বলেন, ‘অনেকের অক্লান্ত শ্রম ও ইচ্ছার কারণে সফলভাবে অনুষ্ঠিত হলো ‘সম্প্রীতি উৎসব ২০১৯’। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনকে অশেষ ধন্যবাদ সময়োপোযোগী এমন একটি বিষয় চিন্তা করার জন্য এবং ক্রসওয়াককে তাদের সহযোগী করার ধন্য। ক্রসওয়াক ফাউন্ডেশন এমন মহৎ উদ্যোগের অংশীদার হতে পেরে অত্যন্ত গর্বিত।’

এমজেএফ বাংলাদেশের জাতীয় পর্যায়ের শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, যা ২০০২ সাল থেকে মানবাধিকার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে। এমজেএফ- এর সকল কর্মসূচি বাংলাদেশের সংবিধান, জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল (২০১২), সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০১৬-২০২০) এবং টেকসই উন্নয়ন এজেন্ডা ২০৩০ এর সাথে ধারণা ও কৌশলগতভাবে সম্পর্কযুক্ত।

এরই ধারাবাহিকতায় এমজেএফএর ‘যুব ও সামাজিক সংহতি’ কার্যক্রমের আওতায় সম্প্রীতি প্রকল্পটি সহিংস-উগ্রবাদ প্রতিরোধে ঢাকার ছয়টি জেলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পটি স্নাতক ও স্নাতোকোত্তর পর্যায়ের কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মাঝে সহনশীলতা, পরম সহিষ্ণুতা, ভিন্নতা গ্রহণের মানসিকতা ও মননশীলতা চর্চার মাধ্যমে সামাজিক প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে।

পছন্দের আরো পোস্ট