ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের চাওয়া পাওয়ার ৩৯ বছর

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় এটি। কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ শহর থেকে যথাক্রমে ২৪ ও ২২ কিলোমিটার দূরে শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুর নামক স্থানে ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয়। নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে প্রতিষ্ঠার ৩৯টি বছর পার করেছে এ বিশ্ববিদ্যালয়।

সূত্র মতে, ধর্মতত্ত্ব ও ইসলামী শিক্ষা, তুলানামূলক আইনশাস্ত্র এবং অন্যান্য শিক্ষণ শাখাসমূহে ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে শিক্ষা চর্চার ব্যবস্থা করা। স্নাতক ও স্নাতকত্তোর পর্যায়ে জ্ঞান বিকাশ ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে গবেষণা এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহনের মহান লক্ষ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। এক এক করে প্রতিষ্ঠার ৩৯ বছর অতিক্রম করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। প্রতিষ্ঠাকালে সম্পর্ণ আবাসিক এবং আর্ন্তুজাতিক বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক, স্থানীয়সহ নানা সমস্যার কারণে তা সম্ভব হয়নি।

দীর্ঘ ১৬ বছর পর চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি ৪র্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। এতে ১০ হাজার ডিগ্রিধারীসহ প্রায় ১৪ হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কর্মকান্ডেও ফিরেছে গতি। বিভাগগুলোতে সেশনজট কমে যাচ্ছে। ৫টি থেকে বৃদ্ধি হয়েছে ৮টি অনুষদ। গেল বছর আটটি নতুন বিভাগ খোলা হয়েছে। ২০২১ সাল নাগাদ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ সংখ্যা হবে ৫৯টি।

Post MIddle

এছাড়াও এবিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু চেয়ার। ২৪২তম সিন্ডিকেটে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. শামসুজ্জামান খানকে বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রফেসর হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে পঠন-পাঠন ও গবেষণায় সহযোগিতার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার, বঙ্গবন্ধু কর্ণার এবং একুশে কর্ণার রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে প্রশাসন। এবছর ৫ শত ৩৭ কোটি ৭ লক্ষ টাকার মেগাপ্রকল্পের অনুমোদন পেয়েছে। এতে ৯টি দশতলা ভবন ও ১টি কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান গবেষণাগার এবং ১৮টি ভবনের উর্দ্ধমুখী সম্প্রসারণের কাজ করা যাবে। এছাড়াও পরিবহন সঙ্কট দূরীকরণে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহন পুলে ৮টি এসি গাড়ি যুক্ত হয়েছে।

শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি, গবেষণার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ, সকল অনুষদ হতে আন্তর্জাতিকমানের গবেষণা জার্নাল প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ, পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কর্মশালা, শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়াদক্ষতা বৃদ্ধির নানামুখী উদ্যোগ, মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবিরোধী কঠোর অবস্থান এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ ও গবেষণাকেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে এগিয়ে যাচ্ছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।

বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১২ হাজার ৮১২ জন; ৩১মে ২০১৭ পর্যন্ত। এর মধ্যে ২২ জন বিদেশী শিক্ষার্থী রয়েছে। মোট শিক্ষক ৪১০ জন, কর্মকর্তা ৪২৫ জন, সহায়ক কর্মচারী ২০৯ এবং সাধারণ কর্মচারী ১৯০ জন। এম.ফিল কোর্সে ২৮৫ জন এবং পি-এইচ.ডি প্রোগ্রামে ৩৫৭ জন শিক্ষার্থী বর্তমানে গবেষণাকর্মে নিযুক্ত রয়েছেন। এ পর্যন্ত ৬২১ জনকে এম.ফিল ডিগ্রি এবং ৪২১ জনকে পি-এইচ.ডি ডিগ্রি প্রদান করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২তম উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-উর-রশিদ আসকারী বলেন,‘বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল লক্ষ্য হচ্ছে জ্ঞান বিতরণ এবং নতুন জ্ঞান তৈরি করা। চরম ভাবমূর্তি সঙ্কটে নিপতিত ও সর্বস্বান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিবর্তনের জন্য কাজ চলছে। প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক ও দুর্নীতিমুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার লক্ষে বর্তমান প্রশাসন অঙ্গিকারাবদ্ধ।’

পছন্দের আরো পোস্ট