অনলাইনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অক্টোবর থেকে

শিক্ষা প্র‌তিষ্ঠান পরিদর্শনে ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আগামী ১ অক্টোবর থেকে অটোমেশন সফটওয়্যারের মাধ্যমে সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করতে হবে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের (ডিআইএ) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। অনলাইনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন মনিটরিং করবেন দায়িত্বশীল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

ডিআইএর যুগ্ম পরিচালক বিপুল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘আগামী ১ অক্টোবর থেকে ডিআইএর সব কার্যক্রম অটোমেশনে রূপান্তর হবে। কোনও কিছুই আর ম্যানুয়ালি করা হবে না। অটোমেশন কার্যক্রমটি চালু হলে পরিদর্শনের সব কাজ অনলাইনে করা হবে। প্রথমে পাইলটিং করা হবে। তা সফল হলেই কার্যক্রম পুরোপুরি চালু হবে। এই পদ্ধতে ঘুষ-দুর্নীতির সুযোগ থাকবে না। এছাড়া, ডিআইএ হবে বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল অধিদফতর।’

দেশের প্রায় ৩৬ হাজার এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান ডিআইএ। পরিদর্শনে গিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছে ঘুষ দাবির অসংখ্য অভিযোগ ওঠে।

জানা গেছে, গত বছর মে মাসে পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার ১০টি বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে অন্তত ২০ জন শিক্ষকের কাছ থেকে ঘুষ নেন ডিআইএর কয়েকজন কর্মকর্তা। ডিআইএর সহকারী শিক্ষা পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমানকে ঘুষের টাকাসহ রাজধানীর পল্টন এলাকা থেকে আটকও করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

Post MIddle

ডিআইএ সূত্রে জানা গেছে, গতবছর ৩১ ডিসেম্বর টেন্ডারের মাধ্যমে ‘ইটিএল’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে অটোমেশন সফটওয়্যার তৈরির কাজ দেওয়া হয়। ওই সফটওয়্যারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিরীক্ষার (অডিট) সুযোগ রাখা হয়। এই পদ্ধতিতে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি পোর্টাল থাকবে। অডিট করার আগে প্রতিষ্ঠান প্রধানকে তা ই-মেইল করে জানিয়ে দেওয়া হবে। অনলাইনে নির্ধারিত ফরমে সব তথ্য পূরণ করতে সময় বেঁধে দেওয়া হবে প্রতিষ্ঠান প্রধানকে। এরপর পরিদর্শন কর্মকর্তা অনলাইনে থেকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের তথ্য যাছাই করবেন। তথ্য যাছাইয়ের সময় ডিআইএর শীর্ষ কর্মকর্তা অনলাইন মনিটরিং করবেন। পরিদর্শন শেষে অনলাইনে রিপোর্ট জমা দিতে হবে।

অটোমেশন সফটওয়্যারে শিক্ষকদের ক্লাসে পাঠদানের দক্ষতা মূল্যায়নের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। অটোমেশন কার্যক্রমটি চালু হলে শিক্ষকরা ক্লাসে কোনও বিষয়ে পাঠদান করবেন তা আগের দিন নিজ প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে দিতে হবে। শিক্ষার্থীরা তার ওপর ধারণা নিয়ে ক্লাসে আসবে। শিক্ষকরা ক্লাসে কী পাঠদান করছেন, তা সফটওয়্যারের মাধ্যমে মনিটরিং করবেন ডিআইএ কর্মকর্তারা। শিক্ষকদের দুর্বলতা থাকলে পরামর্শও দেওয়া হবে। একই সফটওয়্যারের মাধ্যমে ডিআইএ’র কর্মকর্তাদের সব কার্যক্রমও মনিটরিং করা যাবে।

ডিআইএ সূত্র জানায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক, আর্থিক ও একাডেমিক–এই তিন বিষয় পরিদর্শন করেন কর্মকর্তারা। ২০১৪ সাল থেকে পরিদর্শনে শিক্ষকদের সনদ যাচাই করা হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি), বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে জাল সনদে এমপিভুক্ত হয়েছেন অনেক শিক্ষক। গত আড়াই বছরে সাত শতাধিক জাল সনদে চাকরি করা শিক্ষককে চিহ্নিত করেছেন ডিআইএর কর্মকর্তারা। বেতন-ভাতা হিসেবে তাদের গ্রহণ করা প্রায় ১৭ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত দেওয়ার সুপারিশও করা হয়েছে।

ডিআইএ কর্মকর্তারা আরও জানান, একটি সনদ যাছাই করতে কয়েক দফা বোর্ড, বিশ্ববিদ্যালয় ও এনটিআরসিএতে চিঠি চালাচালি করতে হয়। অটোমোশন সফটওয়্যারে সনদ যাছাইয়ের একটি অপশন রাখা হয়েছে। এতে সহজেই সনদ যাচাই করা যাবে।

এ ব্যাপারে ডিআইএর যুগ্ম পরিচালক বিপুল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অডিট করতে গিয়ে অসংখ্য জাল সনদ ধরা পড়ছে। দিন দিন এ সংখ্যা আরও বাড়ছে। সনদ যাচাই করতে অনেক সময় লেগে যাচ্ছে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও দীর্ঘ সময় লেগে যাচ্ছে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে দ্রুত সনদ যাছাই করতে বোর্ড, বিশ্ববিদ্যালয়, এনটিআরসিএসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে প্রবেশের সুযোগ রাখা হয়েছে। আমরা তাদের কাছে অনুমোদন চাইবো।’

পছন্দের আরো পোস্ট