অনন্যার অনু গল্প

বয়স ষোল’র জীবনটা এখনো জীবিত অনন্যার। শিশুকাল, বাল্যকাল -কোন কালই বিস্মৃতির অন্ধকারে নয় তার। বিস্মৃত হয়নি পাশের বাড়ির অনিন্দ আর তার কলেজে পড়া জীবনও।

Post MIddle

রাম বাবুদের পুকুরের পূব দিকটা ধ্বসে পড়ে ঝুলে রয়েছে জলের মধ্যে সেই কত কাল। কানপোনার ঝাক আর রোদ পোহানো কচ্ছপের পিঠের কালো রঙের জেলোটিন ভাবটি দেখতে বসে থেকেছে জলে পা ডুবিয়ে দিয়ে অনন্যা। দুপুরের খাড়া রোদটা এসে পড়েছে তখন জলে, মাথার তালু ফাটা সেই রোদও ঘরে পাঠাতে পারেনি অনন্যার অনিন্দিতা মনটাকে।

উদাসী দুপুরে অনন্যা অনিন্দকে সাথে চাইতো। দুপুরের ব্যঞ্জন গুলো ঘরে ঘরেই ব্যঞ্জনাময় মায়েদের হাতের ব্যস্ততায় তখন। তাই, শাসনের ত্রাস ফুটবেনা বোমার মত সেই সময়- অনন্যার জানা ছিলো। অনিন্দও যে কম জানতা তা নয়। লুঙ্গির গিট বাঁধতে বাঁধতে পুকুর ধারে সেও তখন। সেই গিট পরানো হাতের ফাঁসে হাসফাঁস বিহীন নিমজ্জন অনন্যার-

অনন্যা প্রেমে পড়লো এইতো সেদিন। ছোট্ট অনন্যা বড় হতে থাকলো প্রেমের পুষ্টিতে। অনিন্দর অনেক অবসর অনন্যার প্রেমের সোনালী ফসলে সিঞ্চন দেয়ার। এমনি করে হাত দুটো হাতের মুঠোয়, পায়ের তালে ভুল নেই দুজনার।

পুকুর ঘাটের কাকচক্ষু জল, পোনা মাছ আর কচ্ছপের রোদ পোহানোতে সীমাবদ্ধ থাকলোনা কারোরই টলমল করা হৃদয় আর। দিগন্ত ছুঁতে চাইলো বুকের চাওয়া। রেল লাইন ধরে এগিয়ে যেতে থাকলো পাথরকুড়ানী ভোরের স্নিগ্ধ আবছায়ার সেই চানমারি টিলার কুমারী ঘাসের উপর কাঁচপোকা শিশিরের শিহরণ পায়ে দলে দিয়ে দুজনে। খিল খিল করা পাগলপারা দৌড় আর রাইফেল শুটিং এর কান বিদির্ন করা শব্দ প্রতি ভোরে কোঁচায় বেঁধে বাড়ি ফেরা রোজ দুজনার।

তারপর একদিন অন্য রকম- রেলের সটান গতিতে দুটি হৃদয় হারিয়ে ফেললো তাদের নিজস্ব গতি। প্রচন্ড হুইসেলে নিঃশব্দ পড়ে রইলো প্রেম। অনন্যা অন্য এক ঘরের চাতাল ঝাড় দেবে এখন। সাঁঝ বাতির সলতে পুরবে অনন্যার আহুতিতে। অনন্যা অনন্যোপায়!

সেই থেকে প্রেম বসে দুটি জানালায়, যখন আকাশ করে নিকষ কালো আর অস্ত পাড়ের সূর্য টেনে দেয় সোনালী রেখা। দুজনার স্মৃতির মলাট খুলে স্বচ্ছ জলের নিচে স্পষ্ট লাল শুড়কির মত, খুঁজে পায় দুজন দুজনাকে আর ভাবে ভালোবাসা ঈশ্বর যেন অবিনশ্বর এক।

পছন্দের আরো পোস্ট