নির্ভশীলতার আবশ্যকতা

সৃষ্টির আদি লগ্ন থেকেই প্রতিটি জীবই নির্ভরশীল সত্বা নিয়ে পৃথিবীর বুকে বিরাজমান সে নির্ভরশীলতা যেমন সমশ্রেণীর জীবের উপর আর তেমনি পারিপাশ্বির্কতার উপরও বটে। আবার অন্যন্য প্রাণীরকূলের উপরও। যদি আমারা বলি বৃক্ষের উপর সকল প্রাণিকূল নির্ভরশীল তবে ব্যাপার খানা যথেষ্ট খোলাসা হয়ে যায়।

তবে “নির্ভরশীলতা” পদ টির ব্যপকতা পরীলক্ষিত হয় তখনই যখন তা প্রাণীকূলের স্বৈরাচারী যুবরাজ মনুষ্যকূলের উপর আরোপিত হয়।
এবার খেয়াল করি “নির্ভরশীলতা”- পদটি কত প্যাচালে তৈরী করে।
১.পরনির্ভরশীলতা মানুষকে ধ্বংস করে।
২.স্ব নির্ভরতা সাফল্য আনে।
৩. আত্মনির্ভরশীল জাতি অগ্রগতি লাভ করে।
এবার দেখুন কান্ড,
১- এ বলা হয়েছে পরনির্ভরশীলতা মানুষকে ধ্বংস করে। না না, তর্কে যাবার আগে আর একটু স্পষ্ট করে নেই। কথা কিন্তু একই আছে সামনে শুধু একটু সম্বোধন পদ যুক্ত হয়েছে মাত্র, আবার দেখুন কথাটা কতবড় অযৌক্তিক।

পরনির্ভরশীলতা কখনো ধ্বংস করে না, বরং আত্মানির্ভর হতে শেখায়। কেননা প্রতিটি প্রাণীই জন্ম সূত্রে পরনির্ভরশীল। মা তাকে খাওয়া খাওয়া থেকে শুরু করে শৌচকার্য সবই করে দেয়। কাজেই সে যখন পরনির্ভর থাকে তখন সে আত্মনির্ভর হবার চেষ্টা চালায় যদিও আদৌ কেউ কখনো আত্ম নির্ভর হয়না।

দোহাই বয়েসের কথা বলবেন না। একটা বয়সে বয়ঃপ্রাপ্ত হলে মায়ের শেখানো কাজ গুলো নিজে করা যদি আত্ম নির্ভরশীলতা হতো তবে চাকুরীর লাইনে ভীড় ও পড়তো না, আর Multinational Company এর বাঘা বাঘা কর্ণধারেরা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিও দিতেন না। নিজেরাই একহাতে সকল কার্য সম্পাদন করতেন, বলি মা দশাভূজার ও বহন বাঘ। কাজেই এ ধরাই আত্মপরনির্ভর কেউ আছেন বলে জানা নেই। বরং বলি পরনির্ভরশীলতা আছে বিধায় মানুষ আজো পারস্পারিক সম্পর্ক বজায় রেখে পাশাপাশি বসবাস করছে। পুরুষ যেমনি নারীর উপর নির্ভরশীল জনক বিশেষণে বিশেয়িত হবার নির্ভরশীল জন্য নারীও তেমনি জননী হতে চাই পুরুষের নির্ভরশীলতার আশ্রয়ে।

Post MIddle

আবার ২- এ বলা হয়েছে
স্ব-নির্ভশীলতা সাফল্য আনে।
দেখুন তো একটু ভেবে স্ব-নির্ভর কোন প্রানীর অস্তিত্ব জগতে আছে কিনা। না মানুষের উদাহরণ ভুলেও টানবেন না। কেননা মানুষ প্রথমত প্রানী কুলের বাইরে নয়। এবং দ্বিতীয়ত মানুষ কোন ভাবেই স্ব-নির্ভর হতে পারে না, জীবনের প্রতিটি পর্যয়েই কোন না কোন কিছুর উপর তাকে নির্ভর করতে হয়ে।
বিদ্যাজর্নের জন্য যেমনি শিক্ষকের কাছে, আবার চিকিৎসা সেবার জন্য চিকিৎসকের কাছে। আবার অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য শ্রম ও মেধা কাজে লাগাতে হয়, তবে তাও আবার ফাকা মাঠে নয় ওটা যেখানে লাগাতে হয় সেখানে ও তো মানুষ নির্ভশীল
এদিকে ৩- এ বলা হয়েছে
আত্ম-নির্ভশীল জাতি অগ্রগতি লাভ করে।

ভাবুন তো একবার এমন কোন মুল্লুকের সন্ধান কেউ কোথাউ দিতে পারবেন কিনা যেখানে কোন কিছুরই কোন অভাব নেই। জল আছে তো তৈল নেই তৈল আছে তো ঘান নেই, ঘান আছে তো বলদ নেই আর এ সবই আছে তো কলু বেটাই নেই।

কাজেই তথা কথিত আত্ম-নির্ভশীল জাতি গোষ্ঠী যখন তেল, জল, ঘান বা কুলুর অভাব মিটিয়ে পরম আত্ম-নির্ভশীল হতে চাই তখন হয় তারা চুক্তিপত্র নামক একখান কাগজে দস্তখত পূর্বক এগুলি আমদানি করতে চাই নচেৎ যে জাতি পরনির্ভরশীল তাদের জাতীয়তা ঘুচিয়ে দিতে বারুদ উপঢৌকন পাঠায়। এতে করে ঐ আত্ম-নির্ভশীল জাতি নিজেই পরনির্ভশীলতার এক বিরাট বেহায়া দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।

আমার এই প্রলাপ পড়ে কেউ ভাববেন না যে লোকটা চাইনা কেউ স্বাবলম্বী হয়ে নিজপায়ে দাড়াক।সবাই নিজের পায়েই দাড়াই, অন্যের পায়ে দাড়াতে নেই, দাঁড়ানো যায় ও না।আমি চাই যার যার নিজের পায়ের নিচের মাটিটা যেন সবাই শক্ত করে দাড়াতে পারেন।দয়া করে চেচিয়ে বলে উঠবেন না, তা শুধু মাত্র স্ব-নির্ভশীলতার মাধ্যমেই সম্ভব”।

মোটেই না তা সম্ভব পারস্পরিক সহমমির্তা-ভ্রাতৃত্ব আর অনাগ্রাসি মূলক অসাম্প্রদায়িক মনোভাব দ্বারা। কেননা নদীও সাগরের উপর নির্ভরশীল, সাগর ও চেয়ে থাকে মেঘপুঞ্জের দিকে। এই বিধাতার লিলা। একে নির্ভশীলতা না বলে সহমমির্তা, সহায়তা বলুন তাতে করে আর কিছু হোক আর না হোক সব কিছু হবে আরো সত্য আরো সুন্দর।

পছন্দের আরো পোস্ট