মধ্যবিত্ত ছেলেদের জন্য প্রেম নয়

ভার্সিটিতে এক হ্যাংলা, পাতলা, টাকলু বড় ভাইকে চিনতাম। ক্লোজ ছোট ভাই হওয়ার কারনে মাঝেমাঝেই আমাকে বলতো, ভার্সিটিতে মধ্যবিত্ত ছেলেদের জন্য প্রেম নয় রে, ওরা প্রেম করতে পারে না কিন্তু ক্যাডার হতে পারে। আমি বলছিলাম, ভাই আপনি কিন্তু এখনো ক্যাডার হন নাই। কথাটা শুনে ভাই খালি একটু মুচকি হাসি দিয়েছিলো। একথা তো আগেই জানতাম। বড় ভাই আমার যে কয়টা মেয়েকে ভাললাগার কথা জানিয়ে ছিলো। কেউ তাকে সম্মানের সহিত ফিরিয়ে দেয় নাই। আয়নায় তার চেহারাটা দেখার কথাটা বলতেও কোনো কোনো মেয়ে দ্বিধা করে নাই। অবহেলিত, বঞ্চিত, লাঞ্চিত বড় ভাই আমার ক্যাডার হওয়ার কথাটা সেদিন আত্মবিশ্বাস নিয়েই বলেছিলো। আমি কথাটার মর্ম তখন বুঝতে পারি নাই। উনি পাশ করে চলে যাওয়ার পর আর দেখা সাক্ষাত নাই। ঢাকায় যাওয়ার পর হঠাৎ এই হ্যাংলা পাতলা ভাইয়ের সাথে একবার দেখা হয়েছিলো। উনি তখন পুরোদস্তুর পুলিশ ক্যাড়ার। চায়ে চুমুক দিতে দিতে অনেক কথাই হলো।

Post MIddle

কথার ফাঁকে ভাই হাসতে হাসতে বলেই ফেললেন। তুই তো আমার সম্পর্কে সব জানতি ভার্সিটির মেয়েগুলোর কাছে আমি কতটা অপমানিত হয়েছিলাম (আমার মুখে কোনো কথা নাই) কিন্তু জানিস ক্যাডার হওয়ার পর অনেক মেয়েই আমার খোঁজখবর নিয়েছে। (এই খোঁজখবরের অর্থ আমি আমার মতো করে বুঝে নিলাম) যারা আয়নায় চেহারা দেখার কথা বলেছিলো, তারাও অনেক দুঃখ প্রকাশ করেছে। আর এই ভার্সিটির মেয়েগুলোই অনেকেই এখন ভাললাগার কথা বলে। আমি বলেছিলাম, ভাই আপনার কি এখনো তাদের উপর ক্ষোভ আছে? ভাই এক চিলতে হাসি দিয়ে বললো, আরে না। ওসব অনেক আগেই ভুলে গেছি। তবে এ কথা সত্যি ওদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। এইভাবে অপমানিত না হলে মনেহয় ক্যাডার হওয়ার ধৈর্যটা পেতাম না। মোবাইল থেকে বের করে একটা মেয়ের ছবিয়ে দেখিয়ে বললো, আগামী মাসে বিয়ে। আমি শুধু বললাম ভাই, কোথায় পাইলেন এই পরীরে। কথাশুনে ভাই কিছুক্ষন হাসলো। আবার দেখা হবে বলে বিদায় নিয়ে একসময় চলে আসি।

ক্যাম্পাসে থাকার কারনে ভাইয়ের বিয়েতে আর যাওয়া হয় নাই। আজ হঠাৎ এই ভাইয়ের কথা মনে পড়লো। গভীরভাবে ভাবতে ছিলাম জীবনের তিক্ততা তাকে অনেক কিছুই শিখিয়েছে। অবহেলিত এই মানুষগুলো একসময় ঘুরে দাঁড়াতে পারে। সত্যিকথা হচ্ছে মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলেদের অনেক স্বপ্ন থাকে, কিন্তু স্বপ্নগুলো ঝুলে থাকে কাঁটাতারে। যে জিনিসটা যখন পাওয়া দরকার ঠিক তখন পাওয়া হয়ে উঠে না। মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলেদের অনেক সংগ্রাম করে তাদের স্বপ্নগুলোকে বাস্তবায়ন করতে হয়। আর কিছুকিছু স্বপ্ন তো সময়ের সাথেসাথে হারিয়ে যায়। হয়তো ছেলেগুলো অনেক কষ্ট পায় কিন্তু লক্ষ্য থেকে পথ ভ্রষ্ট হয় না। মাঝেমধ্যে এই ভেবে খুব কষ্ট লাগে আমাদের দেশের মেয়েরা, অভিভাবকরা ক্যাডার পাত্র ছাড়া আর কাউকে বিয়ের যোগ্য মনেকরে না, ক্যাডার ছাড়া আর কাউকে সফল ভাবেন না কিন্তু এটাও তো নির্মম সত্যি সবাই তো আর ক্যাডার হতে পারবে না, হয় না। মেয়ে এবং মেয়েরা বাবারা মনেহয় এসব ভাবে না। আর ভাবার দরকারই কি? সবাই নিজের স্বার্থটাই চিন্তা করবে, এটাই স্বাভাবিক। এই ক্যাডার হওয়ার দৌড়ে দৌড়াচ্ছে ফার্স্টবেঞ্চ থেকে শুরু করে ভার্সিটির ব্যাকবেঞ্চের স্টুডেন্টরা। হয়তো সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন আমাকেও ক্যাডার হওয়ার দৌড়ে লম্বা দৌড় শুরু করতে হবে।।

পছন্দের আরো পোস্ট