রুশদেশের রোমিও-জোলিয়েট

ভালবাসার আকাঙ্ক্ষা, আকুলতা, উদগ্রীব, উচ্ছ্বাস, অভিলাশ মানুষকে সঞ্চালিত করে। বলতে গেলে হাজারও কষ্ট-যন্ত্রণা ব্যথা-বেদনা ভালবাসা একনিমিষেই ভুলিয়ে দেয়। তাই চিরন্তন ভাবে মানুষ ভালবসাকে খোঁজে, খুজে বেড়া্য় অনাবিল প্রশান্তি। এক ভালবাসার জন্য জন্ম হয়, আবার সেই এক ভালবাসার জন্যই মৃত্যু। সব কিছুতেই ভালবাসা অন্তর্নিহিত। কেউ ভালবাসায় সুখ পায়, আবার কেউ ভালবাসা না পেয়েও কল্পনাতে ছবি এঁকে ভালবাসার সুখ খোঁজে ।

রোমিও-জোলিয়েটদের কোন দেশ নেই। রোমিও-জোলিয়েটরা সকল দেশের, সকল কালের সকল বেলার। ভালবাসায় জাতি-বর্ণ-ধর্মে কোন ভেদাভেদ নাই। ভালবাসা সবকিছুর সীমা ছাড়িয়ে, দেশ প্রান্তর পেরিয়ে সর্বত্র সার্বজনীন। তাই বিশ্ব ভালবাসা দিবসের প্রক্কালে দেখতে গিয়েছিলাম জগত বিখ্যাত রোমিও-জোলিয়েট নৃত্যনাট্য রাশিয়ার ঐতিহাসিক বলশই থিয়েটারে। রোমিও-জোলিয়েট ব্যালে নৃত্য নিঃসন্দেহে বিশেষ উপলক্ষ্য। ব্যালে ডান্স হল কোন কাহিনীকে অবলম্বন করে ব্যালে শিল্পীদের নৃত্যনাট্য।

রুশদেশের রোমিও-জোলিয়েটকেউবা ভালবাসার ভিখারী, তা না পাওয়ায়। আর অনেকে অপেক্ষা ভালবাসা পাওয়ার। পক্ষান্তরে অনেকে আবার ভালবাসা সঞ্চয়ী ভবিষ্যতের আশায়। ফুলের সার্থকতা  সৌন্দর্য্য ও গন্ধ ছড়িয়ে, তেমনি মানুষের মনের সৌন্দর্য্যের বহিঃপ্রকাশ তার ভালবাসায়। সুন্দর যার মন সুন্দর তার ভালবাসা।

যুগান্তরের পালাক্রমে রোমিও-জোলিয়েটরা নশ্বর । ভালবাসা সে তো সংজ্ঞাহীন আবার বহুরূপী সংজ্ঞায়িত । ভালবাসা কেবলই স্বপ্ন, কল্পনার দ্রুম্রজাল । সেই ভালবাসা কবি খুঁজে পায় তার কবিতায় , শিল্পী তার শিল্পে । তেমনি ব্যালে নৃত্য এক অনন্য অসাধারণ শৈল্পিক  আবহ-মূর্ছনা। রোমিও-জোলিয়েট ব্যালে নৃত্য কি যেন এক মোহ, নৃত্যের কারুকার্য , ছন্দ-লয়-তালের যুগপদে ফুটিয়ে তুলেছিল ভালবাসাকে। যেন এক অভিভুত মনমুগ্ধকর আবহ সংগীত, নৃত্যনাট্য ।

Post MIddle

যথারীতি বলশই থিয়েটারের টিকিট দুষ্প্রাপ্য ও ব্যায়সাধ্য । ছাত্রদের জন্য তা সবসময় নাগালের বাইরে । তাই বলে কি জীবনের এই সেরা সময়ে, ভালবাসার স্বর্ণযুগে তা কি অধরাই থাকবে?  না!  তা কি করে হয়।  তবে আশার বানী হল ছাত্রদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা আছে। রাশিয়ায় আসার পর থেকে বলশই থিয়েটারের প্রতি একটি ইলোউশন  তৈরি হয়েছিল। আকাঙ্ক্ষার পারদ চাপ ছিল ঊর্ধ্বমুখী । অবশেষে রোমিও-জোলিয়েট দেখার মাধ্যমে কল্পনার রাজ্যে স্বপ্নের বাস্তব বিচরণ।

রুশদেশের রোমিও-জোলিয়েটবলশই থিয়েটারের বর্ণনা লেখনীর মাধ্যমে দেওয়া নিতান্তই মরীচিকা । যার রূপ ও চাকচিক্য একবার গমনে পিপাসা তৃপ্ত । জীবনে দ্বিতীয়বার আর প্রয়োজন নেই। ঐতিহাসিক এই থিয়াটার রুশজাতির শীর্ষ ও গৌরবের প্রতীক । অনুষ্ঠানের  শুরুতে ভদ্রতার কাদর্য সত্যিই নম্র ও বিনয়ী । বলশই থিয়েটারে ঐতিহাসিক হল এর কারুকাজ অনন্য বৈশিষ্ট্য সম্বলিত । এ থেকে স্পষ্টত যে, কোন জাতি তার ভাষা, সাহিত্য- সংস্কৃতিতে যত সমৃদ্ধ, সে জাতি  সত্যিকার অর্থেই তত বেশি গর্বিত।

রোমিও-জোলিয়েট এর গল্প জানে না , এমন মানুষ খুজে মেলা ভার । কিন্তু লিখিত গল্প কিংবা অভিনিত চিত্রনাট্য ছাড়াও যে নৃত্যনাট্যের ভাষায় প্রকাশ করা যায় মনের ভাষা, ভালবাসা তা চক্ষু কর্ণে বিবাদ বঞ্জন না করলে হয়তো অজানাই থাকত। নৃত্যও যে মনের ভাষা প্রকাশ করে তা সত্যিই অনিন্দ সুন্দর। ক্ষেত্র বিশেষে যেমন ভালবাসার জন্য  ভাষার প্রয়োজন হয় না, তেমনি নৃত্যের ভাষায় বলে দেওয়া যায় ভালবাসার কথা। রোমিও জোলিয়েটের সাথে নৃত্যের মাধ্যমে পরিচয়, নৃত্যের সাহায্যে ভালবাসা বিনিময়, অভিসার, প্রণয় আর এই নৃত্যের মাধ্যমেই পরিনিতি। মরণে যদি ভালবাসা সার্থক হয় যদি পূর্ণতা পায় তবে সে মরণ ভালবাসার মরণ নয়। মরিয়া ভালবাসা পরিস্ফুটিত হইল।

কবি কল্পনাকে আকরে ধরে, মায়াবীকে ভালবেসে অতিবাহিত করেছেন অসংখ্য বসন্ত। আর তাদের জন্য শুভকামনা যারা সেই বসন্তের প্রতিক্ষায়। কে হবে আমার বাসন্তী, ভ্যালেন্টাইন !

পছন্দের আরো পোস্ট