মহাকাশের পথে ব্র্যাকের তৈরি ন্যানো স্যাটেলাইট

বুধবার (৮ ই ফেব্রুয়ারী) ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক সৈয়দ সাদ আন্দালিব জাপানের কিতাকিউশুতে অবস্থিত কিউশু ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (কেআইটি) থেকে বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয় কতৃক তৈরি ১ম ন্যানো স্যাটেলাইট ব্র্যাক অন্বেষা গ্রহন করেন।একই অনুষ্ঠানে ন্যানো স্যাটেলাইটটি আনুষ্ঠানিকভাবে জাপান অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সির কাছে মহাকাশে উৎক্ষেপণের জন্য হস্তান্তর করা হয় । জাপা্নের কিতাকিউশু থেকে বাংলাদেশের স্থানীয় সময় দুপুর ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাখালী ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয় ভিডিও কনফারেন্স এর মাধ্যমে।

বিটিআরসি চেয়ারম্যান ডঃ শাজাহান মাহমুদ, বাংলাদেশে জাপানের দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি তোশিয়ুকি নোগুচি, বুয়েটের কম্পিউটার কৌশল বিভাগের অধ্যাপক ডঃ কায়কোবাদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাথমেটিক্স অ্যান্ড ন্যাচারাল সায়েন্স বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ডঃ জিয়াউদ্দীন আহমেদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক সৈয়দ সাদ আন্দালিব পিএইচ.ডি. জাপান থেকে ভিডিও কনফারেন্স এর মাধ্যমে উপস্থিত অতিথি ও সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন।ভিডিও কনফারেন্সে আরো উপস্থিত ছিলেন কিউশু এর প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ইউজি অই ও কিউশু এর ল্যাবরেটরি অফ স্পেসক্রাফট এনভারনমেন্ট ইন্টারাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং এর পরিচালক মেংগু চো। মহাকাশে উৎক্ষেপণের আগে এটিই ছিল বাংলাদেশের ব্র্যাক অন্বেষা দেখার শেষ সুযোগ।

বিটিআরসি চেয়ারম্যান ডঃ শাজাহান মাহমুদ তার বক্তব্যে ন্যানো স্যাটেলাইট প্রকল্পের উদ্যোক্তা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী রায়হানা শামস্ ইসলাম, আবদুল্লা হিল কাফি ও মাইসুন ইবনে মনোয়ারকে তাঁদের অর্জনের জন্য অভিনন্দন জানান এবং বিটিআরসিতে এর উপর একটি ওয়ার্কশপ আয়োজন এর আমন্ত্রন জানান। তিনি এই শিক্ষার্থীদেরকে বংগবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্পে কাজ করার আহ্ববান জানান। তিনি আরো বলেন ডিসেম্বর নাগাদ ‘বংগবন্ধু স্যাটেলাইট -১’ ফ্লোরিডা থেকে মহাকাশে উৎক্ষেপণ হবে।

অধ্যাপক ডঃ জিয়াউদ্দীন আহমেদ বলেন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অর্জনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও প্রযুক্তি বিনিময়ের ক্ষেত্রে একটি নতুন যুগে প্রবেশ করে। তিনি দেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশের ক্ষেত্রে স্থানীয় জনশক্তির দক্ষতা বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

Post MIddle

জাপান থেকে ভিডিও কনফারেন্স এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক সৈয়দ সাদ আন্দালিব পিএইচ.ডি. তার বক্তব্যে বাংলাদেশ সরকার, বিটিআরসি ও স্পারসোকে ধন্যবাদ জানান তাঁদের সহায়তার জন্য। তিনি বলেন , ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশের জন্যেও এই অর্জন স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বাংলাদেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যাক্ত করেন। তিনি শিক্ষার্থীদের পরস্পরের মাঝে সৌহার্দ্যপূর্ন সম্পর্ক বিকাশ এবং সৃষ্টিশীল কাজে মনোনিবেশ করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

কিউশু এর ল্যাবরেটরি অফ স্পেসক্রাফট এনভারনমেন্ট ইন্টারাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং এর পরিচালক মেংগু চো ভিডিও কনফারেন্স এর মাধ্যমে বলেন ন্যানো স্যাটেলাইট তৈরি তূলনামূলক সহজ এবং কম ব্যায়বহুল। মহাকাশবিজ্ঞানের সাথে শিক্ষার্থীদের যুক্ত ও আগ্রহী করাই এর উদ্দেশ্য।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে প্রকল্পের অন্যতম উদ্যোক্তা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবদুল্লা হিল কাফি জাপান থেকে ভিডিও কনফারেন্স এর মাধ্যমে বলেন কৃষিকাজ, দুর্যোগ মোকাবিলা , নগরায়ন সহ নানা বিষয়ে গবেষনার জন্য উচ্চমানের ছবি তুলে পাঠাবে স্যাটেলাইটটি।মহাকাশসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে গবেষনা ও পর্যবেক্ষন করা হবে এর অন্যতম কাজ। এছাড়া ন্যানো স্যাটেলাইটটি মহাকাশে বিশেষ বিশেষ দিনে জাতীয় সংগীত বাজাবে।ন্যানো স্যাটেলাইটটি পৃথিবী হতে ৪০০ কিলোমিটার ওপরে অবস্থান করবে এবং পৃথিবীর চারপাশে প্রদক্ষিন করে আসতে ৯০ মিনিট সময় নিবে। এটি বাংলাদেশের উপর দিয়ে দিনে ৪ থেকে ৬ বার উড়ে যাবে।

গত জুনে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ন্যানো স্যাটেলাইট নির্মাণ ও মহাকাশে তা উৎক্ষেপণের জন্য জাপানের কিউশু ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির সঙ্গে চুক্তি করে। নকশা তৈরি, উপকরণ সংগ্রহ, তারপর ন্যানো স্যাটেলাইট বানানো—সব কাজই করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়েরই তিন শিক্ষার্থী। রায়হানা,কাফি ও মনোয়ার। তিনজনই ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল (ইইই) বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নিয়েছেন। এখন স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে পড়ছেন জাপানের কিউশু ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (কেআইটি)।

জাপান অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সির মাধ্যমে ন্যানো স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের কাজ হলেও ভূমি থেকে নিয়ন্ত্রণের গ্রাউন্ড কন্ট্রোল স্টেশন হচ্ছে বাংলাদেশেই।ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে আরেক দল শিক্ষার্থী, মোজাম্মেল হক, সানন্দ জগতি, বিজয় তালুকদার ও আইনুল হুদা স্টেশন তৈরির কাজে রয়েছেন। গ্রাউন্ড স্টেশন নির্মাণে সার্বক্ষনিক সহায়তা করছে বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন সংস্থা (স্পারসো)।ন্যানো স্যাটেলাইট প্রকল্পের প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডঃ মো. খলিলুর রহমান।##

পছন্দের আরো পোস্ট