সপ্তাহজুড়ে অচল কুবিঃ সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেই

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে চলে আসা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি আন্দোলনে স্থবির হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম। এতে করে ক্রমে ক্রমেই দীর্ঘায়িত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন। অথচ এদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই প্রশাসনের, সমস্যা সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ মহল থেকে এখনও পর্যন্ত কার্যকরী কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের।

Post MIddle

ক্যাম্পাস সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে শিক্ষকের বাসায় হামলার রহস্য উৎঘাটন করে দ্রুত দোষীদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা, গত বছরের ১ আগষ্ট ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত খালিদ সাইফুল্লাহ হত্যাকান্ডের বিচার, শিক্ষক লাঞ্ছনায় অভিযুক্ত এম এম শরীফুল করীমকে সকল পদ থেকে অব্যাহতিসহ ছয় দফা দাবির প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) ক্লাস বর্জন ও রোববার (২২ জানুয়ারি) থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের মাধ্যমে সপ্তাহব্যাপী টানা আন্দোলন করে আসছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।

একই সাথে শিক্ষার্থীরাও ক্লাস-পরীক্ষা চালু, শিক্ষকের বাসায় হামলার সাথে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করা, ক্যাম্পাসের অবকাঠামোগত উন্নয়নের দাবিসহ মোট ১১ দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। আন্দোলনের প্রথম দিনে গত রোববার শিক্ষক সমিতির ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের প্রতিবাদ ও ক্লাস-পরীক্ষা চালুসহ ১১ দফা দাবিতে দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন এবং বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে। দ্বিতীয় দিন সোমবারেও তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি অব্যাহত ছিল। তৃতীয় দিন মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের চতুর্থ দিন বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে রাত সাড়ে ৯ টা পর্যন্ত প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে বৃহস্পতিবার বিকাল ৫ টার মধ্যে শিক্ষকদের সাথে আলোচনায় বসে ক্লাস-পরীক্ষা চালুর ইতিবাচক সিদ্ধান্ত জানাবে বলে শিক্ষার্থীদের জানানো হলে শিক্ষার্থীরা তালা খুলে দেয়। তবে পরদিন বৃহস্পতিবার শিক্ষক সমিতি বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্লাস-পরীক্ষা চালুর কোন ধরনের সিদ্ধান্ত না পেয়ে বিকেল ৫টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা ও সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা।

ক্যাম্পাস সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অদূরে নাজির ভিলার ২য় তলায় তারিক হোসেনের বাসায় দরজা ভেঙ্গে বেশ কয়েকজন মুখোশধারী লোক ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। হামলার ঘটনা টের পেয়ে পাশের ফ্ল্যাট থেকে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক আশিখা আক্তার ও তার শ্বশুর ছুটে এলে দুবৃর্ত্তরা আশিখা আক্তারের শ্বশুরকে চাপতি দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। চেঁচামেচিতে দুর্বৃত্তরা সটকে পরার সময়ে ঐ শিক্ষকের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। পরে সকালে ঘটনাস্থলে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ ও প্রক্টরসহ শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দরা যান। পরে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানা থেকে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।

হামলার ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষক একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তারিক হোসেন জানান, ‘কেন বা কারা আমার বাসায় হামলা করলো তা আমি জানিনা। ব্যক্তিগতভাবে আমার সাথে কারো কোন শত্রুতা নেই।’ এছাড়াও মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি কোন মামলা করবো না। আমার বাসায় হামলার বিষয়টি বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন জেনেছে। তাই আমি মনে করি বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া।’

এ বিষয়ে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম জানান, ‘খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোন ধরনের মামলা দায়ের না হওয়ায় আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিতে অপারগ। যেহেতু ভিকটিম সুস্থ আছেন, সেহেতু তিনি নিজেই মামলা করতে পারেন।’

শিক্ষকদের আন্দোলনের বেড়াজালে পড়ে প্রথমদিকে শিক্ষার্থীরা ১১ দফা দাবির প্রসঙ্গ আনলেও সপ্তাহান্তে তারা শুধুমাত্র ক্লাস-পরীক্ষা চালুর দাবিতেই সোচ্চার ছিলেন। লাগাতার এই আন্দোলনে এখন পর্যন্ত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের সর্বমোট ২৪টি চুড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে বলে জানান উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ নূরুল করিম চৌধুরী। এতে করে শিক্ষার্থীরা তীব্র সেশন জটের আশঙ্কায় আছেন।

আন্দোলনরত একাধিক সাধারণ শিক্ষার্থীর সাথে আলাপকালে তার জানায়, আমরাও চাই শিক্ষকের বাসায় হামলার ঘটনার বিচার হোক। কিন্তু এ ছাড়া শিক্ষকদের আভ্যন্তরীণ অন্য কোন দাবি-দাওয়ার প্রেক্ষিতে আমাদের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রাখার কোন যৌক্তিকতা দেখিনা। আমরা নিজের বাবা-মা’র কষ্টের বিনিময়ে উপার্জিত অর্থ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করতে এসেছি। শিক্ষকদের আন্দোলনের ফাঁদে পড়ে আমরা নিজেদের শিক্ষাজীবন দীর্ঘায়িত করতে রাজি নই।

এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো: আবু তাহের বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাইলেই সংকট নিরসন করতে পারেন। শিক্ষকের বাসায় হামলার ঘটনায় প্রশাসন মামলা করুক এবং আমাদের অন্য দাবি গুলো মেনে নেয়ার আশ্বাস দিলেই আমরা ক্লাসে ফিরে যাবো।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ আলী আশরাফ বলেন, ‘শিক্ষক সমিতি শিক্ষক লাঞ্চনার বিচার চাইতে এসে আমার সামনে আঙ্গুল তুলে টেবিল চাপড়িয়ে যে ভাবে বিচার চেয়েছেন সেটা কতটুকু যৌক্তিক? আমি এর বিচার কার কাছে চাইবো? এর পরও বিষয়টি নিয়ে হাই পাওয়ার তদন্ত কমিটি করে দিয়েছি। শিক্ষকের বাসায় হামলার বিষয়ে প্রশাসনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছি এবং শিক্ষক সমিতির বাকি দাবি গুলো আগামী সিন্ডিকেটে উত্থাপন করা হবে বলে তাদেরকে আশ্বস্ত করে তাদেরকে ক্লাসে ফিরে যেতে আহ্বান জানিয়েছি।’#

আরএইচ

পছন্দের আরো পোস্ট