কুবি শিক্ষক সমিতির ক্লাস বর্জনের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) শিক্ষকের বাসায় হামলার ঘটনায় শিক্ষক সমিতির ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ শিক্ষার্থী পরিষদ। রোববার সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যলয়ের প্রধান ফটকের সামনে তারা এ মানববন্ধন করে। পরে তারা সোমবার থেকে (২৩ জানুয়ারি) ক্লাস-পরীক্ষা চালুসহ ১১ দফা দাবি সম্বলিত উপাচার্য বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করে। দাবী আদায় না হলে লাগাতার কর্মসূচি দেয়ারও ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার ভোর ৪টার দিকে একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কোষাধ্যক্ষ তারিক হোসেন এবং অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক মোছাঃ আশিখা আক্তারের বাসায় ১০-১২ জনের মুখোশধারী একটি দল তাদের বাসার দরজা ভেঙ্গে হামলা চালায়। এ ঘটনার পর দিন বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার প্রক্টরসহ বিশ্ববিদ্যলয় শিক্ষক নেতারা এবং পুলিশ প্রশাসন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মামলা না করায় বা কোন ধরনের পদক্ষেপ না নেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি রোববার থেকে লাগাতার ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে।

এই ঘটনার বিচার দাবিকে কেন্দ্র করে শিক্ষক সমিতির ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা এর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও সোচ্চার ছিলেন। এরপর তারা আজ রোববার সকালে ক্যাম্পাসের সামনে ক্লাস পরীক্ষা চালুর দাবিতে মানববন্ধন করে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। স্মারক লিপিতে উল্লেখ করা হয়, শিক্ষকদের বাসায় যে ডাকাতি হয়েছে আমরা তার তীব্র নিন্দা ও সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচারের দাবি জানাই। কিন্তু এই কারণে আমাদের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রাখা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। তাই অনতিবিলম্বে আমাদের ক্লাস-পরীক্ষা চালু করে ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে কর্তৃপক্ষ বরাবর আহবান জানাচ্ছি।

এদিকে শিক্ষকের বাসায় দুর্বৃত্তদের ডাকাতির চেষ্টা ও শিক্ষক সমিতির ক্লাস বর্জনের তীব্র নিন্দা জানিয়ে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বঙ্গবন্ধু পরিষদের একাংশ।

Post MIddle

ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে শিক্ষকদের আন্দোলন কতটা যৌক্তিক জানতে চাওয়া হলে শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরাও চাইনা ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকুক। যখন আমাদের কোন নিরাপত্তা নেই, তখন কিভাবে ক্লাসে এসে শিক্ষার্থীদের সাথে জ্ঞান শেয়ার করবো। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুক, তবেই আমরা ক্লাসে ফিরবো।’ এর আগের কোন ঘটনারই বিচার করেনি প্রশাসন-অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘এমনকি খালেদ সাইফুল্লাহ হত্যাকা-ের কোন বিচারও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন করেনি।’

শিক্ষকের বাসায় হামলার ঘটনার বিষয়ে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানার ওসি মোঃ নজরুল ইসলাম পিপিএম বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। যেহেতু ভিকটিম সুস্থ তাই তিনি নিজে মামলা করবেন। যেহেতু ঐ এলাকায় এর আগেও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে তাই তিনি যদি মামলা করতেন বা আমাদের তথ্য দিতেন তাহলে আমরা দ্রুত কাজ করতে পারতাম। আর এ ঘটনা নিয়ে শিক্ষক সমিতি ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের যে ঘোষণা দিয়েছে তা অযৌক্তিক। তবে শিক্ষকদের ইন্টারনাল কোন ঝামেলার কারণে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রাখলে সেটা অন্য ব্যাপার।’

জানতে চাওয়া হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ আলী আশরাফ বলেন, ‘শিক্ষকের বাসায় ডাকাতির ঘটনায় আমি কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। তারপরও ঘটনার পরেই আমি, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার ও প্রক্টর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। সাথে সাথে পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়েছি এবং দ্রুত ব্যবস্থা নিতে তাদের অনুরোধ করেছি। মামলার বিষয়ে আমরা পুলিশ প্রশাসনের সাথে কথা বলেছি তারা আমাদের জানিয়েছে যেহেতু এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের ঘটনা সে ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নয় ভিকটিম নিজেই মামলা করতে হবে।’

সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শিক্ষক সমিতির সাথে কথা বলে তাদেরকে ক্লাসে ফিরে আসার অনুরোধ করবো। কারণ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীই ক্যাম্পাসের প্রাণ। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের অন্য দাবিগুলোও ক্রমান্বয়ে পূরনের চেষ্টা থাকবে।’

পছন্দের আরো পোস্ট