ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে জঙ্গি বিরোধী প্রচার অভিযান শুরু

অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম.এ.মান্নান এমপি বলেছেন, তামাক সারা পৃথিবীতে স্বীকৃত শত্রু। আমরা বিভিন্ন আইন প্রণয়ন ও করারোপের মাধ্যমে তামাক ও মাদক নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, তামাক ও মাদকের প্রতি সরকারের কোন প্রীতি নেই। যে কোন মূল্যে পর্যায়ক্রমে এটিকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে।

বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) বেলা ১২ টায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে তামাক, মাদক ও জঙ্গিবাদ বিরোধী জোট (ক্যাট) এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ আয়োজনে জঙ্গি বিরোধী প্রচার অভিযান ২০১৭’র উদ্বোধনী এবং তামাক, মাদক ও জঙ্গিবাদ বিরোধী আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, একটি মহল দেশে জঙ্গি সৃষ্টি করে বর্তমান সরকারের সকল উন্নয়ন কর্মকান্ড বাঁধাগ্রস্থ করার চেষ্টা করছে। তাদের অনেকেই উচ্চ শিক্ষিত। তাদের কথা বলার অধিকার আছে। তিনি তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, অন্তরালে না থেকে, সরকারের সাথে আলোচনায় আসুন, আপনাদের বক্তব্য সরকারকে জানান। আমরা আলোচনায় বিশ্বাসী। আপনারা যদি নিয়মতান্ত্রিক পথে দীর্ঘ মেয়াদী আলোচনা করতে চান তাতেও আমাদের কোন আপত্তি নাই। কিন্তু তা না করে যদি অপরাধের পথে পা বাড়ান তাহলে আপনাদেরকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতেই হবে। তিনি বলেন, অপরাধের পথ ছাড়ুন। অনেক কষ্টে স্বাধীনতা অর্জন করেছি, এটিকে টিকিয়ে রাখবোই।

তিনি আরও বলেন, আমাদের সঠিক ইতিহাস জানা প্রয়োজন। অর্ধসত্য, অসত্য অনেক তথ্য আমাদের ইতিহাসে জড়িয়ে আছে। মহান স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস জানতে হবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাঙালি হিসেবে আমরা সব সময় পরাজিত ছিলাম। ১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে প্রথম স্বাধীনতা পেয়েছি। স্বাধীনতাকে সুরক্ষা করতে হবে। আমাদেরকে স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস পাঠ করতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বৈষয়িক উন্নতি হচ্ছে। মাথাপিছু আয়, জাতীয় আয়, বিদ্যুৎ, শিক্ষা, অবকাঠামো, স্বাস্থ্য, কৃষিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটছে। আমরা ক্ষুধা দুর করতে পেরেছি। কোটির অধিক ভাই-বোন সারা বিশ্বে পরিশ্রম করছে। দেশের ভিতরেও অসংখ্য মানুষ উদয়াস্থ পরিশ্রম করছে। সকলের মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা এখন মধ্যবিত্ত রাষ্ট্রের মর্যাদা পেয়েছি।

তিনি বলেন, জাতির পিতা তাঁর কাজ শুরু করার আগেই শহীদ হন। জাতির পিতার কন্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে চলেছেন। বর্তমানে এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে পরীক্ষিত ও অভিজ্ঞ নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিতে তাঁকে টিকিয়ে রাখতে হবে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্যে বলেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক, প্রশাসনিক, গবেষণাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য টেকসই প্রকল্প গ্রহণ করুন। সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর ও ক্যাটের সিনিয়র সহ-সভাপতি প্রফেসর ড. মোঃ হারুন-উর-রশিদ আসকারী’র সভাপতিত্বে আলোচনাসভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ শাহিনুর রহমান, ট্রেজারার প্রফেসর ড. মোঃ সেলিম তোহা, ক্যাটের উপদেষ্টা কবি আসলাম সানি, সহ-সভাপতি ড. সাহাদাত হোসেন নিপু ও চিত্র শিল্পী আশরাফুল আলম পিপলু। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ক্যাটের নির্বাহী সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই নিউজের সম্পাদক সাংবাদিক আলী নিয়ামত।

সভাপতির বক্তৃতায় ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ হারুন-উর-রশিদ আসকারী বলেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে আজ একটি অন্যতম প্রধান স্মরণীয় দিন। বাংলাদেশ সরকারের জঙ্গিবাদ বিরোধী এজেন্ডা বাস্তবায়নের দায় কাঁধে নিয়ে ক্যাট দেশব্যাপী বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে জঙ্গিবাদ বিরোধী চৈতন্য বিনির্মাণের প্রত্যয়ে যে অভিযাত্রা শুরু করেছে তার শুভ উদ্বোধন হলো ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে। এজন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার গর্বিত। ইতোপূর্বেও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে জঙ্গিবাদ ও মাদকের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক র‌্যালি করা হয়েছে।

Post MIddle

তিনি এমডিজি ও এসডিজি-তে বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক সাফল্যের চিত্র তুলে ধরে বলেন, সরকারের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিরাট প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে জঙ্গিবাদ। বিভিন্নভাবে আমাদের দেশে বিদেশী অতিথিদের হত্যাকরে বিদেশী বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাদের যুব সমাজকে মাদকাসক্তির দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। তামাক ও মাদকে আসক্ত হয়ে যুবসমাজের কর্মক্ষমতা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। এর ছোবল থেকে যুব সমাজকে রক্ষা করতে হবে।

তিনি সরকার কর্তৃক জঙ্গি ও মাদকবিরোধী যে কোন কর্মসূচিতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে বলেও প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ায় ভাইস-চ্যান্সেলর ড. হারুন-উর-রশিদ আসকারী প্রতিমন্ত্রীর প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। তিনি ক্যাটের নেতৃবৃন্দসহ এ আয়োজনে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতিও আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

সভায় বিশেষ অতিথি প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ শাহিনুর রহমান বলেন, মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে পরাজিত শক্তি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যাসহ ৭৫’র পরবর্তী দেশে নানাভাবে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে চলেছে। তারা ছদ্মবেশে নেতৃত্বে দিয়ে সরকারের উন্নয়ণ বাঁধাগ্রস্থ করছে। তিনি বলেন, আমরা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় জঙ্গিমুক্ত। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তামাক ও মাদকমুক্ত থাকবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

অপর বিশেষ অতিথি ট্রেজারার প্রফেসর ড. মোঃ সেলিম তোহা বলেন, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে, যার অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল এদেশের যুবসমাজ। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডে জঙ্গি ও মাদকের কালো থাবা আমরা দেখতে চাই না।

আলোচনাসভা পরিচালনা করেন ফোকলোর বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. মোহাঃ সাইদুর রহমান ও আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আরমিন খাতুন।

আলোচনাসভার পূর্বে বেলা সাড়ে ১১টায় প্রশাসন ভবন চত্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রতিমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। এরপর ভাইস-চ্যান্সেলরের সভাকক্ষে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের নব নির্বাচিত শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দের সাথে সংক্ষিত মতবিনিময় করেন প্রতিমন্ত্রী এম.এ.মান্নান এমপি।

বেলা ১১.৪৫ টায় সকল পর্যায়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে প্রশাসন ভবন চত্বর হতে তামাক, মাদক ও জঙ্গিবাদ-বিরোধী র‌্যালি বের করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগ, অফিসসমূহ, হলসমূহ এবং সকল পর্যায়ের সমিতি ও ফোরাম, ইবি ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজ তাদের নিজ নিজ ব্যানার নিয়ে স্মরণকালের এই বৃহত্তম র‌্যালিতে অংশগ্রহণ করে। আলোচনাসভা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।##

পছন্দের আরো পোস্ট