জাবিতে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ১৬তম পাখি মেলা

কুয়াশা মুড়ানো শীতের সকালের অতিথি পাখির কিচিরমিচির শব্দ শোনা আর জলকেলি দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আছে হাজারো দর্শনার্থী পাখির স্বর্গরাজ্য বলে পরিচিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে।

প্রতি বছরের ন্যায় এবারো ‘পাখ-পাখালি দেশের রত্ন, আসুন করি সবাই যত্ন’ স্লোগানকে ধারণ করে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ১৬তম পাখি মেলার আয়োজন করে।

আর এ পাখি মেলায় ইট পাথরের শহরের ক্লান্তি দূর করার জন্য এবং ক্ষণিকের জন্য আনন্দ উপভোগ করার জন্য পরিবার নিয়ে ছুটি আসে হাজারো মানুষ।

তেমনি আশুলিয়া থানার পল্লী বিদ্যুৎ এলাকা থেকে পাখি মেলা দেখতে এসে আসমা পারভীন বলেন, পাখি মেলায় এবারই আমার প্রথম আশা। বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষের এ ধরণের আয়োজন খুবই প্রশংসার দাবিদার। পাখি না মেরে পাখি সংরক্ষণে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এতে যেমন আমাদের প্রকৃতি ভাল থাকতে আর প্রকৃতি ভাল থাকলে আমরা ভাল থাকবো।

মেলায় মায়ের সঙ্গে পাখি মেলা দেখতে এসে সাভার মনিং গ্লোরিয়াস স্কুলের ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্রী লাবিয়া আহমেদ বলেন, পাখি দেখতে আমার খুব ভাল লাগে, তাই পাখি মেলায় এসেছি। পাখি অঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করেছি। এখন আম্মুর সঙ্গে অতিথি পাখি দেখবো।

শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের আয়োজনে এ মেলা উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয় কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবুল খায়ের।

Post MIddle

উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সংঘাত নিরন্তর। তার পরেও প্রকৃতির খুঁনিনাটি জানা প্রত্যেক মানুষের প্রয়োজন। কারণ প্রকৃতিই মানুষের জীব ধারণের একমাত্র উপজীব্য বিষয়। তাই জীব বৈচিত্র ও প্রাক বৈচিত্র সম্পর্কে আমাদের যেমন সচেতন থাকতে হবে ঠিক শিশু কিশোরদের মধ্যে সচেতনা বৃদ্ধি করতে হবে।

এ সময় তিনি প্রকৃতি সংরক্ষনের জন্য আলাদা বাজেট ঘোষণা করবেন বলে জানান। একই সঙ্গে পাখি মেলার আয়োজককে ধন্যবাদ জানান।

অধ্যাপক এটিএম আতিকুর রহমানের সঞ্চালনায় এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন আরণ্যক ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, আই ইউ সি এন এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি ইশতিয়াক উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ইনাম আল হক, বাংলাদেশ বন বিভাগের সিএফ অসিত রঞ্জন পাল, ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক মোস্তফা ফিরোজ, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো. মনোয়ার হোসেন, অধ্যাপক সাজেদা বেগম প্রমুখ।

পাখি মেলার দিনব্যাপী আয়োজনের মধ্যে ছিল, আন্ত:বিশ্ববিদ্যালয় পাখি দেখা প্রতিযোগিতা, শিশু কিশোরদের জন্য পাখির ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পাখি বিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদক উপস্থাপক, টেলিস্কোপে শিশু কিশোরদের পাখি পর্যবেক্ষণ, স্টল সাজানো প্রতিযোগিতা (পাখির আলোকচিত্র ও পত্র-পত্রিকা প্রদর্শনী), আন্ত:বিশ্ববিদ্যালয় পাখি চেনা প্রতিযোগিতা (অডিও-ভিডিও এর মাধ্যমে), পাখি বিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতা (সবার জন্য উন্মুক্ত)। সবশেষে পুরস্কার বিতরণী ও সমাপনী অনুষ্ঠান।

এবারের পাখি মেলায় নতুন পাখি সনাক্ত করায় তিন জনকে বিগবার্ড এ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। এ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তরা হলেন, মিজানুর রহমান মিঠু, সালাহ উদ্দিন জাহিদ, নাজমুল হুসাইন নিশাদ।

মেলার আহ্বায়ক প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. কামরুল হাসান বলেন, পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রতি বছর এ মেলার আয়োজন করে থাকে।

২০০১ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের আয়োজনে এ পাখি মেলা হয়ে আসছে।

পছন্দের আরো পোস্ট