১৪৪ বছরে রাজশাহী কলেজ

Rajsahi Collageউত্তর বঙ্গের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপিঠ রাজশাহী কলেজ ১৪৩ অতিক্রম করে ১৪৪ বছরে পদার্পণ করেছে। একজন মুসলিম ছাত্র সহ মোট ছয়জন ছাত্র নিয়ে ১৮৭৩ সালের পহেলা এপ্রিল কলেজিয়েট স্কুলের সঙ্গে বর্তমান রাজশাহী কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির সমমানের ফার্স্ট আর্টস কোর্স চালু হয়।

প্রমত্তা পদ্মা নদীর তীর ঘেঁসে ৩৫ একর জমির উপর দাঁড়িয়ে জ্ঞানের আলো জ্বালিয়ে যাচ্ছে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। রাজশাহী শহরে যে শিক্ষা বৃক্ষের বীজ বপন করা হয়েছিল তা আজ এক ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে।

শিক্ষা-দীক্ষায়, শিল্প-সাহিত্যে, মননে-সৃজনে, বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে অসাধারণ সাফল্য দেখিয়ে দেশের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। বিভাগের সকল ক্লাশে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার ৮০ভাগে উত্তির্ণ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠে পরিনত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ক্লাশ মুখি করার এই প্রচেষ্ঠার ফলে সফলতার সাথে প্রতিবছর হাজার শিক্ষার্থী শিক্ষাজীবন করছে। দেশের অন্যতম পাঠদানে শ্রেষ্ঠ কলেজের পথে এগিয়ে যাচ্ছে বলে শিক্ষা মন্ত্রনালয় তাদের পর্যবেক্ষণে মন্তব্য করেছেন।

রাজশাহী শহরে কলেজ প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে নওগাঁর দুবলহাটির রাজা হরনাথ রায় চৌধুরী ১৮৭২ সালে তাঁর জমিদারির একটি অংশ রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলকে দান করেন। এরই ধারাবহিকতায় ১৮৭৮ সালে বি.এ এবং মাস্টার্স কোর্স খোলার অনুমতি প্রদান করা হয়।

বর্তমানে কলেজের এইচএসসিসহ ২৪টি বিভাগে স্নাতক সম্মান, স্নাতকোত্তর ও ডিগ্রি পাস কোর্সে পড়ানো হয়। অধ্যয়ন করছে প্রায় ২৭ হাজার শিক্ষার্থী । কর্মরত রয়েছেন ২৪৮জন শিক্ষক ।

Post MIddle

পশ্চিম বঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বিখ্যাত রাজনীতিবিদ জ্যোতি বসু, উপমহাদেশের খ্যাতিমান চলচ্চিত্র পরিচালক ঋত্বিক ঘটক, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য স্যার যদুনাথ সরকার, বৈজ্ঞানিক প্রথায় ইতিহাস চর্চার পথিকৃত অন্যতম সাহিত্যিক অক্ষয় কুমার মৈত্র, সাবেক প্রধান বিচারপতি হাবিবুর রহমান, জননেতা ও শিক্ষানুরাগী মাদার বখশ, বাংলাদেশের চার জাতীয় নেতার একজন এ এইচ এম কামারুজ্জামানের মতো বরেণ্য ব্যক্তিত্ব এ কলেজের ছাত্র ছিলেন।

কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মহা. হবিবুর রহমান জানান, একবিংশ শতব্দীর প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাজশাহী কলেজকে ডিজিটালাইজড করা হয়েছে। কলেজের নিরাপত্তা বিধান করতে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। সকল শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে ওয়াই ফাই সুবিধা দেওয়া হয়েছে । ৮৮টি শ্রেণিকক্ষকে মাল্টিমিডিয়ায় রূপান্তর করা হয়েছে। তার জন্য শিক্ষকদের দেওয়া হয়েছে ৪৫০টি ল্যাপটপ। কলেজের যাবতীয় তথ্য প্রদর্শনের জন্য প্রশাসন ভবনে এলইডি সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে।

অধ্যক্ষ কলেজের অর্জনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন কলেজকে আধুনিকীকরণ ও শিক্ষাক্ষেত্রে আধুনিক এবং ডিজিটাল ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য তিনি বিভাগীয় ‘ইনোভেশন এ্যাওয়ার্ড-২০১৬’ লাভ করেছেন। বিভাগীয় ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলায় রাজশাহী বিভাগে শ্রেষ্ঠ কলেজ হিাসেবে গৌরব অর্জন করেছে। এছাড়া উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ২০১৩ ও ২০১৪ সালে রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডে প্রথম স্থান অর্জন করে এবং ২০১৪ সালে সরকারি কলেজের মধ্যে শ্রেষ্ঠ স্থান লাভ করে। কলেজ পর্যায়ে বৃহত্তম মানব পতাকা প্রদর্শন করেছে এই কলেজ।

তিনি আরো জানান, কলেজ ক্যাম্পাসকে ধূমপানমুক্ত ক্যাম্পাস ঘোষণা করে সৌন্দর্য বর্ধনে ফুলের বাগান ও সারি সারি বিভিন্ন প্রজাতির গাছ।

সব শেষে তিনি বলেন প্রতিজ্ঞা নিয়ে রাজশাহী কলেজ যাত্রা শুরু করেছে সেই প্রতিজ্ঞা অক্ষুন্ন রাখার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে কলেজের সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা কর্মচারিবৃন্দ। আসন্ন সার্ধশত বার্ষিকী পালনের প্রাক্কালে এই কামনা সকলের।

পছন্দের আরো পোস্ট