ছোটগল্প- ‘মিল্কক্যান্ডি’

sayeemআমরা ৪ জন। বিকল্প, নেচার, ফেমাস আর আমি। আল্লাহর রহমতে আমাদের ৪ জনের কারোরই গার্লফ্রেন্ড নাই। তাই প্রতিদিন বিকেল বেলা আমরা ৪ জন ক্যাম্পাসে ইচ্ছামতো ঘুরাঘুরি করি। কপোত-কপোতীদের রঙ্গলীলা দেখতে দেখতে রাতের বয়স বাড়লে হলে চলি আসি। এমনই সাদামাটা রুটিন আমাদের। প্রতিদিনের মতো সেদিনও শহীদ মিনারে আড্ডা দিচ্ছিলাম। হঠাৎ ৪ টা মেয়ে আসলো। আমাদের থেকে একটু দূরে দাঁড়ালো। নেচার তার নেচার মতো ‘এই পদ্মা এই মেঘনা’ গানটি ধরলো। অন্যরা তাতে সুর মেলালো। আমি মাত্র এক লাইন গেয়েছি আর অমনি গলার ভেতর কি যেনো আটকে গেলো। শুরু হলো ভীষণ কাশি। কাশতে কাশতে গানের তেরোটা বেজে গেলো। এই অবস্থা দেখে মেয়ে ৪ টা এমন হাসাহাসি শুরু করলো তাতে আমার সম্মানের যায় যায় অবস্থা। একটু রাগ হলো। বলে ফেললাম- শুধু হাইসেন না দাঁতও মাইজেন। আমার কথা শুনে মেয়ে চারটার ভ্রু কুচকে ঈদের চাঁদের মতো দেখালো। তাদের মধ্য থেকে একজন বলে উঠলো- ওরে আমার ডেন্টিস্টরে! নিজের দাঁত তো বানাইছে মাশাআল্লাহ মিল্কক্যান্ডি। এবার আমার

মুখের গেট বন্ধ হয়ে গেলো। অপমানে খচখচ করতে লাগলাম। কি বলবো বুঝে উঠতে না পেরে বলে ফেললাম- মিল্কক্যান্ডি ছাড়া যে আপনার চলেনা সেটা বুঝাই যাচ্ছে। ওদের মধ্য থেকে একজন বলে উঠলো- এই শশী চল। ওরা চলে গেলো।

Post MIddle

কিন্তু তাহসান ভাইয়ার- অপূর্ণ রয়ে যায় ভালোবাসা, থেকে যায় কিছু কথোপকথন গানটি ১ রিপিট মুডে একের
পর এক মনের ভেতর বাজতেই থাকলো। হঠাৎ এক ধরণের ঢেউ বয়ে গেলো মনের নদীতে। এমন ঢেউ এর আগে যে বয়নি তা নয়। তবে এ ঢেউয়ের সুর আলাদা, টান আলাদা, কূল ঘেষার মাত্রা আলাদা। বুঝতে পারলাম নদীর কিনার আর ঠিক থাকতেছে না। ভাঙন নিশ্চিত। রুমে ফিরে বারবার তার কথাগুলোই মনে পড়তে লাগলো। ইশ, যদি কথাগুলো রেকর্ড করে রাখতে পারতাম। শশী যদি শশী হয়ে আমার মনের আকাশে উদিত হতো। একটা কবিতাও লিখে ফেললাম তাকে নিয়ে। সাতপাঁচ অনেক কিছু ভেবে স্বপ্নের ঘোরে রাতটা পার করে বিকেলের আগেই শহীদ মিনারে চলে গেলাম। কিন্তু আজ আর শশীর দেখা পেলাম না। মনটা খারাপ হয়ে গেলো। এক সপ্তাহ চলে গেলো। শশী আর উদিত হয়না। এদিকেমনের স্বাস্থ্য খারাপ থেকে খারাপতর হতে লাগলো। কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। ফেমাসের সাথে বিষয়টা আগেই শেয়ারকরেছিলাম। ও ভেবেচিন্তে একটা বুদ্ধি দিলো- ভার্সিটির বিভিন্ন ক্রাশ এন্ড কনফেশন পেজে কনফেশন লিখতে। যেই বলা সেই কাজ। রুমে ফিরেই লিখে ফেললাম একটা কনফেশন। অনেক কিছুই লিখলাম কনফেশনে। মুল থিমটা ছিলো এরকম- এক সপ্তাহ হয়ে গেলো আকাশে শশী উদিত হয়নি। আকাশটা খালি পড়ে আছে। মেঘে ঢাকার আগেই কি উদয় হবে না শশীর? মিল্কক্যান্ডি হাতে অপেক্ষায় থাকবো তোমার একই জায়গায়।
লাইক কমেন্ট অনেক পড়লো কিন্তু শশী কি কনফেশনটা দেখলো? পরদিন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে লাইক কমেন্ট চেক করতে বসে গেলাম। কাঙ্ক্ষিত নামটি দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে রইলাম। সবগুলো মেয়ে আইডি চেক করতে লাগলাম। হঠাৎ একটা আইডিতে চোখ আটকে গেলো। ‘লোনলি মুন’। বিভিন্ন দিক বিশ্লেষন করে ধরে নিলাম এটাই তার আইডি। পরদিন চলে গেলাম শহীদ মিনারে। অপেক্ষার প্রহর গুণতে লাগলাম। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। কিন্তু তার দেখা নাই। তবে কি সে কনফেশনটা দেখেনি? হাজারো প্রশ্ন জন্ম নিলো মনে। সন্ধ্যার পর চলে আসবো ভাবছি অমনি একটা পরিচিত কণ্ঠের হাসি শুনতে পেলাম। আমার দূরদৃষ্টি যা বলে তাতে আমি সিউর এটা শশীরই হাসি। কিন্তু আশেপাশে কোথাও শশীকে দেখতে পেলাম না। চলে আসতে লাগলাম। পরিচিত হাসিটাও আমার পিছনে পিছনে আসতে লাগলো। রুমে এসে সমীকরণ কষতে বসলাম। নানা সূত্রে অংক কষে যে ফলাফল পেলাম তাতে মনে হলো- আসার সময় আমার পেছনে বোরকা পড়ে যারা হাসাহাসি করছিলো তারাই শশীদের গ্যাং। আমিও কম কিসে? সিদ্ধান্ত নিলাম কাল থেকে আর শহীদ মিনারে যাবো না। দূর থেকে দেখবো ওরা কি করে। প্ল্যানমতো শহীদ মিনারের সেই জায়গায়টায় যাওয়া বাদ দিয়ে দিলাম। একটু দূরে অন্য জায়গায় বসলাম যেখান থেকে ঐ জায়গাটা দেখা যায়।  দেখতে পেলাম শশী আর ওর বান্ধবীরা এসেছে। এদিক ওদিক কাউকে খুজছে। কাকে আর খুজবে আমাকে ছাড়া। মনে মনে খুব আনন্দ উপভোগ করতে লাগলাম। যাক, অবশেষে কেউ একজন আমার হতে যাচ্ছে, প্রেমের বন্ধ্যাত্ব কাটতে যাচ্ছে। কেউ একজন আমার জন্য অপেক্ষা করছে, আমাকে খুজছে ভাবতে কি যে আনন্দ লাগছিলো। মনে মনে অভিমান জন্মালো- আমাকে এক সপ্তাহ অপেক্ষা করিয়েছো আমিও তোমাকে ঠিক
এক সপ্তাহ অপেক্ষা করাবো। প্ল্যানমতোএক সপ্তাহ কেটে গেলো। হঠাৎ একটা কনফেশনে চোখ আটকে গেলো- ‘মিল্কক্যান্ডি’। বুঝতে পারলাম কনফেশনটা আমাকে নিয়ে লেখা। আমার নাম জানতে না পেরে ‘মিল্কক্যান্ডি’ সম্বোধন করেছে। কনফেশনে জাস্ট এক লাইন লেখা ছিলো। কাল দেখা করতে না আসলে মিল্কক্যান্ডি খাওয়াই ছেড়ে দেবো। যদিও একটিমাত্র লাইন কিন্তু তাতে যে কি পরিমাণ অভিমান জমে আছে তা বুঝতে আর বাকি রইলো না।

গত এক সপ্তাহ প্রত্যেকটা বিকেল মেয়েটা আমার জন্য অপেক্ষা করেছে। যাই হোক কাল দেখা হচ্ছে তাহলে। কি পরবো, কিভাবে যাবো, ঝগড়া করবো নাকি নরমালি কথা বলবো নানা বিষয় মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগলো। রাতে তো একবিন্দু ঘুম হলোনা। বিকেল যেনো আর আসেই না। সূর্যের পা যেনো অবশ হয় আছে। বিকেল হতে না হতেই চলে গেলাম শহীদ মিনারে। হাতে মিল্কক্যান্ডি। অপেক্ষায় রইলাম কখন আসে, আসলে কি বলবো প্রোপজ করবো কি করবো না, নাকি সে নিজেই করবে। কত চিন্তা। কিন্তু বিকেল তো যায় যায় অবস্থা। তার তো দেখা নাই। নাকি আজও সে মজা নিবে। হঠাৎ দেখলাম শশীর বান্ধবি দ্রুত আমার দিকে আসছে। কিছু বুঝে উঠার আগেই বললো- এক্ষুনি আমার সাথে মেডিকেলে চলুন………….।#

  • উজ্জ্বল হোসেন সায়েম, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
পছন্দের আরো পোস্ট