নিউইয়র্কের ভর্তিযুদ্ধ ও মায়েদের টেনশন। রিমি রুম্মান

নিউইয়র্ক সিটির স্পেসালাইজড হাই স্কুলগুলোয় ভর্তি পরীক্ষা শুরু আজ (২২শে অক্টোবর) শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে। নিউইয়র্ক সিটি ডিপার্টমেন্ট অব এডুকেশন এর অধীনে আটটি স্পেসালাইজড স্কুলের জন্যে এই ভর্তিযুদ্ধ। এখানে নাইন, টেন, ইলেভেন, টুয়াল্‌ভ এই চার ক্লাস মিলে হাইস্কুল। গতবছর অষ্টম শ্রেণীর ২৯,০০০ ছাত্রছাত্রী এই ভর্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। প্রাপ্ত নাম্বারের ভিক্তিতে স্কুলগুলো ছাত্রছাত্রীদের সীমিত আসনে সুযোগ দিয়ে থাকে।

যেমন, আটশ নাম্বারের এই পরীক্ষায় Stuyvesant স্কুলে সুযোগ পেতে হলে কমপক্ষে ৫৬২ নাম্বার পেতে হবে। তেমনি Bronx Science এ সুযোগ পেতে কমপক্ষে ৫১২, Staten Island ৫০৩, Lehman College ৫০১, York College ৫০০, HS for Math, Science and Engineering ৪৯৮, Brooklyn Technical ৪৮৩, Brooklyn Latin ৪৭১। দুইঘণ্টা তিরিশ মিনিটের এই পরীক্ষা নিয়ে আমাদের মায়েদের টেনশনের শেষ নেই।

আমাদের সন্তানরা কে কোন স্কুলে সুযোগ পাবে তা আগামী মার্চে রেজাল্ট না দেওয়া অবধি বলা মুশকিল। বিধায় আমরা সব কয়টি স্কুল সম্পর্কে যতটা সম্ভব ধারনা নিচ্ছি। এমনকি কোন স্কুলে যাওয়া আসায় সময় কেমন লাগে, কিংবা ক’বার বাস ট্রেন পরিবর্তন করতে হবে, সব। তথ্য সংগ্রহের ভাল সুযোগ থাকে “স্কুল ওপেন হাউজ” এ।

গতকাল ছিল ব্রনক্স সাইয়েন্স স্কুলের open hause. অবিভাবক এবং ছাত্রছাত্রীদের জন্যে ছিল স্কুলটি উন্মুক্ত। ঘুরে দেখবার জন্যে, তথ্য জানবার জন্যে স্টাফ, ছাত্র এবং অবিভাবকের খোলামেলা আলোচনার সুযোগের দিন। ঘুরে ঘুরে এ রুম ও রুম দেখতে দেখতে কিছু কিছু তথ্যের উপর চোখ আটকে থাকলো।

যেমন, এপর্যন্ত এ স্কুলের আটজন গ্রাজুয়েটস নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন। সাতজন ফিজিক্স এ, আর একজন কেমেস্‌ট্রিতে। Pulitzer পুরস্কার পেয়েছেন ছয়জন গ্রাজুয়েটস। আমেরিকায় দ্বিতীয় কোন Secondary স্কুল নেই যেখানকার এতজন গ্রাজুয়েটস এইসব সন্মানিত পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন। বিষয়টি ভাল লেগেছে।

ক্রিয়েটিভ রাইটিং বিষয়ে তথ্য জানবার রুমটিতে ঢুকতেই চোখ আটকে গেলো একটি লেখায়। ” I write because it helps me breathe… because there are stories in my heart that only I can tell. ” Laurie Halse Anderson. তাই তো ! আমার হৃদয় গহিনে যে গল্পগুলো আছে, তা তো কেবল আমিই বলতে পারি।

Post MIddle

বাড়ির উদ্দেশ্যে ফিরছি যখন, ততোক্ষণে বাইরে রাতের আঁধার। মেঘলা আকাশ আর গুড়িগুড়ি বৃষ্টির মাঝে হেঁটে যাচ্ছি ষ্টেশনের দিকে। এবার আর ট্রেনের ভেতরটায় ভিড় নেই। অনেকটাই ফাঁকা। শহরের কর্মক্লান্ত মানুষজন বেশিরভাগই ফিরে গিয়েছে আপন নীড়ে। অথচ আসবার সময়টাতে কি ভয়াবহ ভিড়ই না ছিল। পরপর তিনটে ট্রেন একে একে চলে গিয়েছিল থেমে থেমে। আমরা শতশত যাত্রী দাঁড়িয়েছিলাম প্ল্যাটফর্মে, ট্রেনে উঠতে পারছিলাম না বলে। শেষে কোনমতে চাপাচাপি করে উঠেছিলাম যদিও। তিল পরিমান জায়গা ছিল না।

আমাদের কারোরই হ্যান্ডেল ধরে দাঁড়াবার প্রয়োজন হয়নি তখন। কেননা ডানে বাঁয়ে হেলে যাবার আশংকা ছিল না। মানুষে মানুষে এতো ঠাসাঠাসি দেখে মনে হচ্ছিলো আমার দেশের কথা। এরকম ভিড়ে সেখানে একাধিক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে যেত, নিশ্চিত। ফোন, মানিব্যাগ খোয়া যেত। বিদেশ বিভুইয়ের এই নিরাপত্তাটুকু বেশ ভাললাগে।

গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল ষ্টেশনে ট্রেন থামলে নেমে যাই। হাঁটছি অন্য প্ল্যাটফর্মের উদ্দেশ্যে অন্য ট্রেন ধরবো বলে। দিনশেষে বাড়ি ফিরবার এই সময়টাতে ক্লান্ত শ্রান্ত মানুষগুলো ধীর গতিতে হাঁটে।

প্ল্যাটফর্মের একটি অংশে ক্ষণিক থামি। সুদর্শন এক যুবক মিউজিক বাজিয়ে গাইছে আপন মনে। পাশ দিয়ে হেঁটে যাবার সময় কেউ কেউ ডলার রেখে যাচ্ছে। কিন্তু সেদিকে যুবকের ভ্রুক্ষেপ নেই। অদ্ভুত বিষাদময় এক সুর ! দিনশেষে বাড়ির দিকে ফেরা ক্লান্ত মানুষজনের মনে কেমন এক প্রশান্তি নিয়ে আসে সেইসব সুর।

আমি আবার হাঁটছি ধীর, স্থির, শান্ত পায়ে। কানে ভেসে আসে যুবকের গান wherever you go, whatever you do, I will be right here, waiting for you, waiting for you….. সেভেন ট্রেনের উদ্দেশ্যে হেঁটে যেতে যেতে যতই দূরবর্তী হই, সেই সুর শ্রবনসীমায় ক্ষীণ হতে হতে মিলিয়ে যেতে থাকে, প্ল্যাটফর্ম কাঁপিয়ে আসা ট্রেনের শব্দের সাথে… শুভকামনা সকলকে।

রিমি রুম্মান নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র

পছন্দের আরো পোস্ট