ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের “সূর্য গাড়ি”

214604surjoনাগরিক জীবনে যোগাযোগের সমস্যা অনেক। এদিকে গাড়ির মেইন্টেনেন্স খরচ, কালো ধোয়া সব মিলিয়ে নানাবিধ সমস্যা। এই সমস্যা মাথায় রেখে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী চিন্তা করলেন পরিবেশবান্ধব একটি সোলার কার এর। যেই কথা সেই কাজ, সোলার কার প্রজেক্টের কাজ শুরু করে দিলেন ২০১৪ সালে। সব উদ্দেশ্যকে প্রাধান্য দিয়ে গাড়ির প্রতিটি অংশের ডিজাইন এবং পরিকল্পনা করেছেন। তৈরি হল সম্পূর্ণ ডিজাইন, সম্ভাব্য সকল সমস্যাকে এড়ানোর জন্য আবার তৈরি করা হল পাওয়ার সিস্টেম, ব্রেকের নকশা সহ নানা কিছু।

নতুন নকশা অনুযায়ী গাড়িতে ব্যবহৃত উপাদান গুলো হল : হাল্কা উপাদান [গ্যালভানাইজড স্টিল] দিয়ে বানানো বডি, এক হাজার ২০০ ওয়াটের ১৩শ আরপিএমের একটি ডিসি মোটর, ৭০ এম্পিয়ারের ব্যাটারি। তারপর শুরু হল উদ্দেশ্য সফলের কাজ, শুরু হল সূর্যালোকব্যবস্থাটি তৈরির কাজ। অনেক পরিকল্পনার পর তারা সিদ্ধান্ত নিলেন ৫০ ওয়াটের ছয়টি সোলার প্যানেল যা সআধারন প্যানেলের চেয়ে বড় ও বেশী দামের। চারটি বসানো হলো গাড়ির ছাদে, দুটি বসানো হল গাড়িটির বনেটে। গাড়ির সূর্যালোকব্যবস্থাটির (সোলার প্যানেল)এর কাজ হল সূর্যালোককে বন্দি করে বিদ্যুতে রূপান্তর করবে। ব্যাটারিতে বিদ্যুত পাঠানো। পাশাপাশি তারা ব্যাটারি যাতে কম বা বেশি চার্জ না হয়  [ ৫৮ ভোল্টেজের কম, ৭০ ভোল্টেজের বেশি] সেজন্য তারা একটি চার্জ কন্ট্রোলার তৈরি করে লাগিয়ে দেন গাড়িটিতে। ইমারজেন্সি এর কথা চিন্তা করে গাড়িতে লাগানো হয় এক্সটারনাল চার্জিং সিস্টেম। যাতে করে বৃষ্টি বাদলের দিনে দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকা যায়। গাড়ির বডিটি তৈরি করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়ার্কশপের মেকানিকদের সাহায্যে। একটানা নিরলস দুই বছরের কাজ শেষে প্রথমবারের মতো সোলার কার রাস্তায় নামানো হলো ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে।

Post MIddle

সেদিন ছিলো সোলার কার প্রোজেক্ট নির্মাতাদের স্বপ্ন পুরনের দিন। সৃষ্টি সুখের উল্লাসে তাঁদের মনে হয়তো ছিলো উৎসবের মাতম। প্রজেক্টের দল নেতা ইমরান বিন জাফর হয়তো উজ্জ্বল চোখ নিয়ে তাকিয়ে দেখছিলেন রাস্তায় চলতে থাকা অন্যান্য গাড়ির মানুষগুলো কি রকম কৌতূহল নিয়ে তাকিয়ে আছেন তাঁদের স্বপ্নের দিকে, তাঁদের নিরলস প্রচেষ্টার দিকে, তাঁদের সৃষ্টির দিকে। সূর্যালোকের মাধ্যমে চলা গাড়িটির কারিগররা সবাই ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক বিভাগে পড়েন: দলনেতা ইমরান বাদে আছেন সাইফ আশরার, কাজী মুশফিকুস সালেহীন, তায়েফ হোসেন, দেওয়ান নওশীন আতিয়া, রাফিয়া ইসলাম, উম্মে হানি সারা, আহমেদ তৌসিফ চৌধুরী, সৌম্য আহমেদ, রিজভান নাসিফ, বিল্লাল হোসেন, চৌধুরী রাবিব রুবাইয়াত। আর এই প্রজেক্টের সুপারভাইজার বিভাগের অধ্যাপক ড. মোসাদ্দেকুর রহমান

গাড়িটি এখন সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করা হচ্ছে, যেন যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিকতা ছোঁয়া নিয়ে আসা যায়। শুধু সূর্যালোক ব্যবহার করে ছয় থেকে সাত ঘণ্টা ২৫-৩০ কিলোমিটার বেগে ছুটতে পারবে। খুব স্বাচ্ছন্দ্যে দুজন ঘুরে বেড়াতে পারা যাবে। লাগবে না জ্বালানী হিসেবে তেল বা গ্যাস। সোলার কার প্রোজেক্টটির কর্ণধাররা আশা ব্যাক্ত করেন যে এই পরিবেশ বান্ধব “সূর্য গাড়ি” যোগাযোগের সকল চাহিদা মেটাতে সক্ষম। পাশাপাশি ভবিষ্যতে বাংলাদেশের মত একটি উন্নয়নশীল  দেশে জ্বালানী সঞ্চয়ে এই গাড়ি খুবই গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

পছন্দের আরো পোস্ট