ক্যাম্পাসের বাঁশিওয়ালা

ক্যাম্পাসের বাঁশিওয়ালা picক্যাম্পাসে ঢুকতেই ভেসে আসে বেসুরো বাঁশির সুর। হাপরের আগুনে পোড়া ডোরাকাটা বাঁশের বাঁশি। আর সে বেসুরো সুরের সাথে বাতাসে ভেসে বেড়ায় জীবন অনলে পোড়া দেহ-মনের গল্প। শুধু আন্দোলিত করে ক্যাম্পাসের প্রাণগুলোকে। তবে নির্জীবই থাকে সে সুরের রহস্য।

 

জীবনের ২০টি বছর বাঁশের বাঁশিতে সুর তুলেছেন শুধু এ ক্যাম্পাসেই। জীবন যুদ্ধের পরাজিত সৈনিক হয়ে সন্যাসীর মতোই টিকে আছেন এ ভবে। কখনো কড়া রৌদ্রে বা গাছের ছায়ায় বসে বা দাঁড়িয়ে নিত্য সে সুর তুলেছেন। সে সুরের মহাত্ম বা তাৎপর্য যারা বুঝেছে হয়তো ২০ কিংবা ৩০ টাকা দিয়ে একটা বাঁশি কিনে তার মতোই বাঁশিতে ফুঁ দিয়েছেন। কিন্তু সুর তুলতে না পেরে বা বাঁশি ভালো না বাঁজায় রুমের কোথায় ফেলে রেখেছেন। তবে সবাই তো বাঁশিতে ফুঁ দেন না। আবার সবার সে সখও নেই। তাই হয়তো, যে বাঁশিওয়ালা, তার থলের সব বাঁশিই হয়তো নিজ নিজ অবস্থানে পড়ে থাকে।

 

Post MIddle

দিনে বা কয়টা বিক্রি হয়! তা থেকে আয়ই বা কতো! নিতান্তই সামান্য। আগে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা দিনে আয় হতো। এখন ২০০ টাকা বা তার কম। হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তার বাঁশির সুরের দিকে আর মনোযোগ দেন না। বাঁশি বাজানোর শখটাও হয়তো কমে গেছে। অথবা সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সবার সঙ্গেই একবার তার দেখা মেলে। তাই হয়তো প্রতিনিয়ত দেখতে দেখতে আর তাকে ভালো লাগে না। তবে সে বাঁশিওয়ালা তো এমনই; কেউ শুনলেও গায়, কিনলেও গায়, না শুনলেও গায় আবার না কিনলেও গায়।

 

তিন সন্তানের পরিবার। স্ত্রী ক্যান্সারের রোগী। তিন কাঠা জমির ওপর দুটো ছাউনি। সেখান থেকে ৩৬৫ দিন আকাশ দেখে অভ্যস্ত। যে আকাশ না চাইতেই কক্ষে রোদ দেয়, দেয় বৃষ্টি। এমন টানাপোড়ানের সংসারের হাল বাঁশির সুরেই। তবে সামান্য প্রত্যাশা করেন সবার কাছে। হয়তো সাহায্য পেলে আয়ের সম্বলটাকে আরো বড় করতেন।

 

সবার পরিচিত সে বাঁশিওয়ালাকে কখনো দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের ডান দিকের মোড়ের বেদীতে, কখনো গ্রন্থাগারের পেছনের বেদীতে। গায়ে পুরাতন ময়লা শার্ট আর মাথায় প্রিন্স টুপি। বহুল পরিচিত সে বাঁশিওয়ালা শ্রী গণেশ চন্দ্র দাস। সে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বাঁশিওয়ালা। বাড়ি রাজশাহীর পুঠিয়ার দুদুর মোড়ে।

 

 

পছন্দের আরো পোস্ট