প্রথমে ভাল সাবজেক্ট পরে বিশ্ববিদ্যালয়

a8a98326-f2b4-40f9-94fe-ed56c4f18fd2
হঠাৎ করে চালু হয়ে গেল অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এর আলোকে এটি করা হল। এটি কতটা কার্যকর হবে তা জানার জন্য প্রতিটি উপজেলা ও থানায় একটি করে মোট ৫১৬ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাইলট প্রোগামের আওতায় ষষ্ঠ শ্রেণী চালু করা হয়েছিল।

 
নানাবিধ কারণে সরকার কাগজে কলমে সফল হয়েছে কিনা জানি না, তবে বাস্তবে সফল হয়নি বলেই জানি। দূর্ভাগ্যক্রমে, আমি যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি সেটিও পাইলট প্রোগ্রামের আওতায় ছিল। সেখানে প্রথম বছর ১৫-২০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হলেও শিক্ষক না দেয়ায় তা সফল হয়নি। সব শিক্ষার্থী ঐ স্কুল ছেড়ে মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হয়। অবশ্য তাদের ৪ মাসের সময়ে মত ভেস্তে গিয়েছিল।

 

 
পরের বছর আবার কিছু শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয় এবং খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলতে থাকে। স্কুলটিতে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ফলাফল ভাল। বেশকিছু শিক্ষার্থী প্রতিবছর বৃত্তিও পায়। কিন্তু নতুন পাইলটের আওতায় থাকা ষষ্ঠ-অষ্টম শ্রেণীর ফলাফল মোটেও ভাল ছিল না। তাহলে এই শিক্ষার্থী যারা ভাল ফল করতে পারেনি তারা আবার নবম শ্রেণীতে কিভাবে ভাল করবে? এরাই আবার বেকারের খাতায় নাম লেখাবে নাতো! এদের ভিত্তিটা দূর্বল হলে দায়ভার কে নেবে?

 

 
আমাদের সবার পরিচিত ল্যাবরেটরি প্রাণী হিসেবে গিনিপিগের নাম অগ্রগণ্য। কোন ঔষধ, কেমিক্যাল ইত্যাদি মানুষ ও প্রাণির দেহে কেমন প্রভাব ফেলবে তা জানার মত কাজে ল্যাবরেটরি প্রাণি ব্যবহৃত হয়। এই গবেষণায় প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ প্রাণির জীবন যাচ্ছে। মানুষের বাচ্চাকে চাইলেই তো আর জবাই করে খাওয়া যায় না বা তাদের জীবন নেয়া যায় না, যে তাদের উপর ট্রায়াল দিবেন।

 
আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন বেকার তৈরির কারখানা হয়েছে। প্রতিবছর যত সংখ্যক শিক্ষার্থী পাশ করে বের হয় তত সংখ্যক চাকুরির সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে না। আসলে চাকুরির বাজারে কোন কোন বিষয়ের চাহিদা কেমন সেগুলোর সাথে সমন্বয়হীন সাবজেক্টে পড়াশোনা করাটাও বোকামি।
আমাদের দেশে এখনও বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের কদর আছে। কদর পাচ্ছে না পঠিত সাবজেক্ট। তাছাড়া শিক্ষার্থীরাও শুরুতে বুঝতে পারে না তাদের পঠিত সাবজেক্টটির প্রয়োগ কোথায়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিষ্ফলা কতগুলো সাবজেক্ট এখনও পড়ানো হচ্ছে। সংস্কৃত, উর্দূ, পালি ইত্যাদি বিষয় থেকে পড়ার পর অধিকাংশ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের ইন্টারভিউ কার্ড দিচ্ছে না।

Post MIddle

 
দেশের বেসরকারি খাতে প্রচুর জনবল দরকার। আমি হলফ করে বলতে পারব আপনি বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লেও উর্দূ, পালির প্রয়োগ বেসরকারি খাতে নেই। গার্মেন্টস শিল্পে অনেক বিদেশী ইঞ্জিনিয়ার আসে। আপনার পালির জ্ঞান দিয়ে গার্মেন্টস এর মেশিন চলবে না। এক বেসরকারি চাকুরির ভাইভায় আমাকে বলা হয়েছিল গরু দোহন করতে পারি কিনা? আসলে তাদের খামারীদের হাতে-কলমে শেখানোর জন্য গরু দোহন করে দেখাতে হত। আমি থাইল্যান্ডের মূদ্রার নাম জানি কিনা জানতে চায়নি!

 
আবার কিছু সাবজেক্ট আছে যেগুলো পড়লে শিক্ষকতার চাকুরি মিলে যেতে পারে। না মিললেই বেকার। এমন একটা সাবজেক্ট হচ্ছে উদ্ভিদ বিজ্ঞান। তেমন প্রয়োগ আমাদের দেশে নেই।আমাদের দেশের বেসরকারি চাকুরিতে আবার ছেলে মেয়ের চাহিদা সমান নয়। এটাও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পূর্বে শিক্ষার্থীদের জানতে হবে। কিছু বিষয় ভাল হওয়া স্বত্বেও মেয়েদের চাকুরিতে নেয়া হয় না। দেশের বড় চাকুরির ওয়েবসাইট ঘাটলে দেখা যায় অধিকাংশ বেসরকারি চাকুরির জন্য লেখা আছে ‘অনলি ফর মেল’।
বেকার সমস্যার সমাধানে কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটানো জরুরি। এখন মোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, টেলিযোগাযোগ, পোষাক শিল্প, পোল্ট্রি শিল্প ইত্যাদির ব্যাপক বিস্তার লাভ করলেও উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা তেমন নেই। এসব চাকুরিতে কিন্তু আপনার পুরোনো দিনের পঠিত সাবজেক্ট চলবে না।

 
পদ্মা সেতুর পিলার ৪২ টা। ৪০ টা পানিতে আর ২ টা স্থলে। এসব পড়ে বিসিএস হবে ঠিক কিন্তু বেকার কমবে না। কারণ বিসিএসে সবাইকে নিবেনা। অধিকাংশ শিক্ষার্থী পাশ করে বের হয়ে এসবই পড়ছে! হোক সে এমবিবিএস ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার। কমপক্ষে ৮-১০ মাস হলেও তার প্রয়োজনীয় বিষয় পড়া ছেড়ে পড়ছে কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রীর নাম, কত উঁচু থেকে পানি পড়ছে ইত্যাদি। অথচ একজন ডাক্তারের সব সময়ই তার নিজস্ব পড়াগুলো চালিয়ে যেতে হয়। তারতো পড়া উচিৎ ছিল কোন ঔষধ কোন রোগে ভাল কাজ করে, রোগের লক্ষণ, ড্রাগ ইন্টার‌্যাকশন ইত্যাদি হাজারো প্রয়োজনীয় বিষয়। আমি মনে করি মুরগির ঘরের তাপমাত্রা কত রাখা লাগবে সেটা জানা আমার জন্য জরুরি কিন্তু লিবিয়ার আজিজিয়ায় এখন তাপমাত্রা কেমন তা না জানলেও আমার মুরগির কোন ক্ষতি হবে না।

 
চীনা নাগরিক নকল ব্যাংক কার্ড দিয়ে টাকা তুলে ফেলল। অসৎ কাজকে সাপোর্ট করছি না। দেখুন, সে নকল কার্ড দিয়ে টাকা বের করতে সক্ষম হল! আর আমাদের দেশের অনেক ছেলেমেয়েকেই পাওয়া যাবে যারা আসল কার্ড দিয়েও প্রথম কয়েকদিন টাকা তুলতে হিমশিম খাবে। বুঝলেন তো তাদের আর আমাদের জ্ঞানের তফাৎ?

 

 
পরিবর্তন আসবে। এই পরিবর্তন হতে হবে আমাদের শিক্ষায় ও মানসিকতায়। কে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে সেটা বড় নয় বড় হচ্ছে তার পঠিত সাবজেক্ট। পঠিত সাবজেক্টটি কর্মজীবনে প্রয়োগ কোথায়, কেমন হবে চাকুরির সুযোগ এসব ভেবেই শিক্ষার্থীদের ভর্তি হতে হবে। তাহলে অপ্রয়োজনীয় সাবজেক্ট গুলোর কি হবে? আর ৫-১০ বছর গেলেই উত্তর পাবেন। ততদিন পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকুন।
লেখক: ডাঃ মোঃ সাইফুল ইসলাম
টেকনিক্যাল সার্ভিস অফিসার, নিরিবিলি পোল্ট্রি এন্ড ফিস ফিড লিমিটেড, কক্সবাজার।

 

 

 

লেখাপরা২৪/এমটি/১০৩

পছন্দের আরো পোস্ট