শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনা আমাদের সংস্কৃতির জন্য অনেক বড় আঘাত

58a9112d-0e68-40ad-a566-67ee117dff59

নারায়ণগঞ্জে স্কুলের প্রধান শিক্ষককে লাঞ্ছিত ও পরে সংসদ সদস্যের উপস্থিতিতে তাকে কান ধরে উঠবসের ঘটনায় দেশব্যাপী চলছে প্রতিবাদ। ঘটনা তদন্ত করে ওই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি বাতিল করা হয়েছে। একইসঙ্গে কমিটির সিদ্ধান্তে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ওই শিক্ষককে পদে বহাল রাখার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।এরই ধারাবাহিকতায় সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা এই শিক্ষক লাঞ্ছিত করার ঘটনায় জানিয়েছেন তাদের প্রতিক্রিয়া।

 

গণবির সমাজবিজ্ঞান এবং সমাজকর্ম বিভাগের সিনিয়র লেকচারার শহীদ মল্লিক এই ঘটনাকে বলছেন আমাদের সংস্কৃতির জন্য অনেক বড় আঘাত। তিনি বলেন,আমার একজন মানুষ হিসেবে ভাবতে কষ্ট হয়। মানুষ হল উচ্চ বিবেক সম্পন্ন প্রাণী যা অন্যান্য প্রাণী থেকে আমাদের আলাদা করছে। একজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করা কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব না। আর ওসমান পরিবারের জন্য এই ধরনের ঘটনা এইটাই প্রথম না। এর আগে ত্বকি হত্যাকাণ্ড সহ আরও ঘটনার নজির আছে। এই ঘটনা আমাদের সমাজের বর্তমান অবক্ষয়ের প্রতিচ্ছবি। তবে আশার কথা হচ্ছে, সমাজে এখনও এমনকিছু মানুষ আছে যারা এই ঘটনার প্রতিবাদ করছেন যার যার অবস্থান থেকে।

 

একই বিভাগের শিক্ষক মাহমুদুল হাসান এই ঘটনার দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবি করেন যাতে এর পুনরাবৃত্তি না ঘটে।

 

 

 

 

Post MIddle

গণবির ভৌত ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডীন ডাঃ হাসিন অনুপমা আজহারী তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, সবসময় আমরা জেনে এসেছি বাবা মায়ের পরই শিক্ষকের অবস্থান। এই শিক্ষকতার পেশাকে স্বীকৃতি দিতে হবে,সম্মান দিতে হবে। আজ সমাজ এই পরম সত্যকে ভুলতে বসেছে গুটি কয়েক মানুষের জন্য। সবাইকে এই ব্যাপারে সোচ্চার হতে হবে।

 

 

 

 

ফিজিওথেরাপি বিভাগের প্রভাষক রূপক রায় বলেন, শ্যামল কান্তি স্যারের সাথে হওয়া অন্যায়ের বিচার চাই। শিক্ষকেরা নাকি মানুষ গড়ার কারিগর আজকাল এই কারিগরদের লাঞ্ছিত করতে এই জাতি খুব বেশী চিন্তা ভাবনা করে না। এটা জাতি হিসাবে আমাদের খুবই লজ্জার বিষয়।

 

 

 

 

ফার্মেসি বিভাগের সহকারী প্রভাষক মনির হোসেন জানান,  প্রথমত সমাজের একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে এই ঘটনার জন্য অবশ্যই তীব্র নিন্দা প্রকাশ করছি। শিক্ষক হিসেবে আমরা সবসময় ছাত্রের তথা সমাজের মঙ্গল কামনা করি এবং সে লক্ষে কাজও করি। এ জন্যই শিক্ষক আজও সমাজের সম্মানিত ব্যক্তি। সেই শিক্ষককে যদি এধরনের লাঞ্ছনার শিকার হতে হয় তাহলে বোঝা যায় আমাদের সমাজের অবক্ষয় এর বর্তমান অবস্থান কতটা নিচে। আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ গড়ার কারিগরকে অপমান করছি, লাঞ্ছিত করছি, মূলত আমরা আমাদের সমাজকে শোচনীয় অবস্থার দিকে নিয়ে যাচ্ছি।

 

 

 

 

রাজনীতি এবং প্রশাসন বিভাগের সহকারী প্রভাষক ফখরুল পাটোয়ারী তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, সর্বশেষ শিক্ষামন্ত্রী যে পদক্ষেপ নিয়েছেন তাতে আমরা শিক্ষকরা খুশি। তবে এই ঘটনা আমাদের শিক্ষকদের সামাজিক অবস্থান কথায় সেটা মনে করিয়ে দেয়। তিনি মনে করেন নৈতিক শিক্ষার অভাবের কারণেই এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। আর এই অবস্থান থেকে এক দিনেই বের হয়ে আশা সম্ভব না। এই জন্য জ্ঞান ভিত্তিক এবং জ্ঞান নির্ভর সমাজ গঠন করতে হবে। জ্ঞানর প্রতি সম্মান থাকতে হবে। তবেই শুধু শিক্ষক না সব পেশার মানুষের প্রতি সমাজের দায়বদ্ধতা সৃষ্টি হবে।

 

 

 

একই বিভাগের শিক্ষক এবং সাংবাদিক সাগর আনোয়ার এই শিক্ষক লাঞ্ছিত করার ঘটনার প্রকাশ্য শাস্তি দাবী করেন। তিনি মনে করেন তা না হলে মেধাবী শিক্ষার্থীরা আর শিক্ষকতার পেশায় আসবেন না। এর এর ফলে জাতি মেধাশুন্য হবে।

 

 

পছন্দের আরো পোস্ট