জাককানইবিতে পহেলা বৈশাখ প্রস্তুতির ঘটা

IMAGE (6)কথায় বলে, বাঙালি আমুদে জাতি, উৎসবপ্রিয় জাতি। উৎসব পেলে অন্য সবকিছু ভুলে থাকতে পারে। আর সেই আমুদে জাতির অপেক্ষা মাত্র কয়েকটা দিনের। তারপরেই পুরু বাংলা সাজবে বর্ণিল সাজে। কেননা চলে এলো বাঙালির ঐতিহ্যবাহী প্রাণের উৎসব পয়লা বৈশাখ। পয়লা বৈশাখে সারা পৃথিবীর বাঙালিরা মেতে উঠে প্রাণের উৎসবে।

 

বেশ কয়েকজন তরুন শিক্ষার্থী গভীর মনোযোগে তুলির আঁচড়ে সরায় নকশা করছেন। কাজ শেষ হলে এখান থেকে সরাগুলো চলে যাচ্ছে সামনে রাখা আরেকটি টেবিলে, যেখানে এক সারিতে সাজানো চিত্রিত সরা। আছে কাগজের পাখি, টেপা পুতুল, দেয়ালে সাজানোর জন্য মুখোশ। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের এসব কর্মযজ্ঞ ও নিত্যদিনের এ চিত্র জানান দিচ্ছে যে পয়লা বৈশাখ আসতে আর দেরি নেই। বর্ষবরণ অনুষ্ঠান উদ্যাপনের খোরাক যোগানোর জন্য চলছে এই কর্মযজ্ঞ।

 

আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম স্বয়ং ছিলেন বৈশাখের প্রতীক । তিনি নিজেই কালবৈশাখীর মত আবির্ভুত হন বাংলা কবিতায় । স্বয়ং কবি নিজেই তার বিখ্যাত কবিতা “বিদ্রোহী “তে বলেছেন- “আমি ধূর্জটি , আমি এলোকেশে ঝড় অকালবৈশাখীর”

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ““গাহি সাম্যের গান মঞ্চে” চলছে মঙ্গল শোভাযাত্রার কর্মযজ্ঞ। এ প্রাঙ্গণে নবীন-প্রবীণ শিক্ষার্থীরা কাজে মেতে আছেন। কেউ বাঁশ-কাঠ কাটাকুটি করছেন, কেউ কাগজ কাটছেন বিভিন্ন আকৃতির।

 

বাংলা পঞ্জিকার পাতায় চৈত্রের মাত্র কয়েকটি দিন বাকি। কর্মব্যস্ত চারুকলায় দেখা গেল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান তপন কুমার সরকার, সহকারী অধ্যাপক মাসুম হাওলাদার, সিদ্ধার্থ দে এবং দ্রাবির সৈকত সহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকেরা মহা ব্যস্ত। তাঁরা চারুকলার বর্ষবরণ শিল্পকর্ম গড়ার নির্দেশনা দিচ্ছেন। নতুন, বর্তমান শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করছেন সিনিয়র শিক্ষার্থীরাও।

 

Post MIddle

চারুকলা বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী দিপংকর বৈরাগী জানালেন, রীতি অনুযায়ী শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীরাই এই মহাযজ্ঞে নেতৃত্ব দেন।

 

কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে চৈত্র সংক্রান্তি এবং নতুন বছরকে বরণের আয়োজনে এবার যোগ হচ্ছে নতুন নতুন মাত্রা, পালা গান,  ছড়া গান, লাঠি খেলা, ফানুস ওড়ানো, বাউল গান, নৃত্যপালা, লোকজ সামগ্রীর প্রদর্শনীসহ এবারের আয়োজনে থাকবে চৈত্র সংক্রান্তির বিকেল থেকে পহেলা বৈশাখের রাত পর্যন্ত অনুষ্ঠানমালা। তারই প্রস্তুতি হিসেবে রাতদিন চলছে মুখোশ, লোকজ মোটিফ বানানো, পালা, গান, নাটকের প্রস্তুতিপর্ব।

 

বর্ষকে বরণ করে নিতে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দ্রাবির সৈকত বলেন, বর্ষবরণ বাঙালির প্রাচীনতম ঐতিহ্যের প্রবাহ, যা আজো প্রবল স্রোতের মতোই উদ্দাম আনন্দে বহমান, জীবিত সংস্কৃতির এই হলো প্রধান বৈশিষ্ট,  যুগের সকল পরিবর্তনকে গ্রহন বর্জনের ভিতর দিয়ে তার নিজস্ব একটি রূপ নির্মিত হয়।

 

আজ বিকেলে চারুকলা বিভাগ ঘুরে দেখা যায়, করিডরের উন্মুক্ত জায়গায় অস্থায়ীভাবে স্থাপিত বিশাল টেবিলের ওপর ছড়িয়ে আছে সারি সারি সরা। সেগুলোর ওপর রঙের প্রলেপ দিয়ে নানা অবয়ব ফুটিয়ে তুলছেন শিক্ষার্থীরা।শুধু চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরাই নন, নিজের আগ্রহে অনেকেই আসছেন এই কর্মযজ্ঞে শামিল হতে।

 

বর্ষবরণের মূল উদ্দেশ্যটি উল্লেখ করে লোকপ্রশাসন বিভাগের আরেক শিক্ষক প্রভাষক সঞ্জয় মূখার্জী বলেন, এবারের বর্ষবরণের মূল উদ্দেশ্য হোক বাংলার ক্রিষ্টি ও সংস্ক্রিতিকে ধারণ করে সকল বিভেদ ভুলে নব উদ্যমে সবাই মিলে একটি ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, বিজ্ঞানসম্মত এবং মজবুত অর্থণীতির দেশ গড়ার প্রত্যয়।

 

দেশের বর্তমান দুরবস্থা থেকে উত্তরণের আশা নিয়ে আমাদের জীবনে আসুক ১৪২৩ বঙ্গাব্দ। বৈশাখ আমাদের কাছে আসুক দুরবস্থা উত্তরণের সৃষ্টিশীল বিকল্পের উৎস হয়ে। যা এ দেশের অগ্রযাত্রায়, উন্নত সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে, বৈশাখী চেতনা বিস্তারে শেষ প্রতিরোধ, পরম ভরসা।

 

 

পছন্দের আরো পোস্ট