পাহাড় সায়রের মেলবন্ধনে

IMG_9903‘ভালো লাগে পাহাড় ও নদীর সঙ্গম’- কথাগুলো প্রিয় শিক্ষক ও কবি নিখিল নীলের। ৭ দিনের স্বপ্নযাত্রায় আমারা হয়তো তা দেখতে পাইনি তবে পৃথক পৃথকভাবে যা পেয়েছি তা অক্ষরের বুননে প্রকাশ দুঃসাধ্য।

 

১ ফেব্রুয়ারি রাতের উপবন এক্সপ্রেসে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্য যাত্রা। পরদিন সকালে চট্টগ্রাম পৌঁছে নাস্তা সেরে চললাম পাহাড়ের রাজধানী বান্দরবান। বান্দরবানের আঁকাবাঁকা উঁচুনিচু পথের পাশে বিলবোর্ডগুলোতে বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়ের পাশাপাশি বাঙ্গালির ছবি যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশকে প্রকাশ করে অবলীলায়।

 

দুপুরে হোটেলে এসে খাবার ও ফ্রেশ হয়ে চান্দের গাড়ি ছুটলো স্বর্ণমন্দির ও নীলাচলের রূপ-রস আস্বাদন করতে। প্রথমবার চান্দের গাড়িতে ভ্রমণের রোমাঞ্চ যে কাউকে বিমোহিত করতে বাধ্য!

 

IMG_0199পরদিন কাকডাকা ভোরে যাত্রা শুরু চিম্বুক, শৈলপ্রপাত ও নীলগিরির সাপের মত আঁকাবাঁকা পথে। মনে হতে থাকে এই পথ যদি শেষ না হয়! চিম্বুকের মেঘ যেন হারিয়ে যেতে আপন মনে ডাকে, শৈলপ্রপাতের সলিল মানবকে বিশুদ্ধ হবার কথা বলে আর নীলগিরির উচ্চতা যেন মানবকে বিশাল মনের অধিকারী হতে শেখায়।

 

বান্দরবান পর্ব শেষ করে ৩ তারিখ বিকেলে পৃথিবীর বৃহত্তম সমুদ্র সৈকতের পানে ছুটে চলা। রাতের সায়রের গর্জন ও পায়ে জলের স্পর্শ আবেগী কারোর আনন্দাশ্রু আসলে তা অবাক হবার কিছু নয় বৈকি।

 

পরদিন সকালে যাত্রা শুরু সর্ব দক্ষিণের উপজেলা টেকনাফে। নাফ নদীর তীরে অল্পবিস্তর শ্বাসমূলীয় বন যেন সুন্দরবনের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিলো বারবার। বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্ত ঘেঁষে নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের বুক চিঁড়ে এসে গেলাম স্বপ্নের প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে। প্রকৃতি তার মায়ায় মানবচিত্তকে কতটুকু শিহরিত করতে পারে তা ৮ বর্গ কিলোমিটারের এই দ্বীপে না আসলে অজানাই থাকতো।

 

Post MIddle

IMG_9782আমাদের রিসোর্টটা ছিলো সাগর তীরেই, সাগরকে মনে হচ্ছিলো যেন রিসোর্টের উঠোন। কী দিন কী রাত! যখন-তখন সায়রের মায়াতে নিজেকে জড়ানোর প্রয়াস- সবই পেয়েছি আমরা।

 

সায়রজলে দাপাদাপি, ছেড়াদ্বীপে যাত্রায় ঢেউয়ের শিহরণ, হুমায়ূন আহমেদের সমুদ্র বিলাস দেখা, সাইকেল চড়া, বার-বি-কিউ পার্টি, ওয়াটার বাইকে চড়ার শিহরণ- দু’দিনে দিনে কী দেয় নি এই দ্বীপটা?

 

ও হ্যাঁ, সেন্ট মার্টিনের সূর্যোদয় দেখার জন্য যে কারোরই বছর কয়েক বেশি বেঁচে থাকার সাধ জাগা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা।

 

ট্রেনে-বাসে কিংবা জাহাজে বেসুরো গলায় গান, সেন্ট মার্টিনে রাতে স্যার-ম্যাডামদের ‘প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচি’, সাগরে জাহাঙ্গীরের চশমা বিসর্জন, ইসরাতকে বাতাসে ‘উড়িয়ে নেওয়া’, জসীমের ‘জয় বাংলা’, অতুলের অভিভাবকত্ব, বাবুর নিরবে কাজ করে যাওয়া, কক্সবাজারে রাতের সমুদ্র দেখে প্রবাল দা’র কেঁদে ফেলা, মিল্টনের ফানের বলি আমার জুতা (সে নৌকা থেকে মাঝ সাগরে তা ফেলে দিয়েছিলো)- এসবই আনন্দের মাত্রা বাড়িয়েছে বহুগুণ।

 

IMG_9850৬ তারিখ রাতে কক্সবাজারে পৌঁছে এক বন্ধুর আত্মীয়র বাড়িতে আতিথিয়েতা গ্রহণ যেন বাড়ির কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিলো। পরদিন সকালে বীচে ঘুরাঘুরি ও কেনাকাটা শেষ করে বিকেল ৩ টায় চট্টগ্রামের বাসে চেপে বসা। রাতের ট্রেনে চড়ে পরের দিন সকালে প্রিয় ক্যাম্পাসে, আমাদের আপন নীড়ে।

 

এ ক’দিন ভ্রমণের পর একটি উপলব্ধি নিজের মধ্যে জাগ্রত হলো আর তা হলো, প্রকৃতিকে নিজের মত বাঁচতে দিতে হবে। আর সে জন্যই হয়তো সেন্ট মার্টিন যেমন আপন মনে হয়, কক্সবাজার তেমনটা নয়।#

 

 

লেখাপড়া২৪.কম/আরএইচ

পছন্দের আরো পোস্ট