শখ থেকেই উদ্যোক্তা হয়ে উঠলেন তিথি

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে,মোঃ আশিকুজ্জামান।

বছর তিনেক আগে শখের বশে বছর দুইশো টাকায় পাঁচটি ক্যাকটাস ও পর্তুলিকা গাছ দিয়ে ময়মনসিংহের কেওয়াটখালির ভাড়া বাসার ছাদে সৌখিন গাছ পালন শুরু করেন তিথি মন্ডল। শখ থেকে শুরু করলেও বর্তমানে তিথির মাসিক আয় দশ থেকে চৌদ্দ হাজার টাকা।

ছোট বেলা থেকেই গাছ লাগানো ও পরিচর্যার প্রতি তিথির ছিলো অঢেল আগ্রহ। পড়াশোনাও করেছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগে। সৌখিন গাছ পালন ধীরে ধীরে নেশায় পরিনত হলে ক্রমান্বয়ে একটি দুইটি করে গাছ কিনতে থাকেন তিনি। বর্তমানে তিথির সংগ্রহে প্রায় তিনশো প্রজাতির সৌখিন গাছ, ৬ প্রজাতির ঔষধি গাছ ও ৫ প্রজাতির ফুলের গাছ রয়েছে। গাছের সংখ্যা বেড়ে যাওয়াতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গাছ বিক্রি শুরু করেছেন তিনি। এক একটি গাছ ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ২০০০ টাকায় বিক্রি করছেন।

তিথির বিশাল সংগ্রহের অধিকাংশই বিদেশি জাতের গাছ। শীতপ্রধান দেশের সাকুলেন্টসহ রয়েছে বিরল টি-র‍্যাক্স ক্যাকটাস গাছ। পথোস ১৭ প্রজাতির, সাকুলেন্ট ৬৫ প্রজাতির, ক্যাকটাস ৬৫ থেকে ৭০ প্রজাতির, এডেনিয়াম ১৫ প্রজাতির, স্টেপেলিয়া ২১ প্রজাতির, হয়া বা মোম ফুল ২৫ প্রজাতির, অর্কিড ১০ প্রজাতির, পুনে জবা ৪ প্রজাতির, কাঁটা মুকুট ৫ প্রজাতির, স্নেক প্ল্যান্ট ৪ প্রজাতির, লাকি ব্যাম্বু ৫ প্রজাতির, দীপ্ত লুচি পাতা বা পেপেরোমিয়া ২ প্রজাতির, ডিসচিডিয়া ৮ প্রজাতির, আইস প্ল্যান্ট ৩ প্রজাতির, আফ্রিকান হাওয়ার্থিয়ার ১ টি প্রজাতি, রেইন লিলি ৫ প্রজাতির, লিলিয়াম ৫ প্রজাতির, জেড প্ল্যান্ট ৪ প্রজাতির, মুন ক্যাকটাস ৫ প্রজাতির, ক্যালাঞ্চু ১৬ প্রজাতির ও ৬ প্রজাতির ক্রিসমাস ক্যাকটাস রয়েছে যাদের প্রতিটি প্রজাতিতে ভিন্ন ভিন্ন রকমের ফুল ফোটে। ঔষধি জাতের মধ্যে রয়েছে নিম, তুলসী, অ্যালোভেরা, পুদিনা, থানকুনি ও ব্রাহ্মীশাক। এছাড়া ফুলের মধ্যে আছে বেলি, গন্ধরাজ, গোলাপ, রজনীগন্ধা।

Post MIddle

তিথির স্বামী প্বার্থ বিশ্বাস কৃষি প্রকৌশল বিভাগের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটে কর্মরত। স্বামী স্ত্রী উভয়ের জন্মস্থান খুলনায় হলেও প্বার্থর কর্মসূত্রেই থাকছেন ময়মনসিংহের কেওয়াটখালির একটি ভাড়া বাসাটিতে।

উদ্যোক্তা হওয়ার এই যাত্রায় স্বামী প্বার্থর ভূমিকা সম্পর্কে বলেন, ভাড়া বাসায় জায়গা কম থাকায় সবগুলো গাছ ছাদে ও ঘরের ভিতরেই পালন করতে হয়। তাই শোবার ঘর, খাবার ঘরে তাকের উপর যেখানে একটু জায়গা পাচ্ছি সেখানেই গাছগুলো পালন করছি। অনেক সময় ছোট ছেলেকে রেখে এতগুলো গাছের যত্ন নিতে পারতাম না। প্বার্থ চাকরির ব্যস্ততার মাঝে বিরক্ত না হয়ে নিজেই গাছের যতœ নেয়। গাছের জন্য যখন যা প্রয়োজন গোবর, বালু, সার, তাক, টব ফুরিয়ে যাবার আগে এনে দেয়। এছাড়া ময়মনসিংহের বিভিন্ন বৃক্ষ প্রদর্শনীতে গাছ নিয়ে যাওয়া নিয়ে আসার কাজটিও সে করে। এমন সহযোগিতা আমাকে টানা তিন বছর ধরেই করে আসছে।

তিথি আরো বলেন, পুরুষ যদি নারীর কাজে পাশে দাঁড়ায়, সহযোগিতা করে তাহলে নারীদের পথচলা অনেকটা সহজ হয়ে যায়। আমার স্বামী আমার শখের মূল্য দিয়েছে, পাশে থেকেছে। তাই আমি আজ উদ্যোক্তা হতে পেরেছি।

তিথির স্বামী প্বার্থ বিশ্বাস বলেন, প্রতিটি স্বামীরই উচিত তার স্ত্রীর পাশে থাকা, আত্মনির্ভরশীল হতে সাহায্য করা। আমি আমার জায়গা থেকে দায়িত্বটুকু শুধু পালন করেছি।

পছন্দের আরো পোস্ট