জেনে নিন মুনাজাতের জরুরী বরকতময় দুআ

মাওঃ ইহসানুল হক।

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্‌র জন্য। আল্লাহ দরূদ ও সালাম পেশ করুন আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর; আর তাঁর বংশধর, তাঁর সাহাবীগণ এবং কিয়ামত পর্যন্ত যারা সুন্দরভাবে তাঁদের অনুসরণ করবে তাদের উপর। (আমিন)।

দুয়া মানেই যে ওযু করে নামায পড়ে দুই হাত তুলে চাইতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। হ্যা, দুই হাত তুলে দুয়া করা ভালো। তবে আপনি যেকোনো সময় ওঠতে বসতে, কোথাও যেতে যেতে দুয়া করতে পারেন। এইভাবে দুয়া ও যিকিরের মাধ্যমে আমাদের অবসর সময়গুলো কাজে লাগানোর চেষ্টা করা উচিত। আল্লাহ আমাদের তোওফিক দান করুন, আমিন।

নিন্মলিখিত এই দুয়াগুলো হাত তুলে বা হাত না তুলে, যেকোন মুনাজাতে, ফরয, সুন্নত বা নফল যেকোন নামাযের যেকোন সিজদাতে, নামাযের শেষ অংশে অর্থাৎ আত্তাহিয়্যাতু ও দুরুদ পড়ার পরে সালাম ফেরানোর পূর্বে দুয়া মাসুরা হিসেবে, বিতিরের কুনুতে, উঠতে বসতে যেকোনো সময়ই পড়া যাবে। দুয়াগুলো নামাযের ভেতরে আরবীতে পড়তে হবে, নামাযের বাইরে হলে আরবী বা বাংলা যেকোন ভাষাতেই করা যাবে। আরবী না জানলে নফল ও সুন্নত নামাযে নিজ ভাষায় দুয়া করা যাবে।

(১) সবচাইতে কম কথায় সবচাইতে বেশি কল্যান প্রার্থনা করার জন্য দুয়াঃ
এই দুয়াটা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুব বেশি বেশি করতেন।“নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের অধিকাংশ দুয়া ছিলোঃ

رَبَّنَآ اٰتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَّفِي الْاٰخِرَةِ حَسَـنَةً وَّقِنَا عَذَابَ النَّارِ
উচ্চারণঃ রব্বানা আ-তিনা ফিদ্দুনিয়া হা’সানাতাওঁ-ওয়াফিল আ-খিরাতি হা’সানাতাওঁ ওয়া-ক্বিনা আ’যাবান্নার।
অর্থঃ হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে দুনিয়ার জীবনে কল্যাণ দান করো এবং পরকালের জীবনেও কল্যাণ দান করো। আর তুমি আমাদেরকে আগুনের শাস্তি থেকে বাঁচাও। সুরা আল-বাক্বারাহঃ ২০১।

(২) পাপ থেকে ক্ষমা প্রার্থনার জন্য দুয়াঃ
আমাদের আদিপিতা আদম আ’লাইহিস সালাম ও মা হা’ওয়্যা আল্লাহর নিষেধ অমান্য করলে ক্ষমা প্রার্থনা ও তোওবা করার জন্য স্বয়ং আল্লাহ তাআ’লা তাদের দুইজনকে এই দুয়াটি শিখিয়ে দেন। এই দুয়ার মাধ্যমে ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ তাআ’লা তাদেরকে ক্ষমা করে দেন। আমাদের উচিত তাদের মতো আমাদের পাপ থেকে ক্ষমা প্রার্থনার জন্য নিয়মিত এই দুয়া করা।رَبَّنَا

ظَلَمْنَا أَنفُسَنَا وَإِن لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ
উচ্চারণঃ রাব্বানা যলামনা আং-ফুসানা ওয়া-ইল্লাম তাগ-ফিরলানা ওয়াতার হা’মনা লানা কুনান্না মিনাল খসিরিন।
অর্থঃ হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা নিজেদের প্রতি যুলুম করেছি। অতএব তুমি যদি আমদেরকে ক্ষমা না করো এবং আমাদের প্রতি দয়া না করো, তাহলে নিশ্চয়ই আমরা ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত হব। সুরা আল-আ’রাফঃ ২৩।

(৩) গুনাহ থেকে মাফ পাওয়ার জন্য ও নেককার বান্দা হিসেবে মৃত্যুর জন্য দুয়াঃ

رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الْأَبْرَارِ
উচ্চারণঃ রব্বানা ফাগফির লানা যুনুবানা ওয়া-কাফফির আ’ন্না সাইয়্যিআ-তিনা ওয়া তাওয়াফ-ফানা মাআ’ল আবরা-র।
অর্থঃ হে আমাদের পালনর্তা! তুমি আমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দাও, আমাদের মন্দ কাজগুলো দূর করে দাও আর আমাদেরকে নেককার হিসেবে মৃত্যু দান করো। সুরা আলে ইমরানঃ ১৯৩।

(৪) পিতা-মাতার জন্য দুয়াঃ
জীবিত বা মৃত পিতা-মাতা দুজনের জন্য এই দুয়া বেশি করতে হবেঃ

رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا
উচ্চারণঃ রব্বির হা’ম-হুমা কামা রব্বা ইয়ানি সগিরা।
অর্থঃ হে আমাদের পালনর্তা! তুমি আমার পিতা-মাতার প্রতি তেমনি দয়া করো, যেইরকম দয়া তারা আমাকে শিশু অবস্থায় করেছিল। সুরা বনী-ইসরাঈলঃ ২৪।

(৫) ছোট্ট কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা দুয়াঃ
আল্লাহ যখন কারো ভালো করতে চান তখন তাকে অনেক টাকা পয়সা, ভালো স্বামী বা স্ত্রী, দামী গাড়ি দেননা। যদিও আমরা এইগুলোকেই কল্যানের বিষয় বলে মনে করি। পার্থিব সুখ স্বাচ্ছন্দ্য কখনো আল্লার নেয়ামত হতে পারে, কখনোবা আল্লাহর পরীক্ষা হতে পারে। কিন্তু আল্লাহ যখন কারো কল্যান করতে চান, তখন তাকে “ফিকহ” বা দ্বীনের গভীর জ্ঞান দান করেন।আর সেই জ্ঞান চাওয়ার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো সুন্দর ছোট্ট একটা দুয়া আছে, আপনারা মুখস্থ করে নিতে পারেন।

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ عِلْماً نَافِعاً، وَرِزْقاً طَيِّباً، وَعَمَلاً مُتَقَبَّلاً
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস-আলুকা ই’লমান নাফিআ’, ওয়া রিযক্বান ত্বইয়্যিবা, ওয়া আ’মালাম-মুতাক্বব্বালা।

অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট উপকারী জ্ঞান, পবিত্র জীবিকা ও কবুল করা হয় এমন আমল প্রার্থনা করছি। ইবনে মাজাহ, হিসনুল মুসলিম পৃষ্ঠা ১১৩।এই দুয়াটা আমার খুবই প্রিয়, কারণ এর সাথে আরো দুইটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় চাওয়া হয়েছেঃ রিযকান ত্বাইয়্যিবান বা পবিত্র জীবিকা। এর দ্বারা দুনিয়াবি চাহিদার পূরণের জন্যও দুয়া করা হলো আর, আ’মালান মুতাক্বাব্বালান বা এমন আমল যা আল্লাহর কাছে কবুল হয়, পরকালের জন্য যা প্রয়োজন সেটাও প্রার্থনা করা হলো।

এতো গুরুত্বপূর্ণ তিনটা বিষয় একসাথে ছোট্ট একটা দুয়ার মধ্যে থাকায় আমাদের সবার শিখে নেওয়া উচিত।এই দুয়া প্রত্যেকদিন ফযরের ফরয নামাযের সালাম ফেরানোর পর একবার পড়া সুন্নত। এছাড়া সিজদাতে, সালাম ফিরানোর পূর্বে, যেকোনো সময় করা যাবে। আরবীতে না পারলে বাংলাতেও দুয়া করা যাবে, যতদিন না মুখস্থ হচ্ছে। দুয়াটা পাওয়া যাবে হিসনুল মুসলিম বইয়ের ১১৩ নাম্বার পৃষ্ঠায়।

(৬) হেদায়েতের উপর অটল থাকা, অন্তর যেন দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে তার জন্য দুয়াঃ
আরবীতে হৃদয়কে বলা হয় ‘ক্বালব’, যার একটা অর্থ হচ্ছেঃ যেই জিনিস খুব দ্রুত পরিবর্তন হয়ে যায়। অর্থাৎ, মানুষের হৃদয় খুব দ্রুত পরিবর্তন হয়ে যায়, একারণে মানুষ আজকে যাকে ভালোবাসে, কাল তাকে ঘৃণা করে। কেয়ামতের পূর্বে এমন হবে যে, মানুষ সকালবেলা ঈমানদার থাকবে, কিন্তু সন্ধ্যা সময় সে কাফের হয়ে যাবে। আবার মানুষ সন্ধ্যাবেলায় ঈমানদার থাকবে, কিন্তু সকালবেলা কাফের হয়ে যাবে। এইজন্য হৃদয় যাতে দ্বীনের উপরে প্রতিষ্ঠিত থাকে, ফেতনায় পড়ে হৃদয় যেন পরিবর্তন হয়ে না যায়, পাপাচার, কুফুরী, আল্লাহর নাফরমানির দিকে ঝুকে না পড়ে সেই জন্য আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এই দুয়াটি বেশি বেশি করে পড়তেনঃ

يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلَى دِينِكَ
উচ্চারণঃ ইয়া মুক্বাল্লিবাল ক্বুলুব! সাব্বিত ক্বালবী আ’লা দ্বীনিক।
অর্থঃ হে হৃদয় সমূহ পরিবর্তন করার মালিক! আমার হৃদয়কে তোমার দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখো। সুনানে তিরমিযী।এছাড়া ক্বুরআনে বর্ণিত এই দুয়া পড়া যেতে পারেঃ

رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً ۚ إِنَّكَ أَنتَ الْوَهَّابُ
উচ্চারণঃ রব্বানা লা তুযিগ ক্বুলুবানা বাঅ’দা ইয হাদাইতানা ওয়াহাব লানা মিল্লাদুনকা রাহ’মাহ, ইন্নাকা আংতাল ওহহাব।

অর্থঃ হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে হেদায়েত করার পর তুমি আমাদের অন্তরকে বাঁকা করে দিয়োনা এবং তোমার নিকট থেকে আমাদেরকে রহমত দান করো। নিশ্চয়ই তুমি অত্যন্ত দয়ালু। সুরা আলে ইমরানঃ ৮। অন্তরকে বাঁকা অর্থ হচ্ছে অন্তরে মুনাফেকী, কুফুরী, পাপাচার বা আল্লাহর অবাধ্যতা প্রবেশ করা।

(৭) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্দর একটি দুয়াঃ
মুখস্ত করে নিতে পারেন ও মুনাজাতে বেশি বেশি করে আর বিশেষ করে সিজদাতে এই দুয়া করতে পারেন।

اَللهم إِنِّي أَسْأَلُكَ الهُدَى، وَالتُّقَى، وَالعَفَافَ، وَالغِنَى
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নি আস-আলুকাল হুদা ওয়াত-তুক্বা ওয়াল আ’ফাফা ওয়াল গিনা।
অর্থঃ হে আল্লাহ আমি তোমার কাছে হেদায়েত, তাক্বওয়া, সুস্থতা ও সম্পদ প্রার্থনা করছি। সহীহ মুসলিমঃ ২৭২১, তিরমিযীঃ ৩৪৮৯, ইবনু মাজাহঃ ৩৮৩২, আহমাদঃ ৩৬৮৪।

(৮) ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় যেকোনো শিরক থেকে বাঁচার দুয়াঃ
মনে করুন কোন ব্যক্তি চল্লিশ বছর যাবত আল্লাহর ইবাদত করলো, কত যে নফল সুন্নত নামায পড়লো, রোযা রাখলো, কিন্তু মরণের পূর্বে শিরক করে তোওবা না করেই মারা গেলো। একটা মাত্র শিরক তার সমস্ত আমল নষ্ট করে দেবে (নাউযুবিল্লাহি মিং যালিক)! কেয়ামতের দিন তার আমলগুলোর কোনো ওযন আল্লাহ তাকে দেবেন না, এইগুলোকে ধূলো-বালিতে রূপান্তরিত করে দেবেন। আর জেনে হোক বা না জেনেই হোক যে কেউ, যেকোনো সময় শিরকে লিপ্ত হতে পারে, যে যত বড় নেককারই হোক না কেনো, যদি না আল্লাহ তাকে হেফাজত করেন।

এইজন্য শিরক করা অথবা অনিচ্ছায় শিরকে লিপ্ত হওয়া থেকে আল্লাহর কাছে সবসময় আশ্রয় চাইতে হয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো একটা দুয়া আছে, কেউ যদি প্রতিদিন সকালে বিকালে অন্তত একবার বা তিনবার করে পড়েন, তাহলে আশা করা যায় আল্লাহ তাকে শিরক থেকে হেফাজত করবেন। আপনি কি জানেন, সেই দুয়াটা কি? দুয়াটা হচ্ছেঃ

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أُشْرِكَ بِكَ وَأَنَا أَعْلَمُ، وَأَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لاَ أَعْلَمُ
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ’উযুবিকা আন উশরিকা বিকা ওয়া আনা আ’লাম, ওয়া আস-তাগফিরুকা লিমা লা আ’লাম।

অনুবাদঃ হে আল্লাহ! আমার জানা অবস্থায় তোমার সাথে শিরক করা থেকে তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আর আমার অজানা অবস্থায় কোনো শিরক হয়ে গেলে তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি।আহমাদঃ ৪/৪০৩, হাদীসটি সহীহ, সহীহ আল-জামে ৩/২৩৩। হিসনুল মুসলিমঃ পৃষ্ঠা ২৪৬।

(৯) যেকোন বিপদ কিংবা দুঃশ্চিন্তা থেকে মুক্তির জন্য এই দুয়া ইউনুসঃ
সমুদ্রের গভীর পানির নীচে, তিমি মাছের পেটে অন্ধকারে ডুবে থাকা অবস্থায় ইউনুস আ’লাইহিস সালাম এই দোয়া করেছিলেন এবং কঠিন বিপদ থেকে উদ্ধার পেয়েছিলেন।

لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظّالِمِينَ
উচ্চারণঃ লা ইলা-হা ইল্লা আংতা, সুবহা’-নাকা ইন্নি কুংতু-মিনায-যলিমিন।
অর্থঃ (হে আল্লাহ!) তুমি ছাড়া আর কোনো উপাস্য নাই, তুমি পবিত্র ও মহান! নিশ্চয় আমি জালেমদের অন্তর্ভুক্ত।ক্বুরআনুল কারীমে এই দুয়া বর্ণিত হয়েছে সুরা আল-আম্বিয়া, আয়াত নাম্বার ৮৭-তে।দুয়া ইউনুসের উপকারীতাঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “কোনো মুসলিম ব্যক্তি যদি এই (দুয়া ইউনুস) পড়ে, তাহলে তার দুয়া কবুল করা হবে।” অন্য হাদীস অনুযায়ী, “এই দুয়া পড়লে আল্লাহ তার দুঃশ্চিন্তা দূর করে দিবেন।” সুনানে আত-তিরমিযী।দুয়া কিভাবে পড়তে হবেঃ বিপদ আপদ বা দুঃশ্চিন্তার সময় এই দুয়া বেশি বেশি করে পড়তে হয়।

যতবার ইচ্ছা ও যতবার সম্ভব হয় ততবার পড়বেন। এক লক্ষ পঁচিশ হাজার পড়ে যে “খতম ইউনুস” পড়ানো হয় হুজুর বা মাদ্রাসার ছাত্রদেরকে টাকা দিয়ে ভাড়া করে, বা দুয়া কেনাবেচা করা হয়, এইগুলো বিদআ’ত। এরকম খতমে ইউনুস পড়ানোর কোনো দলীল নেই। দুয়া ইউনুস আপনারা নিজে যতবার সম্ভব হয় ততবার পড়বেন, এত এত বার পড়তে হবে, এমন কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। আপনি নিজের জন্য নিজে দুয়া করবেন, আল্লাহর কাছে সেটাই বেশি পছন্দনীয়। আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর অতুলনীয় রহমতের ছায়ার মধ্যে আশ্রয় দিন, আমীন।

(১০) আল্লাহর যিকর, শুকিরিয়া ও সুন্দরভাবে তাঁর ইবাদত করার জন্য সাহায্য চাওয়ার দুয়াঃ

اللَّهُمَّ أَعِنِّي عَلَى ذِكْرِكَ، وَشُكْرِكَ، وَحُسْنِ عِبادَتِكَ
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আ ই’ন্নী আ’লা যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হু’সনি ইবাদাতিক।
অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তোমার স্মরণ, তোমার কৃতজ্ঞতা এবং তোমার সুন্দর ইবাদত করার ব্যাপারে আমাকে সাহায্য কর।

এই দুয়া ইচ্ছা করলে নামাযের ভেতরে সিজদাতে বা সালাম ফেরানোর পুর্বে দুয়া মাসুরার সময়ও করা যায়। এই দুয়াটা এতো গুরুত্বপূর্ণ যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম একজন সাহাবীকে এই দুয়া পড়ার জন্য বিশেষভাবে ওয়াসীয়ত করে যান।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম মুয়ায বিন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আ’নহুর হাত ধরে বলেছিলেন, “হে মুয়াজ! আল্লাহর কসম আমি তোমাকে ভালোবাসি। অতঃপর তিনি বললেন, হে মুয়াজ! আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি যে তুমি প্রত্যেক সালাতের শেষ এই দুয়াটি করা ত্যাগ করবেনা, “আল্লাহুম্মা আ ই’ন্নী আ’লা যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হু’সনি ইবাদাতিকা।” আবু দাউদঃ ১/২১৩, নাসায়ী, ইবেন হিব্বান, হাদীস সহীহ।

(১১) জান্নাত প্রার্থনা করা ও জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাওয়ার দুয়াঃ

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ النَّارِ
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল জান্নাতা ওয়া আ’উযু বিকা মিনান্নার।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জান্নাত চাই এবং জাহান্নাম থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে তিন বার জান্নাত প্রার্থনা করে, জান্নাত আল্লাহর কাছে দুয়া করে, হে আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করো। যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে তিন বার জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে, জাহান্নাম আল্লাহর কাছে দুয়া করে, হে আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দাও।” তিরমিযিঃ ২৫৭২, ইবনে মাজাহ ৪৩৪০, শায়খ আলবানি সহীহ বলেছেন, সহীহুল জামি ৬২৭৫।

উল্লেখ্য সকাল সন্ধ্যায় ৭ বার “আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান্নার” পড়ার হাদীসটা জয়ীফ বা দুর্বল, শায়খ আলবানী সিলসিলা জয়ীফাহঃ ১৬২৪। সুতরাং সেটা না পড়ে এই দুয়া পড়বেন, কারণ এটাতে জান্নাত চাওয়া ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাওয়া দুইটা দোয়া আছে আর এটা সহীহ। ঐটা থেকে এই দুয়াটা ভালো ও সহীহ।

Post MIddle

(১২) কেয়ামতের দিন হিসাব সহজ করার জন্য দুয়াঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “প্রত্যেকের হিসাব নেওয়া হবে আর আল্লাহ যার হিসাব নেবেন তাকে শাস্তি দেবেন।” এই কথা শুনে সাহাবীরা ভয় পেলো, কারণ কে এমন আছে যে নিষ্পাপ? সুতরাং সকলেই শাস্তি পাবে। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “মুমিনদের জন্য হিসাব সহজ করা হবে। কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাঁর ঈমানদার বান্দাদেরকে রহমতের চাদরে ঢেকে নেবেন, অন্যদের থেকে আলাদা করে দেবেন। এরপরে গোপনে তাকে তার পাপকাজগুলো দেখানো হবে।

বান্দা তার পাপকাজগুলো দেখে ভয় পেয়ে যাবে, আর চিন্তা করতে থাকবে তাহলেতো আমার বাঁচার কোনো পথ নাই! তখন আল্লাহ তাকে বলবেন, “তুমি পাপ করেছো কিন্তু অমুক সময় তোওবা করেছো আর আমি তোমার তোওবা কবুল করেছি। আর শুধু কবুলই করিনাই, বরং তোওবা করেছো এইজন্য তোমার পাপ কাজগুলোকে আমি এখন নেকীতে পরিবর্তন করে দিলাম।” এইকথা শুনে বান্দা খুব খুশি হয়ে বলবে, “হে আল্লাহ আমারতো আরো অনেক পাপ আছে, সেইগুলোতো দেখতে পাচ্ছিনা (পাপের পরিবর্তে নেকী পাওয়ার আশায় সে এই কথা বলবে)।”

এরপরে বান্দাকে তার আমলনামা ডান হাতে দেওয়া হবে। এই হচ্ছে হিসাব সহজ করার পদ্ধতি। এরকম যেন হিসাব গ্রহণ সহজ করা হয়, এই জন্য এই দুয়া করতে হয়ঃ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্ম হা’সিবনি হি’সাবাই-য়্যাসিরা।
অর্থঃ হে আল্লাহ তুমি আমার হিসাব সহজ করো।
ইমাম হাকিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, শায়খ আলবানীর মতে দুয়াটি হাসান সহীহ।

(১৩) দুঃখ ও দুশ্চিন্তার সময় পড়ার দুয়াঃ

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নি আ’ঊযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হা’যান, ওয়াল আ’জযি ওয়াল কাসাল, ওয়াল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া দালাই’দ দ্বাইনি ওয়া গালাবাতির রিজা-ল।
অর্থঃ হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে। সহীহ বুখারীঃ ২৮৯৩। সেখানে এসেছে রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এই দুয়াটি বেশি বেশি করতেন। আরও দেখুন বুখারী, (ফাতহুল বারীসহ) ১১/১৭৩।

(১৪) দুই সিজদার মাঝখানে বসাঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম দুই সিজদার মাঝখানে বসা অবস্থাতে দুয়া করতেন। দুই সিজদার মাঝখানে এই দুয়াগুলো করার সময় তাশাহুদের মতো আংগুন দিয়ে ইশারা করা সুন্নত। যেই দুয়া করতে হবেঃ ছোট্ট এই দুয়াটা কি মুখস্থ করা যায়না?রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফরয, সুন্নত, নফল যে কোনো সালাতের দুই সিজদার মাঝখানে বসা অবস্থায় এই দুআটি করতেনঃ

رَبِّ اغْفِرْ لِي، رَبِّ اغْفِرْ لِي
উচ্চারণঃ রব্বিগ ফিরলি, রব্বিগ ফিরলি।
অর্থঃ হে আমার রব আমাকে ক্ষমা করা, হে আমার রব আমাকে ক্ষমা কর। আবু দাউদঃ ১/৩১, ইবনে মাজাহ, দুয়াটা সহীহ।এই ছোট্ট দুয়াটা পড়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ মিস করা ঠিকনা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিনে ৭০ থেকে ১০০ বার তোওবা করতেন। আপনি যদি সালাতের দুই সিজদার মাঝখানে এই দুয়াটা পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলেন তাহলে দিনে যত রাকাত করে সালাত পড়বেন, তত বারই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া হবে। আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়ার একটা উপায় হচ্ছে বেশি বেশি করে নিয়মিত তোওবা ও ইস্তিগফার করা (ক্ষমা চাওয়ার দুয়া করা)। এছাড়া দুই সিজদার মাঝখানে আরেকটা ছোট্ট সুন্দর দুয়াঃ

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي، وَارْحَمْنِي، وَاهْدِنِي، وَاجْبُرْنِي، وَعَافِنِي، وَارْزُقْنِي، وَارْفَعْنِي
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মাগফিরলী, ওয়ারহা’মনী,ওয়াহদিনী,ওয়াজবুরনী,ওয়াআ’ফিনি,ওয়ারযুক্বনী, ওয়ারফা‘নী।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আমার প্রতি দয়া করুন, আমাকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন, আমার সমস্ত ক্ষয়ক্ষতি পূরণ করে দিন, আমাকে নিরাপত্তা দান করুন, আমাকে রিযিক দান করুন এবং আমার মর্যাদা বৃদ্ধি করুন”।

হাদীসটি ইমাম নাসাঈ ব্যতীত সুনান গ্রন্থগারগণ সবাই সংকলন করেছেন। আবূ দাউদঃ ৮৫০, তিরমিযীঃ ২৮৪, ২৮৫, ইবন মাজাহঃ ৮৯৮। শায়খ আলবানির মতে হাদীস সহীহ।

বিঃদ্রঃ এই দুয়াটা কম-বেশি বিভিন্ন ভাবে বর্ণনা আছে, সবগুলো সহীহ – তবে এখানে যেটা দেওয়া আছে এটা সবচাইতে বড় যেখানে সবগুলো দুয়া একসাথে আছে। এটা করলে সবগুলো দুয়াই করা হলো।

(১৫) নেককার স্বামী/স্ত্রী ও সন্তানের জন্য দুয়াঃ

رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا
উচ্চারণঃ রব্বানা হাবলানা মিন আযওয়াজিনা ওয়া যুররিয়্যাতিনা ক্বুররাতা আ’ইয়ুন, ওয়াজআ’লনা লিল মুত্তাক্বীনা ইমামা।

অর্থঃ হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের স্ত্রীদের পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানের পক্ষ থেকে আমাদের জন্যে চোখের শীতলতা দান করো এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্য ইমাম (আদর্শ স্বরূপ) বানাও। সুরা আল-ফুরক্বানঃ ৭৪।

দিনে রাতে যে কোনো সময় আমল করার জন্য এই বইয়ের সবগুলো দুয়াই সহীহ, আর দাম মাত্র ৫০ টাকা। ছোট্ট এই বইটা পকেটে রেখে দেওয়া যায়, রাস্তায়, জার্নিতে, বাস স্ট্যান্ডে অপেক্ষায় বা যে কোনো অবসব সময়ে বের করে দুয়াগুলো শিখে বা পড়ে সময়টা নষ্ট না করে কাজে লাগানোর জন্য।

(১৬) সমস্ত মুসলিমদের মাগফিরাতের জন্য দুয়াঃ
আপনারা নিজের জন্য, নিজের পিতা-মাতার জন্য এবং সমস্ত মুসলিম পুরুষ ও মুসলিম নারীদের ক্ষমা প্রার্থনার জন্য ছোট্ট, সুন্দর এই কুরআনী এই দুয়াটা মুখস্থ করে নিতে পারেনঃ

رَبَّنَا اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُ
উচ্চারণঃ রব্বানাগ-ফিরলি ওয়ালি ওয়ালি-দাইয়্যা ওয়ালিল মু’মিনিনা ইয়াওমা ইয়াক্বুমুল হি’সাব।
অর্থঃ হে আমাদের পালনকর্তা! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে এবং সকল ঈমানদার লোকদেরকে আপনি সেইদিন ক্ষমা করে দিও, যেইদিন হিসাব কায়েম করা হবে। সুরা ইব্রাহিমঃ আয়াত ৪১।

(১৭) ওযুর পরে তৃতীয় পূর্ণাংগ একটি দুয়াঃ

اللهم اغفر لي ذنبي ووسع لي في داري وبارك لي في رزقي
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মাগফিরলী যামবী ওয়া ওয়াসসি’ ফি- দা-রী ওয়া বারিকলী ফি- রিযক্বী।
অর্থঃ হে আল্লাহ তুমি আমার গুনাহ সমূহ মাফ করে দাও, আমার ঘর-বাড়ীতে প্রশস্ততা দান করো এবং আমার রিযক্বে বরকত দান করো।উল্লেখ্য, এই দুয়াটা আপনারা যেকোন মুনাজাত বা দুয়াতেও পড়তে পারেন।

(১৮) ইলম বৃদ্ধির জন্য দুয়াঃ

رَّبِّ زِدۡنِي عِلۡمٗا
উচ্চারণঃ রাব্বি যিদনী ঈ’লমা।
অর্থঃ হে আমার পালনকর্তা! তুমি আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করো। সুরা ত্বোয়াঃ ১১৪।

(১৯) স্মৃতি শক্তি বাড়ানো, বুদ্ধির প্রখরতা বৃদ্ধি করা, জিহবার জড়তা বা তোতলামি দূর করার জন্য ও দাওয়াতী কাজে সাহায্য লাভের জন্য দুয়াঃ
رَبِّ اشْرَحْ لِي صَدْرِي
وَيَسِّرْ لِي أَمْرِي
وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِّن لِّسَانِي
يَفْقَهُوا قَوْلِي
উচ্চারণঃ রাব্বিশ-রহ’লী সদরী। ওয়া ইয়াসসিরলী আমরী। ওয়াহ’লুল উ’ক্বদাতাম-মিল্লিসানি। ইয়াফক্বাহু ক্বওলী।

অর্থঃ হে আমার পালনকর্তা! আমার বক্ষকে প্রশস্ত করে দাও। আমার কাজ সহজ করে দাও। আর আমার জিহবা থেকে জড়তা দূর করে দাও, যাতে করে তারা আমার কথা বুঝতে পারে। সুরা ত্বোয়া হাঃ ২৫-২৮।

(২০) দ্বীনের জ্ঞান চাওয়ার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো সুন্দর ছোট্ট একটা দুয়া আছে, আপনারা মুখস্থ করে নিতে পারেন।

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ عِلْماً نَافِعاً، وَرِزْقاً طَيِّباً، وَعَمَلاً مُتَقَبَّلاً
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস-আলুকা ই’লমান নাফিআ’ন, ওয়া রিযক্বান ত্বাইয়্যিবান, ওয়া আ’মালাম-মুতাক্বাব্বালা।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট উপকারী জ্ঞান, পবিত্র জীবিকা ও কবুল করা হয় এমন আমল প্রার্থনা করছি। ইবনে মাজাহ, হিসনুল মুসলিম পৃষ্ঠা ১১৩।

(২১) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এই বলে দুয়া করতেনঃ

اللَّهُمَّ انْفَعْنِي بِمَا عَلَّمْتَنِي وَعَلِّمْنِي مَا يَنْفَعُنِي وَزِدْنِي عِلْمًا
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মান ফাঅ’নী বিমা আ’ল্লামতানী, ওয়া আ’ল্লিমনা মা ইয়ানফাউ’নী, ওয়া যিদনী ই’লমা।
অর্থঃ হে আল্লাহ তুমি আমাকে যেই ইলম দান করছো, তা দ্বারা আমাকে উপকৃত করো, আমাকে সেই ইলম দান করো, যা আমাকে উপকৃত করবে। আর আমার ইলম আরো বাড়িয়ে দাও।ইবনে মাজাহঃ ১/৪৭, তিরমিযীঃ ৩৫৯৯। শায়খ আলবানী এই দুয়াটিকে সহীহ বলেছেন।

(২২) জীবনকে আলোকিত করার জন্য দুয়াঃ

رَبَّنَا أَتْمِمْ لَنَا نُورَنَا وَاغْفِرْ لَنَا إِنَّكَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
অর্থঃ হে আমাদের রব্ব! আমাদের জন্য আমাদের নূর (আলো) পূর্ণ করে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন; নিশ্চয় আপনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান।
উচ্চারণঃ রব্বানা আতমিম লানা-নূরানা, ওয়াগফির লানা, ইন্নাকা আ’লা-কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর।সুরা আত-তাহরীমঃ ৮।

(২৩) ধৈর্য লাভ এবং মুসলমান হিসেবে মৃত্যুবরণ করার জন্য দুয়াঃ

رَبَّنَا أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَّتَوَفَّنَا مُسْلِمِيْنَ
উচ্চারণঃ রব্বানা আফরিগ আ’লাইনা- ছবরাওঁ-ওয়াতাওয়াফ্ফানা- মুসলিমিন।
অর্থঃ হে আমাদের রব! আমাদেরকে পরিপূর্ণ ধৈর্য দান করুন এবং আমাদেরকে মুসলিম হিসাবে মৃত্যু দান করুন। সুরা আ’রাফঃ ১২৬।

(২৪) আল্লাহর অনুগ্রহ পাওয়ার জন্য মুসা আ’লাইহিস সালামের দুয়াঃ

رَبِّ إِنِّيْ لِمَا أَنْزَلْتَ إِلَيَّ مِنْ خَيْرٍ فَقِيْرٌ
উচ্চারণঃ রব্বি ইন্নী লিমা- আংঝালতা ইলাইয়্যা মিন খাইরিং ফাক্বীর।
অর্থঃ হে আমার প্রতিপালক! নিশ্চয় আপনি আমার প্রতি যে অনুগ্রহই নাযিল করবেন, আমি তার মুখাপেক্ষী। সুরা আল-ক্বাসাসঃ ২৪।

যারা অলসতা বশত বা ইমানের দুর্বলতার কারণে আরবী মুখস্থ করতে চান না বা পারেন না, তারা অন্তত বাংলা মুখস্থ করে রাখতে পারেন এবং মুনাজাতের সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো গুরুত্বপূর্ণ এই জিনিসগুলো আল্লাহর কাছে চাইতে পারেন।

وَصَلَّى اللَّهُ وَسَلَّمَ وَبَارَكَ عَلَى نَبِيِّنَا مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِهِ وَأَصْحَابِهِ أَجْمَعِينَ.
আল্লাহ্ দরূদ ও সালাম এবং বরকত বর্ষণ করুন আমাদের নবী মুহাম্মাদ, তাঁর বংশধর ও তাঁর সকল সাহাবীগণের উপর।

বিঃদ্রঃ আরবীর ১০০% সঠিক উচ্চারণ বাংলায় লিখা যায় না। সেইজন্য আপনারা অবশ্যই আরবী দেখে পড়বেন।

পছন্দের আরো পোস্ট