ঢাবিতে বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস উদযাপন

ঢাবি প্রতিনিধি।

গত (২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০) বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস ২০২০ উপলক্ষে ফার্মেসী অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে সহযোগিতায় ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফার্মেসী অ্যালমনাই অ্যাসোসিয়েশন (ডুপা) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের দ্বারা পরিচালিত ফার্মা ক্লাব। ওয়েবিনারের মাধ্যমে সকাল ৯.৩০ মিনিটে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় এবং শেষ হয় দুপুর ১২.৩০ টায়। অনুষ্ঠান সঞ্চালক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফার্মেসী বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার।

অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আক্তারুজ্জামান। উদ্বোধনী বক্তব্যে মাননীয় উপাচার্য ফার্মেসী শিক্ষা ও ফার্মেসি পেশার গুরুত্ব তুলে ধরেন।

বিশেষ অতিথি হিসাবে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন ফার্মাসিস্ট সুভাষ সিংহ রায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশি ও নব্বই দশকের তুখোড় ছাত্রনেতা, এবং বাংলাদেশ ফার্মেসী কাউন্সিলের প্রাক্তন সহ-সভাপতি। তিনি বাংলাদেশের ফার্মেসী শিক্ষার গুরুত্ব ও সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়ে স্বাস্থ্যসেবায় ফার্মাসিস্টদের ভুমিকা সম্পর্কে আলোকপাত করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফার্মেসী অনুষদ আয়োজিত ওয়েবিনারে অংগ্রহণকারি সকলে সুভাষ সিংহ রায় অবহিত করেন যে, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় গত ২৩/০৯/২০২ তারিখ হাসপাতালে গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্ট নিয়োগ সংক্রান্ত তিনটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। সেগুলো হলো, হাসপাতাল ফার্মেসি সার্ভিস অনুসরণে স্বাস্থ্য অধিদপতর/দপ্তর প্রতিষ্ঠার বিষয়ে পূর্ব ধারাবাহিকতার আলোকে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ, সরকারি হাসপাতালে গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্ট নিয়োগদান ও প্রতি ৫০ শয্যার বিপরীতে ০১ জন গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্ট পদ সৃজন। তিনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাননীয় সচিব সহাদয়কে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

এছাড়া অনলাইন ওয়েবিনারে বক্তব্য উপস্থাপন করেন ড. মোঃ ইউনুস মিয়া, সুপারভাইজিং ফার্মাসিস্ট, অনকোলজী ফার্মেসী, ক্যারোল হসপিটাল সেন্টার, মেরল্যিান্ড, আমেরিকা। একজন হসপিটাল ফার্মাসিস্টের ভূমিকা কি এবং কিভাবে সরাসরি রোগীর পাশে থেকে চিকিৎসকের নির্দেশনা বা পরামর্শপত্রকে সমন্বয় করে যৌক্তিক ভাবে ওষুধের সেবা প্রদান করতে পারে সে ব্যাপারে তার উপস্থাপনায় তুলে ধরেন। অন্য আরো একটি উপস্থাপনায় ড. মোঃ জাফর ইশবাল, কমিউনিটি ফার্মাসিস্ট, আমেরিকায় কমিউনিটি ফার্মেসী থেকে একজন ফার্মাসিস্ট কিভাবে রোগীদেরকে নিরাপদ স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে পারে সে ব্যাপারে উপস্থাপন করেন।

Post MIddle

বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড-এর চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর জনাব আব্দুল মুক্তাদির। তিনি বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের ভূমিকা উত্তরোত্তর প্রবৃদ্ধি এবং ফার্মেসী পেশাকে নতুন নতুন গবেষণার দিক উন্মোচন করে ওষুধীয় সেবাকে আরো কিভাবে প্রায়োগিক করা যায় তার গুরুত্ব আলোচনা করেন।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় সেক্রেটারী জনাব মোঃ আব্দুল মান্নান তার বক্তব্যে বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবসের গুরুত্ব তুলে আয়োজকদেরকে এই দিবস পালনের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তাছাড়া ফার্মাসিস্টরা বাংলাদেশে স্বাস্থ্য সেবার বিভিন্ন স্তরে দক্ষতার সাথে কাজ করছে তা উল্লেখ করেন এবং কিভাবে এ পেশাকে জন কল্যাণে আরোও নিয়োজিত করা যেতে পারে সে ব্যাপারে তিনি জোর দেন।

এছাড়া ফার্মাসিস্টরা অন্যান্য পেশার পাশাপাশি কিভাবে এ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখতে পারে সেটা সরকার গুরুত্বের সাথে দেখছে। সমন্নিত স্বাস্থ্য সেবায় সরকারের সদিচ্ছার বহিঃপ্রকাশের অংশ হিসাবে ফার্মেসি পেশাকে স্বাস্থ্য সেবায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে জানিয়ে তিনি সকলকে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানান। যে তিনটি প্রজ্ঞাপন গত ২৩/০৯/২০২০ তারিখ তাঁর মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা হয়েছে সেটা দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার ব্যাপারে সকলের সহযোগিতার প্রত্যাশা করেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী অনুষদের ডিন ও ডুপার সভাপতি অধ্যাপক ড. এস এম আব্দুর রহমান। তিনি সমাপনী বক্তব্যে বলেন – ফার্মাসিস্টরা আজ বাংলাদেশে তাদের যোগ্য স্থান অধিকার করে নিয়েছে। ওষুধ রপ্তানি করে আজ ওষুধ শিল্প বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে দেশের ২য় অবস্থানে রয়েছে। ফার্মাসিস্টদের একাগ্র চেষ্টায় এ অবদান সম্ভব হয়েছে।

তাছাড়া ওষুধ শিল্পের পাশাপাশি বহির্বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশও ধাপে ধাপে ডাক্তার ও নার্সদের পাশাপাশি ফার্মাসিস্টরাও হাসপাতাল ও ক্লিনিকে স্বাস্থ্য সেবায় অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। সেই ধারাবহিকতায় হাসপাতালে গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্ট নিয়োগ সংত্রান্ত তিনটি প্রজ্ঞাপন জারি করার জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আব্দুল মান্নান মহাদয়কে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

সেইসাথে ফার্মেসি কাউন্সিলের বর্তমান সহ-সভাপতি জনাব মোসাদ্দেক হোসেন ও সাবেক সহ-সভাপতি সুভাষ সিংহ রায়কে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। সরকারের এই সুচিন্তিত ও বলিষ্ঠ পদক্ষেপে নেয়ায় পেশার উন্নয়ন ও দেশের মানুষের স্বাস্থ্য সেবা সুনিশ্চিতের দ্বার উন্মোচিত হওয়ায় সে ব্যাপারে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করায় সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জনান। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারি সবাইকে অনুষদের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষনা করেন সভাপতি অধ্যাপক ড. এস এম আব্দুর রহমান।

পছন্দের আরো পোস্ট