দেশে এ বছর সাক্ষরতা বেড়েছে ০.৮০ শতাংশ

স্বর্ণক শাহী

সরকারি হিসাবে গত বছরের চেয়ে এ বছর বাংলাদেশে সাক্ষরতার হার শূন্য দশমিক ৮০ শতাংশ পয়েন্ট বেড়ে ৭৪ দশমিক ৭০ শতাংশ হয়েছে। অর্থাৎ ২৫ শতাংশের বেশি মানুষ এখনও সাক্ষরতার বাইরে রয়ে গেছে। সাক্ষরতার হার আরও বাড়াতে নানা কর্মসুচির কথাও জানিয়েছে সরকার। তাছাড়া চলমান মুজিববর্ষ উপলক্ষেও সাক্ষরতা বাড়াতে বিশেষ কার্যক্রম অব্যাহত আছে। তবে বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে সাক্ষরতার হার ধরে রাখা বেশ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বলে মনে করছেন শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা। এ অবস্থায় এ খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে বাস্তব সম্মত আরও নতুন নতুন কর্মসুচি হাতে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

দেশের শিক্ষাক্ষেত্রের এমনই বাস্তবতার মধ্যে আজ পালিত হবে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস। করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে- ‘কোভিড-১৯ সঙ্কট: সাক্ষরতা শিক্ষায় পরিবর্তনশীল শিখন-শেখানো কৌশল এবং শিক্ষাবিদদের ভূমিকা’। দিবসটি উপলক্ষে দিনব্যাপী কর্মসুচি পালন করবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এদিকে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সূত্রমতে, ৮ সেপ্টেম্বর ইউনেস্কো কর্তৃক আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় ১৭ নভেম্বর, ১৯৬৫ সালে। এর প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে ব্যক্তি, সম্প্রদায় ও সমাজে সাক্ষরতার গুরুত্ব তুলে ধরা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এটি পালন করা হয়।

করোনার কারণে বাংলাদেশে এবার দিবসটি পালিত হবে অনেকটা ছোট পরিসরে। সূত্রমতে, আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস উপলক্ষে আজ রাজধানীর তেজগাঁওয়ে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে দিনব্যাপী কর্মসুচি। সকাল ১১ টায় এ অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করবেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো: জাকির হোসেন। এতে সভাপতিত্ব করবেন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো: আকরাম-আল-হোসেন।

এর আগে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবসকে সামনে রেখে গত রোববার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন জানান, এক বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশে সাক্ষরতার হার শূন্য দশমিক ৮০ শতাংশ পয়েন্ট বেড়ে ৭৪ দশমিক ৭০ শতাংশ হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সবশেষ জরিপে সাক্ষরতার এ হার উঠে এসেছে। গতবছর দেশে সাক্ষরতার হার ছিল ৭৩ দমমিক ৯০ শতাংশ।

Post MIddle

প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকারের নিরলস প্রচেষ্টায় দেশে সাক্ষরতার হার বেড়ে এ পর্যায়ে এসেছে। ২০০৫ সালে তৎকালীন বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সময় সাক্ষরতার হার ছিল ৫৩ দশমিক ৫০ শতাংশ। তিনি জানান, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর আওতায় বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত প্রায় এক কোটি ৮০ লাখ নিরক্ষরকে সাক্ষরজ্ঞান দেওয়া হয়েছে। সাক্ষরতা বিস্তারে এ অর্জনের জন্য বাংলাদেশ সরকার ইউনেস্কোর স্বীকৃতি স্বরূপ আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা পুরস্কার লাভ করে। এছাড়া মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের ২৫০টি উপজেলার ১৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সী ৪৫ লাখ নিরক্ষরকে সাক্ষরজ্ঞান দেওয়া হচ্ছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, এরইমধ্যে এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রথম পর্যায়ে ১৩৪টি উপজেলায় শিখন কেন্দ্রের মাধ্যমে ২৩ লাখ ৫৯ হাজার ৪৪১ জন নিরক্ষরকে সাক্ষরতা প্রদান করা হয়েছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে আরও ২১ লাখ নিরক্ষরকে সাক্ষরতা প্রদান করার কার্যক্রম চলমান আছে।

দারিদ্র্য, অনগ্রসরতা, শিশুশ্রম, ভৌগলিক প্রতিবন্ধকতার কারণে এখনও অনেক শিশু বিদ্যালয়ের বাইরে রয়েছে জানিয়ে গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলন, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থায় এসব শিশুর প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য একটি প্রকল্পের (পিইডিপি-৪) আওতায় ৮-১৪ বছর বয়সী বিদ্যালয় বহির্ভূত ১০ লাখ শিশুকে উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তবে সাক্ষরতা বৃদ্ধির হার খুব বেশি সন্তোষজনক নয় বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষাবিদরা। তারা জানিয়েছেন, সাক্ষরতা বৃদ্ধির হার দেখে আত্মতুষ্টিতে না থেকে এখনও সাক্ষরতার বাইরে থাকা ২৫ শতাংশ মানুষকে কীভাবে এর ভিতরে আনা যায় সেটা নিয়ে ভাবতে হবে। তাছাড়া করোনার কারণে বয়স্করা আয়-রোজগারে ঝুঁকে পড়ায় তাদেরকে সাক্ষরতার আওতায় আনা কঠিন হবে। এজন্য বর্তমান প্রেক্ষাপটে সরকারকে নতুন পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে।

সূত্রমতে, সাক্ষরতা বৃদ্ধিতে প্রধান ভুমিকা রাখা দেশের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের রুপকল্প হচ্ছে, মানসম্মত প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও জীবনব্যাপী শিক্ষা। আর অভিলক্ষ্য হচ্ছে- প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ ও গুণগতমান উন্নয়নের মাধ্যমে সবার জন্য প্রাথমিক ও জীবনব্যাপী শিক্ষা নিশ্চিতকরণ

এছাড়া এ সেক্টরে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে মন্ত্রণালয়টির আওতাধীন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এ প্রতিষ্ঠানের রূপকল্প হচ্ছে- সকল শিশুর জন্য মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা। আর অভিলক্ষ হচ্ছে-প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ ও গুণগতমান উন্নয়নের মাধ্যমে সকল শিশুর জন্য একীভূত ও মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণ।#

পছন্দের আরো পোস্ট