“বাবা দিবস: বাবা ও ভালোবাসা”

ফজলে রাব্বি ফরহাদ।

বর্তমান বিশ্বে উদযাপিত দিবসগুলোর মধ্যে বাবা দিবস একটি। এই দিবসটি পালনের চিন্তা প্রথম ১৯০৯ সালে সনোরা স্মার্ট ডড নামক ওয়াশিংটনের এক মহিলার মাথায় আসে। কিন্তু তার এই ভাবনার কথা প্রথমে সবাই জানার পর হাস্য-রসাত্মক করে উড়িয়ে দিল। পরবর্তীতে ডডের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে সে মোটামুটি পর্যায়ের সফল হয়। পরের বছর তথা ১৯১০ সালে ওয়াশিংটনের স্পোকান নামক ছোট্ট শহরে কয়েকটি সংগঠনের উদ্যোগে পালিত হলো বাবা দিবস। তারপর ১৯১৬ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন এই দিবসকে সমর্থন করেন। পরবর্তীতে এক সময় এটা মার্কিন আইনসভাতেও পাশ হয়। সেই থেকে বিশ্বে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময় বাবা দিবস পালন হয়ে আসছে। কোথাও জুন মাসের তৃতীয় রবিবার, কোথাও ১৪ই মার্চ, কোথাও আবার ১৯শে মার্চ আবার কোথাও জুন মাসের প্রথম রবিবার। বাংলাদেশে দিবসটি পালিত হয় জুন মাসের তৃতীয় রবিবার। পিতার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা প্রকাশ করার জন্য বিশেষভাবে উৎসর্গ করে যে দিনটি পালন করা হয় সেটাই বাবা দিবস। আসলে বাবার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের জন্য নির্দিষ্ট কোন দিন লাগে না। তবুও বিশেষভাবে স্মরণ রাখার জন্য আজকের এই দিনটি পালন করা হয়।

বাবা এমন একজন প্রিয় মানুষ যার সাথে কথা বলতে হয় মেপে। ভুলচুক হলেই বকা খাওয়ার ভয়। বাবা নামের এই মানুষটি বাহিরে যত কঠিন, ভিতরে ততটাই কোমল। পরিবারের প্রধান হিসেবে নানান দায়িত্বের সামাল দিতে হয় তাকে। বাবা হওয়ার মতো গুরু দায়িত্বের কারণে তাকেই সহ্য করতে হয় বাইরের যত যন্ত্রণা। আবার তাকে ঘরের বিষয়গুলোও ভুলে থাকলে চলে না, ছেলে-মেয়েদের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের নিরাপত্তা দেওয়া সহ সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলার দায়িত্বও থাকে তার কাঁধে। বাবা হচ্ছে সেই মানুষটি যিনি আমার-আপনার প্রয়োজন পূরণের জন্য তার প্রয়োজন বিসর্জন দেন, আমার-আপনার সুখের জীবন নিশ্চিত করার জন্য তার সুখকে বিসর্জন দেন। বাবার ত্যাগের প্রতিদান দেওয়া কখনোই সম্ভব নয় বরং অনুভব করা সম্ভব। সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য নিজের বর্তমানকে হাসিমুখে উৎসর্গ করা এই বাবাদের আজ আলাদাভাবে স্মরণ করার দিন।

হ্যাঁ, প্রতিদিনই বাবার জন্য ভালোবাসা। তবে আজ বিশেষভাবে বাবাকে ভালোবাসি বলার দিন। এই দিনটি আজ পুরো বাংলাদেশে পালিত হবে বিভিন্ন আয়োজনে। কেউ বাবাকে নিয়ে কেক কাটবেন, কেউ বাবাকে বই কিংবা ফুল উপহার দিবেন। আবার যারা বাবা হয়েছেন তারাও ফিরে যাবেন তাদের শৈশবে। প্রয়াত বাবার কথা চিন্তা করে নীরবে চোখ মুছবেন অনেকে। অনেকে আবার নিজের শিশুসন্তানকে বুকে জড়িয়ে ধরে বাবার দুঃখ ভুলার চেষ্টা করবেন।

Post MIddle

বাবাকে নিয়ে প্রতিটি সন্তানের থাকে আবেগ-অনুভূতি। আজ ফেসবুক, টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ভেসে উঠবে বাবাকে নিয়ে লেখা সন্তানের সেই অনুভূতিগুলো। আবার কেউ কেউ বাবাকে চিঠি লিখে বাবার প্রতি তার ভালোবাসার জানান দিবেন। প্রতিটি সন্তানের জীবনের সেই শুরু থেকে বাবাকে নিয়ে থাকে কত স্মৃতি আর ইতিহাস। যেমনটি রয়েছে আপনার কিংবা আমারও। সেই ছোটবেলায় বাবার হাত ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া আবার সেখান থেকে বাড়ি ফেরা। শিক্ষাজীবনের দুপুরের সেই বিরতিতে নাস্তা খাওয়ার জন্য নিজে টাকা চাওয়ার আগেই বাবা হাসিমুখে হাতে নাস্তা কিংবা টাকা ধরিয়ে দেয়া। এরকম হাজারটা স্মৃতি মনে পড়লে আজও নীরবে বলে উঠি বাবা তোমাকে অনেক ভালোবাসি। আমার এই স্মৃতি আর অনূভুতির মতো আপনার বাবাকে নিয়ে আপনারও আছে এমন হাজারটা অনুভূতি।

আমাদের যত আবদার আমরা শুনাই আমাদের মায়েদের কাছে। আর সেগুলো পূরণ করেন বাবা। জীবনযুদ্ধে হার না মানা এক অকুতোভয় সৈনিক বাবা। সেই বাবাদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করার পাশাপাশি আপনার আছে কতোগুলো দায়িত্বও। প্রতিটি ধর্মই সেই দায়িত্বের তাগিদ দেয়। কখনো কটু ভাষায় কথা না বলা, সর্বোচ্চ সুন্দর আচরণ দেয়া, সবসময় বাবার খোজ খবর নেয়া আর আমৃত্যু সেবা-যত্ন করাও আপনার দায়িত্ব। পবিত্র কুরআনের সূরা বনী ইসরায়েলে মহান আল্লাহ বলেন-
” তোমাদের রব আদেশ দিয়েছেন তিনি ছাড়া অন্য কারো ইবাদত না করতে আর বাবা-মায়ের প্রতি
সদ্ব্যবহার করতে”।

এই দায়িত্ব পালন করার মধ্য দিয়েই প্রকাশ পাবে বাবার প্রতি আমাদের ভালোবাসা। তবেই স্বার্থক হবে বাবা দিবস। ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল বাবা। বেঁচে থাকুক সন্তানের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা নিয়ে। অনেক ভালোবাসি তোমায়, বাবা।

ফজলে রাব্বি ফরহাদ, শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

পছন্দের আরো পোস্ট