নাজুক তথ্যসেবা

তাশরিক সঞ্চয়।

তৃণমূল সাংবাদিকতায় অপ-সাংবাদিকতা মানে সাংবাদিকতার অপব্যবহারের একটা মোটা আস্তরণ বরাবরের। এগুলো অনেকটা মেঘের মতো। আসে,জমে,খেলে,ঝরে যায়। তবে ব্যবহারকারী বদলালেও ব্যবহার বদলায় না। দূষণের স্বীকার হন পেশায় আন্তরিক, দক্ষ এবং প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যমের সংবাদকর্মীরা। দেশের প্রথম সারির গণমাধ্যমের তৃণমূল সংবাদ দাতা হিসাবে তারাই নিয়োগ পান,যারা আদৌও ঐ তৃণমূলে, সম্মান,শক্তি,শিক্ষা আর কর্মদক্ষতার বিচারে যোগ্য। একটি গণমাধ্যম তার প্রকাশিত বা প্রচারিত খবরে সারাদেশের সেইসব খবর জানিয়ে থাকে, যা তার তৃণমূল সংবাদ দাতা বা প্রতিনিধিরা দিয়ে থাকেন। অধিকাংশ গণমাধ্যম কেবল জেলা প্রতিনিধি দিয়ে থাকেন। আয়তন বা কাজের জটিলতা থাকলে,জেলায় একাধিকও হয়। ভালো ব্র্যান্ড গুলোর মধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠান উপজেলা প্রতিনিধিও রাখেন। অর্থাৎ সত্য প্রকাশে এবং ঝুকিপূর্ণ পেশা পরিচালনার ক্ষেত্রে  সর্বধিক সতর্ক থাকেন গণমাধ্যম গুলোর প্রধান কার্যালয়। কাজেই গণমাধ্যমের অর্থাৎ আপনার এলাকায় কর্মরত প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের ওপর আপনি নির্ভর করতেই পারেন। প্রায় সব জেলাতেই ৩-৪ টা স্থানীয় গণমাধ্যম থাকে যেগুলো খবরের মান নিয়ন্ত্রণ করে। তবে বিনিয়োগ আর পরিসর মিলে অধিকাংশেরই পর্যাপ্ত মনিটরিং ও কোয়ালিটি কন্ট্রোল সম্ভব হয়ে ওঠে না। যুগের পরিবর্তন আর আধুনিকায়নের যোগাযোগ জন্ম দিয়েছে ইন্টারনেট ভিত্তিক গণমাধ্যম, নিউজ পোর্টাল,আইপি টিভি,ইউটিউব চ্যানেল। এক্ষেত্রেও কিছু গণমাধ্যম মানসম্পন্ন, যদিও গণমাধ্যম পরিচালনা আর কন্টেন্টের আদোল এখনও হাতে গোনা কয়েকটি ইন্টারনেট ভিত্তিক মিডিয়া ছাড়া কেউই রপ্ত করতে পারেনি। যেকারণে ইন্টারনেট কে পুঁজি করে পেশাদার গণমাধ্যম কে হেও করে দিচ্ছে এক শ্রেণীর সাংবাদিক ও নামধারী সাংবাদিক। প্রায় সবগুলো জেলা উপজেলাতে স্থানীয়, জাতীয় মিলে ২০ থেকে ৫০ জন কে সাংবাদিক পরিচয়ে পাওয়া যায়। এই বাংলায় তৃণমূল  সাংবাদিক শব্দটাকে ধারণ করে এমন  জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ভাই-বোনেরা অনেকটাই থমকে গেছেন আধুনিক গণমাধ্যম আর গণমাধ্যমের সহজলভ্যতা এই দু’য়ের কারনে। অর্ধেক ভালো হলে অর্ধেক খারাপ এই পরিসংখ্যানেই চলছে দেশের তৃণমূল সাংবাদিকতা। মূল ধারার সাংবাদিকদের দ্বিধাবিভক্তী ইন্ডাস্ট্রির চলমনা আবহের কারন। যদিও এখানে কাউকে দোষারোপ করার সুযোগ নেই। পারিভাষিক শব্দের মতো গণমাধ্যমও বদলাবে এটাই স্বাভাবিক।   পরিবর্তন হয় এমন ঘটনায় মিশ্রণ থাকবেই।
গ্রামীণ সাংবাদিকতার প্রবাদ পুরুষ কাঙাল হরিনাথের ‘গ্রাম বার্ত্তা’র  আঁতুড়ঘর কুষ্টিয়ার একটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনার উপজেলা দৌলতপুর। বাংলাদেশী গণমাধ্যমের প্রধান কয়েকটি কার্যালয়ে কাজ করার মাঝারি অভিজ্ঞতা আর সেই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এই দৌলতপুরের সাংবাদিকতা বা আমার দৃষ্টির তথ্যসেবা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে,তার সাথে আমার পেশার মুরব্বিদের দেয়া জ্ঞানগুলোর মিশ্রিত  সমীকরণ বলছে- দৌলতপুরের আপামর জনসাধারণ ও এই উপজেলার আর্থসামাজিক উন্নয়নে গণমাধ্যম চর্চায় পরিবর্তন আবশ্যক। আর তার সময় এখনই। উন্নয়নশীল বাংলাদেশে সম্ভাবনার দৌলতপুর এরকমই হাতছানি দেয় এখানকার মিডিয়া পাড়ায়। আয়তন, দৈনন্দিন কজের বিবেচনায় এ অঞ্চলে যেমন পর্যাপ্ত সংবাদকর্মীর দরকর তেমনি দরকার গণমাধ্যম চর্চার জন্য সাংগঠনিক কাঠামো। বেশ কয়েকটি নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত সংগঠন এখানে চললেও সাংগঠনিক কার্যক্রম, সাংবাদিকদের স্বার্থ রক্ষা ও বস্তুনিষ্ঠ খবরের চর্চায় বেশ পিছিয়ে সবগুলো সংগঠনই। স্থানীয় প্রশাসন, সর্বস্তরের জনপ্রতিনিধি, সামাজকর্মী,ব্যবসায়ী,সাংস্কৃতিক কর্মী সকলের কার্যক্রমে সুবিধা ও স্বচ্ছতা আনতে এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ দৌলতপুরের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটাতে এ অঞ্চলের তথ্যসেবা নিশ্চিত হওয়া জরুরি। সার্বিক প্রেক্ষাপটকে তথ্য সেবা দিতে এবং উপজেলাটির সার্বিক উন্নয়ন মনিটরিং ও গবেষণার জন্য সাংবাদিকদের সাংগঠনিক কাঠামো বাস্তবায়ন অকল্পনীয় জরুরি। হাতে লেখা খবর ফ্যাক্স করে পাঠানো,চিঠির যোগাযোগ  আর ছোট্ট ক্যাসেট মারফত ভিডিও ফুটেজ পাঠানো এই তো মাত্রই আগের দশকের ঘটনা। তৃণমূল সাংবাদিক সমাজের ঐ সময়ের আবহটা ভেবে দেখতে পারেন।
Post MIddle
অপব্যবহার আর অপব্যবহৃত হওয়া দু’ই তৃণমূলে এই পেশাকে অবমাননাকর পর্যায়ে নিয়ে যায়। যেকারণে খবরের ভ্যালু নেমে যায়। খুব ছোট্ট-সহজ বিষয়ও সমাধানের জন্য তখন খবর প্রকাশ-প্রচারে অধিক গুরুত্ব দিতে হয়। একই ভাবে ব্যাক্তিগত প্রচার প্রচারণায় যখন অনলাইন মিডিয়াগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে তখন তার সহজলভ্যতা বিষয়টাকে যত্রতত্র করে ফেলছে। সেই সুবাদে গুরুত্বপূর্ণ মানুষেরা গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য বা তথ্যগুলো এসব অনলাইন মিডিয়ায় দিতে অনুৎসাহিত হচ্ছে। বর্তমান প্রজন্মে, মানে আমাদের পরবর্তী থেকে শুরু করে ট্যালেন্ট ছেলে-মেয়েগুলো সাংবাদিকতার ভুল ট্র্যাকে দৌড়ে হোঁচট খাচ্ছে। তৃণমূল বা মফস্বল সাংবাদিকতায় এমন ঘটনার শতাংশই বেশি। বলতে পারেন, স্থানীয় সরকারের ছোট্ট একটা প্রশাসনিক কাঠামো উপজেলা পর্যায় আর সকলের চেনাজানা একটি কমিউনিটির জন্য একগুচ্ছ সংবাদকর্মী খুব সহজেই নান্দনিক ও কার্যকরী তথ্য সেবা দিতে পারে। সর্বস্তরের মানুষের একটি কমন অনুষঙ্গ সংবাদ। যুগের সাথে সাথে প্রেক্ষাপটের পরিবর্তনে যার অস্তিত্বের জন্য বরফ গলতে হবে বয়জ্যেষ্ঠদের। পরিশুদ্ধি ও প্রতিষ্ঠার মনোবাসনা থাকতে হবে নতুনদের। মনে রাখতে হবে গণমাধ্যমের শত্রুরাই খবর কে সস্তা এবং সহজ বানাতে চেষ্টা করবে। আরও মনে রাখতে হবে,মফস্বল সংবাদকর্মীদের দেয়া খবরের ওপর আস্থা রাখে কেন্দ্রীয় গণমাধ্যম। এমনকি আপনার স্থানীয় গণমাধ্যমের জেলা কার্যালয়ও। বস্তুনিষ্ঠ খবরের চর্চা হোক প্রিয় দৌলতপুরে। তথ্যসেবা নিশ্চিত হোক জনগণের। খবর হবে সুখবর। সমৃদ্ধির প্রত্যাশা।
তাশরিক সঞ্চয় । লেখক ও সাংবাদিক
পছন্দের আরো পোস্ট