ঐতিহ্যের প্রতীক রাবির পুতুল চত্ত্বর

ফাহিম আহমেদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ঃ

লালচে রঙের তিনটি মাটির টেপা পুতুল। তাতে কারুকাজ বাহারি পোশাক, মাথায় রয়েছে মুকুট। একটি রাজা, একটি রাণী আর তাদের মাঝে একটি বাচ্চা। যেনো পুরো একটি পুতুলের পরিবার।

মাটির পুতুল দেখলেই মনে পড়ে যায় ছোটবেলার পুতুল খেলার কথা। ‘মেয়ে আমার বড় হয়েছে, আর ঘরে রাখতে পারি না, তাই আজ বিকেলে পাশের বাড়ির ছেলে পুতুলের সাথে আমার মেয়ে পুতুলের বিয়ে’ এ যেনো গ্রাম বাংলার এক সাধারণ রূপ।

একসময় পুতুল খেলা ছিলো বড় ধরনের উৎসবের মতো। ছোটদের পাশাপাশি বড়রাও অংশ নিতেন এই খেলায়। বাঙালির এই বিলুপ্তপ্রায় ঐতিহ্যের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে তৈরি করা হয় ‘রিজেনারেট’ নামে ভাস্কর্যটি। এটি রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে নির্মিত। যা বর্তমানে পুতুল চত্ত্বর নামে পরিচিত।

‘রিজেনারেট’ নামক এই ভাস্কর্যটি তৈরি করেন চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী সৈয়দ মামুনার রশিদ। ২০০৭ সালে এই ভাস্কর্যটির জন্য শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন পুরস্কার পান তিনি।

Post MIddle

মাটির এই টেপা পুতুলটির বেদীতেও রয়েছে গ্রামীণ বাঙালির নানা ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির কথা। বেদীতে দেখা যায় মাঠে রাখালের গরু চড়ানোর দৃশ্য, বেদেদের সাপ খেলা, ফসলের মাঠে কাকতাড়ুয়া ও সাপ-লুডু খেলা। যা পুরোটাই আমাদের গ্রামীণ জীবনব্যবস্থা ও সংস্কৃতির প্রতীক হিসেবে ফুটে উঠেছে। পুরো ভাস্কর্যটি দেখলেই মনে হয় যেনো গ্রামীণ কোন পরিবেশে হারিয়ে গেছি। চোখের সামনে স্বপ্নের মতো বিলুপ্তপ্রায় ঐতিহ্যের দৃশ্যগুলো দেখতে পাই।

কথা হয় ‘রিজেনারেট’ ভাস্কর্যটির স্থপতি সৈয়দ মামুনার রশিদ এর সাথে। তিনি বলেন, ‘রিজেনারেট’ শব্দটির শাব্দিক অর্থ ‘পুনরুদ্ধার করা’ বা ‘পুনর্জীবিত করা’। আমাদের হাজার বছরের প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্যকে, আমাদের শেকড়কে যেনো ভুলে না যাই সেজন্য এই ভাস্কর্যটি তিনি নির্মাণ করেন। এছাড়া আমাদের পূর্বপুরুষদের মাটির সাথে, নদীর সাথে সম্পৃক্ততা ও জীবনব্যবস্থাকে পুনরুদ্ধার বা পুনর্জীবিত করার চেষ্টা করেছেন তিনি। এছাড়াও বেদীতে তিনি গ্রামীণ জীবনব্যবস্থার সাথে নিজের ব্যক্তিগত জীবনের উত্থান-পতনের গল্প ফুটিয়ে তুলেছেন।

চারুকলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মৌমিতা চৌধুরি ‘রিজেনারেট’ ভাস্কর্যটি নিয়ে বলেন, বর্তমানে ‘রিজেনারেট’ ভাস্কর্যটি শিক্ষার্থীদের মুখে মুখে পুতুল চত্ত্বর নামে পরিচিত। গ্রামীণ এই পরিবেশের মাঝে হারিয়ে যেতে পুতুল চত্ত্বরে বসে আড্ডা দেন শিক্ষার্থীরা। বলা যায় চারুকলার শিক্ষার্থীদের আড্ডার প্রিয় স্থান হলো এই চত্ত্বরটি। এখানে বসে রঙ-তুলিতে ছবি আঁকেন তারা। মিশে যান বাস্তব জীবনের গল্পে।

পুতুল চত্ত্বরে বসে ছবি আঁকছেন এমন এক শিক্ষার্থীর সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, এখানে বসে রঙ তুলিতে ছবি আঁকার সময় আমি গ্রামীণ পরিবেশের মাঝে হারিয়ে যাই। চারদিকে সবুজের মাঝে লালচে মাটির স্বাদ পাই। মাঝে মাঝে ভাস্কর্যটি দেখে নিজেও অনুপ্রাণিত হই।

এ বিষয়ে চারুকলা বিভাগের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মোস্তফা শরীফ বলেন, ‘রিজেনারেট’ ভাস্কর্যটি সৃষ্টিশীলতা ও নান্দনিকতা মননের পরিচয় বহন করেছিলো। যার প্রেক্ষাপটে ২০০৭ সালে টেরাকোটাটি শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন পুরস্কার পায়। এছাড়াও এটি বিভাগের সামনে অবস্থানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যাতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের সৃষ্টিশীল ও নান্দনিক কাজের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করে এবং বিরাট পরিসরে তা তুলে ধরতে পারে।’#

পছন্দের আরো পোস্ট