অনলাইন সহপাঠী

অনলাইন সহপাঠী। এমন একটি ওয়েবসাইট, যেখানে স্কুল কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা সরাসরি তাদের পাঠ্য বইয়ের সমস্যা সম্পর্কে প্রশ্ন করতে পারবে এবং সেই সকল প্রশ্নের উত্তর দিবেন দেশের সেরা শিক্ষকরা। এটি মূলত বাংলাদেশের প্রথম প্রশ্নত্তোর ভিত্তিক ওয়েবসাইট।

বুয়েটের সাদমান মাজিদ, ফারহান সাদিক সিয়াম এবং মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজি এর রওনক ইসলাম, “HELP & CLICK” নামের একটি অ্যান্ড্রয়েড এপ্লিকেশন তৈরী করেন যার জন্য তারা ২০১৭ সালের ৪ আগষ্ট  mBillionth অ্যাওয়ার্ড পান। মূলত এই এপ্লিকেশনটি তৈরী করা হয় বেওয়ারিশ মানুষের সন্ধানের জন্য। কিন্তু এতো বড় অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার পরও তাদের এপ্লিকেশনের ব্যবহারকারী প্রায় ছিলো না বললেই চলে।

কোনো এক রাতে, তাদের আড্ডার মধ্যে হঠাৎ রওনক ইসলাম বলে উঠলেন, “আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের নিয়ে কিছু করলে কেমন হয়”? এভাবে ভাবতে ভাবতে তারা এমন কিছু ভেবেছিলেন যা একটু অবাক করার মতোই। তারা  বিশ্বখ্যাত QUORA  ওয়েবসাইট থেকে উৎসাহিত হয়ে চিন্তা করলেন যে এমন কিছু করা যায় কিনা যেখানে শিক্ষার্থীরা যেকোনো সময় দেশের যেকোনো প্রান্তে বসে প্রশ্ন করতে পারবে এবং তার সেই প্রশ্নের উত্তর দিবেন দেশের সেরা শিক্ষকরা।

অবশ্য তাদের এমনটি ভাবার পিছনে কারও ছিলো। তারা নিজেরা দেশের কিছু বড় কোচিং সেন্টারের শিক্ষক ছিলেন এবং দেখা যেতো প্রায়ই তাদের কাছে শিক্ষার্থীরা পাঠ্য বইয়ের সমস্যা নিয়ে এসে তাদেরকে সাহায্য করতে বলছে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতেই তারা এমন কিছু করার চিন্তা করেন।

তাদের এই চিন্তাধারা কতোটা সফল হবে বা কতোটা সাড়া পাবে তা দেখার জন্য ২৬ সেপ্টেম্বর একটি ফেইসবুক পেইজ খুলেন এবং সৌভাগ্যবশত তাদের এই আইডিয়া অনেক বেশী সাড়া পায়। ফেইসবুকে এতো সাড়া পাওয়ার পর তারা একটি ওয়েবসাইট তৈরির জন্য উৎসাহ পায়। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। তারা তিন জন মিলে ওয়েবসাইট এর ডিজাইনিং এবং কোডিং এর কাজ শুরু করেন। কিন্তু এতো বড় পরিসরের কাজ তাদের তিন জনের পক্ষে করাটা অনেক কষ্টের ব্যাপার হয়ে যাচ্ছিলো, এজন্য তারা বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এ অধ্যয়নরত রাশিদ মাহাদী, আওসাফ আলম অনিন্দ, সাদিয়া আফরোজ ফাইজা, মাহমুদ মুশফিক, নাদিয়া আনজুম অন্তরা, লতিফ সিদ্দিক সানি, রায়হানুল আলম হৃদয় এবং শারমিন আক্তার পূরবী-কে তাদের এই কাজের সাথে সম্পৃক্ত করেন।

Post MIddle

এরপর খুব দ্রুত তাদের ওয়েবসাইটের কাজ চলতে থাকে এবং অবশেষে ২০১৭ সালের  ২১ ডিসেম্বর ঢাকার বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে ওয়েবসাইটটির উদ্বোধন করা হয় এবং নামের সাথে মিল রেখে এর অ্যাড্রেস দেওয়া হয় www.onlinesohopathi.com

এভাবেই তাদের স্বপ্ন, বাস্তবে রুপ নেয়। কিছুদিন পর দেখা গেলো ওয়েবসাইটে ব্যাপকহারে প্রশ্ন আসছে, যেগুলোর উত্তর দেওয়াটা সেই ১১ জনের পক্ষে অনেক কষ্টের ব্যপার হয়ে দাঁড়ায়। এজন্য তারা বুয়েট এবং বুয়েটের বাইরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, রুয়েট, কুয়েট, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেশ কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কয়েকজন মেধাবী শিক্ষার্থী নিলেন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে এবং তার কিছুদিন পর ঢাকার প্রায় সকল স্কুল কলেজ থেকে তারা একজন করে প্রতিনিধি নেয়।

এভাবেই তাদের কাজের পরিসর বাড়তে থাকে, বড় হতে থাকে তাদের স্বপ্ন। এত প্রতিকূলতা পেরিয়ে এসেও একসময় তারা প্রধান যে সমস্যাটার সম্মুখীন হলো তা হলো, তাদের কোনো স্পন্সর ছিলো না। আবার অন্যদিকে এতো বড় একটি ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য অর্থেরও প্রয়োজন। কিন্তু থেমে থাকলে তো চলবে না। সেজন্য তারা তাদের এই সমস্যা দূর করার জন্য কয়েকটা ওয়ার্কশপ এবং কিছু অনলাইন এক্সাম নেয় যাতে করে তারা সেই সমস্যা সামাল দিতে পারে।

এই অল্প সময়ের মধ্যে তারা তাদের এই উদ্বোগের জন্য ২০১৮ সালের ১১-ই এপ্রিল “গ্রামীনফোন এক্সেলেরেটর” নামক প্রতিযোগিতার প্রায় ১৫০০টি প্রজেক্টের মধ্যে প্রথম ৩০ এ তাদের  স্থান পায় এবং একই বছরের ৬-ই সেপ্টেম্বর জার্মানির বার্লিন শহরে হয়ে যাওয়া “Youth Citizen Entrepreneurship Competition” –এ প্রায় ১০০ টি দেশের ৬৫১টি প্রোজেক্টের মধ্যে ৬ষ্ঠ স্থান অধিকার করে।

অনলাইন সহপাঠীর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে এর সিইও সাদমান মাজিদ কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন যে “এই অনলাইন সহপাঠী নিয়ে স্বপ্ন অনেক বড়।” তিনি এটাও বলেন যে আমরা এদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য এমন একটি প্লাটফর্ম তৈরী করতে চাই যেখানে যেকেউ তাদের পাঠ্য বইয়ের সমস্যা গুগলে বাংলায় লিখে সার্চ দিলেও যেনো পাওয়া যায়।

এছাড়াও বর্তমানে অনলাইন সহপাঠী তাদের ওয়েব সাইটে লাইব্রেরী, ব্লগ, অনলাইন এক্সাম, টিউশনি নিয়ে কাজ করছেন। এছাড়া তারা শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে অনলাইনে শিক্ষা বিষয়ক বিভিন্ন সেবা প্রদানের জন্যও কাজ করে যাচ্ছে। এ সম্পর্কে সাদমান মাজিদ আরো বলেন যে বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার সকল স্কুল কলেজ কে ডিজিটালাইজড করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাই আমাদের ইচ্ছা হলো বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্তে বসে যেকোনো শিক্ষার্থী যেনো দেশের সেরা শিক্ষকদের থেকে সাহায্য পেতে পারে এবং তারা যেনো কোনো ভাবে বঞ্চিত না হয়।

পছন্দের আরো পোস্ট